মাওলানা লাবীব আবদুল্লাহ। পরিচালক, ইবনে খালদুন ইনস্টিটিউট ময়মনসিংহ। জনপ্রিয় মিডিয়া ব্যক্তিত্ব। যিনি একাধারে কাজ করছেন দৈনিক সাপ্তাহিক এবং মাসিক পত্রিকায়। লিখেছেন বেশ কিছু গ্রন্থ। একজন পাকাপোক্ত সংগঠনকও তিনি। শিকড় সাহিত্য মাহফিল করে জন্ম দিয়েছেন অসংখ্য লেখকের। তার মাধ্যমে গড়ে উঠেছে অনেক পত্রিকা। তৈরি হয়েছে একেকটি অঞ্চল।
এই সময়ের ‘না হলেই নয়’ ফেসবুকে তিনি সরব। সব কাজ সেরেও নিয়মিত সময় দেন। ফেসবুকে ইসলাম চর্চা নিয়ে নানা মুনির নানা মত রয়েছে। স্কুল ছাড়িয়ে মাদরাসার শিক্ষার্থীরাও এখন দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন ফেসবুকে। যদিও কল্যাণ অকল্যাণ নিয়ে নানা তর্ক আছে।
ব্যক্তিগত জীবনে খুব সাদাসিধে ও প্রাণখোলা এ মানুষটি নিজের জন্য খুব কম সময়ই পান। তারই ফাঁকে এক স্বপ্নিল সন্ধ্যায় তার বাসভবনে আওয়ার ইসলামের সঙ্গে একান্ত আলাপে খুলে বলেন তার ফেসবুক জীবনের না বলা সব কথা। সাক্ষাৎকারটি গ্রহণ করেছেন ময়মনসিংহ প্রতিনিধি বশির ইবনে জাফর
______________________________
আওয়ার ইসলাম: আসসালামু আলাইকুম। কেমন আছেন?
লাবীব আবদুল্লাহ: ওয়ালাইকুমুস সালাম ওয়া রাাতুল্লাহ। অনেক ভালো কুল্লু হাল আলহামদুলিল্লাহ।
আওয়ার ইসলাম: আপনি তো ফেসবুকে বেশ পরিচিত ও জনপ্রিয় মুখ। বড়দের মধ্যে এত সরব খুব কম দেখা যায়। আপনার ফেসবুকে আসার প্রেক্ষাপটটা যদি বলতেন।
লাবীব আবদুল্লাহ: আসলে আমাকে সবাই ডিজিটাল যুগের মনে করলেও আমি নিজেকে একজন এনালগ মানুষ মনে করি এবং আমার কাছের মানুষজন তা জানে। আমি ডিজিটাল নই। এনালগ একজন মানুষ। ফেসবুকে আসার যেই প্রেক্ষাপট তা হচ্ছে একবার আমি দৈনিক নয়া দিগন্তের মাওলানা লিয়াকত আলী সাহেব এর দারুর রাশাদে যাই সেখানে আমার খুব কাছের মানুষ প্রিয় জহির উদ্দিন বাবর ভাইয়ের সাথে সাক্ষাৎ। যার সাথে আমার অনেক সখ্যতা আগেও ছিলো এখনো আছে। তাকে দেখলাম ক্লান্ত শরীরে ল্যাপটপে লেখালেখি করছেন। উনিই আমাকে একটি আইডি খুলে দিলেন। তখন আমি শুধু দেখলাম, ব্যাস ওই পর্যন্তই।
দু'তিন বছর সে আইডিতে যাওয়া হয়নি। সম্ভবত সেটা দু হাজার দশ বা এগারোর দিকে হবে। এতো কিছু বুঝতাম না। তাই বাসায় ল্যাপটপ ডেক্সটপ থাকার পরও সেটা ব্যাবহার করা হয়নি। তারপর যখন শাহবাগের যুদ্ধাপরাধ ইস্যু এবং ইন্টানেটে নোংরা লেখার জেরে আলেমরা ব্লগ, অনলাইন, মিডিয়া এসবে নেমে পড়লো তখন কবি সাইফ সিরাজ আমাকে ব্লগ বিষয়ক জিনিসগুলো জানাল। এগুলো আগে ধারণায় ছিল না। তো ওই সময় একটা জিনিস লক্ষ করলাম, কোন পত্রিকাওয়ালারা যেগুলোতে তৎকালিন সময়ে আমি লিখতাম যেমন রহমানী পয়গাম, আদর্শ নারী, কাবার পথে তো তারা আর আমার কাছে তেমন একটা লেখা চান না। মোটকথা তরুণরা যখন পত্রিকা দখল করলো তখন আর আমাদের প্রয়োজনীয়তা দেখা গেলো না। তাই ভাবলাম কী আর করা লেখতে তো হবে।
