আওয়ার ইসলাম: দেশের বাইরের ক্রেতার কাছে দেশের ভাবমূর্তি অক্ষুণ্ণ রাখতে এবং দূষণমুক্ত চামড়া শিল্পনগরী গড়তে শিল্প মন্ত্রণালয় সাভারের হেমায়েতপুরে প্রকল্প নিয়েছে।
বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প (বিসিক) এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে । শিল্পনগরী স্থানান্তরে সরকারের পক্ষে দফায়-দফায় আল্টিমেটাম দেওয়া হয় ট্যানারি মালিকদের। সরকারের বেঁধে দেওয়া সময়ে ট্যানারি কারখানা স্থানান্তর না করায় প্রতিদিন ১০ হাজার টাকা জরিমানাও গুনেছে। অনেকে আবার কারখানা স্থানান্তরও করেছেন।
কিন্তু আবেদন করেও তারা গ্যাস সংযোগ পায়নি। ফলে কাজে যেমন গতি আসছে না, অন্যদিকে উৎপাদন খরচও বেড়ে গেছে দ্বিগুণ। দুই কারখানাতেই শ্রমিক রাখতে হচ্ছে। পাশাপাশি দুই জায়গায় বাড়তি পরিবহন খরচও বহন করতে হচ্ছে। সাভারের চামড়া শিল্পনগরী সরেজমিনে এসব চিত্র পাওয়া গেছে।
ট্যানারি মালিকরা বলছেন, সাভারের শিল্পনগরীতে কারখানা চালু রাখতে হচ্ছে, অন্যদিকে হাজারীবাগেও কাজ চলছে। বিশেষ করে সাভারের ট্যানারিতে ওয়েট ব্লু (চামড়ার প্রাথমিক কাজ) করতে হচ্ছে। গ্যাস না পাওয়ায় হাজারীবাগে চামড়া ফিনিশড করতে হচ্ছে।
ব্যবসায়ীরা জানান, কাঁচা চামড়া প্রক্রিয়াজাত করতে দুই স্তরে কাজ করতে হয়। প্রথম স্তর ওয়েট ব্লু ও দ্বিতীয় স্তর ফিনিশডের কাজ। এই ফিনিশড না করে চামড়া রপ্তানিসহ কোনো পণ্য সম্ভব নয়। এ প্রক্রিয়া করতে গ্যাসের প্রচ- চাপ থাকতে হয়।
সাভার চামড়া শিল্পনগরী কর্তৃপক্ষ বলছে, এ পর্যন্ত ১০২টি ট্যানারি শিল্প প্রতিষ্ঠান গ্যাসের জন্য আবেদন করেছে। এ ছাড়া ১২৮টি ট্যানারি শিল্প প্রতিষ্ঠান স্থায়ী বিদ্যুতের জন্য পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিতে আবেদন করেছে। এর মধ্যে ১২৯টি ট্যানারিকে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির পক্ষ থেকে চাহিদার পরিমাণ চাওয়া হয়েছে। এবং ৩৪টির মালিক টাকা জমা দিয়েছেন। কারখানা চালু করতে ৩২টি ট্যানারি স্থায়ী বিদ্যুৎ সংযোগ নিয়েছে।
আজমীর লেদারের স্বত্বাধিকারী মো. সাইদ উল্ল্যাহ জানান, গত চার মাস আগে গ্যাসের জন্য আবেদন করেছি। ঠিকাদার নিয়োগ করা হয়েছে। কিন্তু এখনো সংযোগ পাইনি। কবে নাগাদ গ্যাসের সংযোগ দেওয়া হবে তারও ঠিক নাই। গ্যাস সংযোগ না পাওয়ায় কারখানায় শুধু ওয়েট ব্লুর কাজ করা যাচ্ছে। চামড়া ফিনিশড করা যাচ্ছে না। একই সঙ্গে চামড়া ওয়েট ব্লুর কাজ শেষ করার পরে আবার ওই চামড়া হাজারীবাগের কারখানায় এনে ফিনিশড করা হচ্ছে।
ফলে সময় বেশি লাগছে, শ্রমিক খরচ দ্বিগুণ দিতে হচ্ছে। পাশাপাশি পরিবহন খরচও যাচ্ছে। এ অবস্থায় লাভের জন্য ব্যবসা খুলে এখন লসের বোঝা বইতে হচ্ছে। তিনি বলেন, এখন দুই কারখানার জন্য শ্রমিক রাখতে হচ্ছে। বেতনও দেওয়া হচ্ছে আগের তুলনায় দ্বিগুণ। এই ক্ষতিপূরণ দেবে কে?
সাভারের চামড়া শিল্পনগরীর প্রকল্প পরিচালক আব্দুল কাইউম বলেন, আমাদের কাজ গ্যাসের লাইন দিয়ে দেওয়া। আমরা সেটা করেছি। এখন বাকি কাজ তিতাস গ্যাস কোম্পানি করবে। গ্যাস সংযোগ পেতে তিতাসের পক্ষ থেকে কিছু শর্ত দেওয়া আছে। মালিকরা সেগুলো মানলেই গ্যাস সংযোগ দেবে। এখানে আমাদের কিছু করার নেই।
গ্যাস সংযোগ পেতে চার মাস সময় লাগে? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, সেটা আমি বলতে পারব না। তিতাসের শর্তগুলো পূরণ করলে তারা গ্যাস সংযোগ দিয়ে দিবে।
বাংলাদেশ ফিনিশড লেদার, লেদার গুডস অ্যান্ড ফুটওয়ার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএফএলএলএফইএ) চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন আহমেদ মাহিন বলেন, এখনো অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ বাকি। এসব কাজ না করেই মালিকদের চাপাচাপি করা হয়েছে। কেবলই বলা হচ্ছে ট্যানারি মালিকরা গড়িমসি করছে। কিন্তু এখন অনেক ট্যানারি সাভারে কাজ শুরু করেছে এখন এ অবস্থা কেন? এখন মালিকদের খরচ বাড়ছে দ্বিগুণ। নতুন করে লোকসানের ঘানি বইতে শুরু করেছে মালিকরা।
ডিএস