তখন মনে হলো ফেসবুক তো একটা দেয়াল পত্রিকার মতো। ছাত্রজীবনে দেয়ালিকায় বেশ লেখালেখির চর্চা হতো। সুতরাং এখানে লেখা যায়। সেই থেকে ফেসবুকে লেখিলেখি শুরু। কিন্তু দুঃখজনক হলো, আমি বড় বড় সাহেবজাদাদের বিরুদ্ধে তথা কওমি মাদরাসায় যেসব বড় বড় সাহেবজাদারা আধিপত্য বিস্তার করে আছে তাদের নিয়ে লেখালেখি শুরু করি। এ কারণে এক সময় আমার সেই আইডিটা হ্যাক হয়ে যায়। তারপর কে যেন একটা খুলে দিয়েছিলো নামটা মনে নেই। সেই থেকে আজ অবধি চলছে। এখনো আমি জানি না ফেসবুকে আইডি কিভাবে খুলতে হয়। তবে যিনিই খুলে দিয়েছেন তিনি হয়তবা খারাপ অথবা একটা ভালো কাজ করে দিছেন যার জন্য আমি বিভিন্ন অন্যায়ের বিরুদ্ধে লিখে যাচ্ছি। (হাসি)
আওয়ার ইসলাম: আপনি যেহেতু ফেসবুকে দীর্ঘ দিন ধরে লিখছেন পড়ছেন তো আপনার কি মনে হয় সত্যিকারার্থেই এখানে কোন কল্যাণ আছে?
লাবীব আবদুল্লাহ: এটা হচ্ছে আমি কিভাবে ফেসবুক ব্যাবহার করি তার উপর নির্ভর করবে। এখন আমি একজন মাদরাসার ছাত্র হয়ে যদি লাগামহীন কারো নির্দেশনা ছাড়াই ফেসবুক ব্যবহার করতে থাকি তবে তো উপকারের চেয়ে বেশি অপকারই হবে। তাই জিনিসটা নিয়ন্ত্রিতভাবে ব্যবহার করলে উপকার পাওয়া যাবে। নয়ত আমি বলবো এতে কোনই উপকার নেই।
আমার ব্যাপারটা হলো, আমি ইসলামের প্রচারে বিভিন্ন স্তরের একটা স্তর হিসেবে এটাকে ব্যাবহার করে আসছি। কারণ এটা খুব সহজেই বার্তা পোঁছে দিচ্ছে মানুষের কাছে।
আরেকটা কথা তথ্যের জন্য বলি, আমি এখন তিনটা মাদরাসায় ক্লাস নেই। এর মধ্যে দুটি মাদরাসায় ফেসবুক তো দূরের কথা ফোন ব্যবহারই নিষেধ। তাই ছাত্রদের আমি এটা থেকে যথাসম্ভব বিরত থাকারই পরামর্শ দেই।
আওয়ার ইসলাম: ফেসবুক ব্যাবহার করার জন্য আপনি কি নির্দিষ্ট কোন রুটিন ফলো করেন?
লাবীব আবদুল্লাহ: আসলে ওরকমভাবে কোন রুটিন করে ব্যবহার করি না। আমার সময় এমনিতেই খুব অল্প। তবুও ফেসবুকে দেশি বিদেশি হাতেগোণা দশ জনের মতো লেখকের লেখা আমার নিয়মিত পড়া হয় আর নিজে যে কয় লাইন লিখি ব্যাস ওইটুকুই সময় দেয়া হয়। এমনিতে আমাকে সারাদিনই এক্টিভ দেখায়। কারণ আমি সব সমসয় ডাটা অন করে রাখি। আগে তো জানতামই না ডাটা অন থাকলেই টাকা কেটে নিয়ে যায়। এখন জানার পর মাঝে মাঝে অবশ্য অফও করে রাখি। আর কমেন্ট টমেন্ট দেখার সময় সাধারণ হয় না। তবে আমার কোন কমেন্টে অন্য কোন আলেমের সমালোচনা করলে সেটা আমি ডিলিট করে দেই।
আর বন্ধু তালিকা বড় হওয়ার কারণে যদিও ফালতু অনেক লেখাই নজরে পড়ে তবু ওসব পড়া হয় না বা এসব মানুষগুলোকে ফেসবুক থেকে বাদ দিয়ে সীমিত তালিকাও করি না। কারণ এখানে পাঠক বাড়লে তো ক্ষতি নেই। একটা দৈনিক পত্রিকায় সর্বোচ্চ ত্রিশ হাজার পাঠকের সার্কুলেশন আমার জানা আছে।
আমার বন্ধু তালিকা ফলোয়ারসহ সব মিলিয়ে বেশ অনেকই তো হয়ে যাচ্ছে তাই পাঠক বাড়ার দিকটা লক্ষ রেখেই ওদিকে তেমন নজর দেয়া হয় না।
আওয়ার ইসলাম: তরুণরা বর্তমানে বেশ অনেকটা সময় ফেসবুকে অপচয় করছে এ বিষয়ে আপনার কী মত?
লাবীব আবদুল্লাহ: ফেসবুকটা ইয়াবার মত নেশা আমি বলবো। এটা খুবই ক্ষতিকর। বিশেষ করে কওমি মাদরাসার ছাত্রদের এখনই এটা নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসা জরুরি। নইলে পড়াশোনার খুবই ক্ষতি হবে। সত্যি বলতে আমি মনে করি ছাত্রদের ফেসবুক ব্যবহারের কোন মানেই হয় না। এটাতে তারা কী করবে। আমরা ছাত্র অবস্থায় পত্রিকাও পড়তে পারিনি। নিষেধ ছিলো। তো আমরা কি এখন ফেসবুক ব্যবহার করছি না? তারাও পড়াশোনা শেষ করুক তারপর না হয় এসবে আসুক। তবে হ্যাঁ ফেসবুকে কিছু উপকার তো পাওয়াই যায়। এই যেমন আজকে আমি ফেসবুকে সমরেশ মজুমদারের সাক্ষাতকারের ভিডিও দেখলাম। নির্মলেন্দু গুণের ভিডিও দেখলাম। আমার তো বাসায় টিভি নেই আর রাখবোও না। সুতরাং এসব তো ফেসবুকের কল্যাণেই পাই। তাই বলি, এখানেও বেশ কিছু শিক্ষণীয় বিষয় আছে। কিন্তু তা ছাত্রদের তো কিছু নয়। ছাত্ররা কেন শুধু শুধু সময় নষ্ট করবে এসবে।
আওয়ার ইসলাম: তাহলে এই যে ভয়াবহ অবস্থার কথা বলছেন। এ থেকে কিভাবে মুক্তি পাওয়া যায়?
লাবীব আবদুল্লাহ: আসলে এটা একটা পাগলের জগত। (হাসি) পাবনার জগত। এখানে পাগলামি বন্ধ করতে হলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মোবাইল, ফেসবুক এসবের ব্যাবহার টোটালি নিষেধ করতে হবে। বিশেষ করে কওমি মাদরাসা। তারা তো সার্বক্ষণিক পড়াশোনা নিয়ে থাকে। তারা এসবে মন দিলে পড়াশোনাই তো হবে না।
আওয়ার ইসলাম: ফেসবুক সেলিব্রেটিরা লাইক কমেন্টকে অনেক গুরুত্বপূর্ণভাবে দেখেন। আপনার কাছে এই লাইকের কম বেশ হলে কী রকম প্রভাব ফেলে?
লাবীব আবদুল্লাহ: আসলে লাইক হচ্ছে ভালোবাসা। এটা বাড়লে তো একটা বিষয় আছেই। তবে কমেন্টের ব্যাপরটা বলি। আমার একটা পোস্টে একবার দেখলাম ৮০০ কমেন্ট!! এতো কমেন্ট কী পড়া সম্ভব? আমার এতো সময় কই। আপনিই তো দেখতে পাচ্ছেন আমার চারপাশে কতো বই। এসব পড়েই তো সময় পাই না কমেন্ট কখন পড়বো। তাই ওসব কমা-বাড়া নিয়ে কোন কিছু ভাবতে পারি না। আমাকে কমেন্টে কেউ গালিগালাজ করলেও সেটার জবাব দেই না। তবে চেষ্টা করি আমার পোষ্টে যেন কোন আলেমকে গালিগালাজ না করা হয় সেদিকটা দেখতে। ওরকম কিছু পেলে সেটা আমি ডিলিট করে দেই। আর ব্যক্তিবিশেষ কখনো কারো কমেন্টের রিপ্লাই মাঝে মধ্যে দিয়ে থাকি। সেটা ভিন্ন বিষয়।
একবার একজন কমেন্টে বলতেছেন আমি আপনাকে পাঁচমাস আগে সালাম দিলাম আপনি আমার সালামের উত্তর দিলেন না। তখন আমি তাকে বললাম, কোথায় আপনার তো কোন সালাম পাইনি। পরে বললো- ইনবক্সে।
কিন্তু আমি তো ইনবক্সে সবার সাথে কথা বলি না। অল্প কয়েকজন আছে তাদের সাথে মাঝে মাঝে কথা হয়। সুতরাং ফেসবুকে ডুবে থাকা, লাইক কমেন্ট নিয়ে ভাবা বা লাইন বাড়ছে না কমছে এসব নিয়ে টেনশন করার সময় হয়ে উঠে না। তবে অনেকে বিষয়টাকে অত্যধিক গুরুত্ব দেন এটা জানি।
আওয়ার ইসলাম: একটা বিষয় বলতে শোনা যায়; ফেসবুক লেখালেখির প্রেরণা কেড়ে নিচ্ছে। এখানে অল্প লিখলেই হচ্ছে। মানুষ কমেন্ট করছে লাইক করছে। জনপ্রিয়তা বাড়ছে। আর একটা লেখা তৈরি করতে ভাবতে হয় প্রচুর। তাই লেখালেখিতে অনেকেই আসছে না। এ বিষয়ে আপনি কী বলেন?
লাবীব আবদুল্লাহ: শুধু ফেসবুক না এ কথাটা যারা বলে এরা আগেও পত্রিকায় লেখালেখির ব্যাপারে এমনটি বলেছে। ফেসবুক অনেকাংশেই ক্ষতিকর তাই বলে লেখালেখির প্রেরণা কেড়ে নিচ্ছে এটা ভুল। এই তো আমিও ভালো কোন লেখকের লেখা পেলে খুঁটে খুঁটে পড়ি। আমি যদি যাইনুল আবেদিন বা নদভী সাহেবের লেখা ফেসবুকে পেতাম সেগুলোও পড়তাম। এসব কথা অনেক তরুণদের বলতে শুনি। তবে এই যে আতিকুল্লাহ আতিক, ভালো লেখে। ফেসবুকই তো তার মতো লেখককে চিনিয়েছে। ফেসবুক না থাকলে আপনারা তাকে এতো সহজে কিভাবে পেতেন। তাকে চিনতে হয়ত আরো দশ বছর লেগে যেত। যেমন ধরুণ এখানে কেউ যদি মনে করে যে সে লেখা 'মশক্' করবে, লেখালেখির চর্চা করবে তবে ফেসবুক তো তার জন্য কতো বড় সুযোগ। এ সুযোগ থেকে কেন তাকে দূরে সরিয়ে রাখবেন। তবে যেটা আগে বলেছিলাম, ছাত্রদের জন্য লেখালেখির বা এধরেনের কোন অজুহাতে যেন এটা অনিয়ন্ত্রিত না হয়ে যায় সেদিকটা লক্ষ রাখতে হবে। আমি মনে করি ফেসবুক অনেক লেখককে বিশাল অনুপ্রেরণা দেয়।
আওয়ার ইসলাম: ফেসবুকে আপনি কি কোন ব্যক্তিত্বের দ্বারা অনুপ্রাণিত হন?
লাবীব আবদুল্লাহ: বাংলাদেশে ওরকম কেউ নেই তবে বাইরের দেশগুলোতে বড় বড় আলেমদের পেইজে বেশ কিছু খোরাক পাই যেগুলো আমার চিন্তা চেতনার সাথে মিলে। বাংলাদেশে তো এখনো ফেসবুকে আলেমদের আসা মানে একটা অন্যায় কাজ মনে করা হয়। অথচ বাইরের দেশগুলোতে বড় বড় আলেমরা ফেসবুকে অনেক দাওয়াতি কাজ করে যাচ্ছে। আমি ওদের কাজগুলোকে খুব যত্ন নিয়ে দেখি। বাংলাদেশের আলেম উলামারা তো ওই যে আগে পত্রিকা বিরোধী ছিলো তারা এখনও অনেকেই যদি শোনে যে অমুক ফেসবুকে লেখালেখি করে তবে তার সাথে কথাই বলতে চাইবে না। মনে করবে যেন নষ্ট হয়ে গেছে।
অথচ সেদিন বারিধারা মাদরাসা থেকে আরশাদ মাদানি সাহেবের দরস লাইভ দেখিয়েছে একজন ছাত্র তাও লুকিয়ে লুকিয়ে। এটা কিন্তু কাজটা ভালো। আমি পুরোটাই দেখেছি। যে মিডিয়ার দ্বারা মানুষের উপকার হচ্ছে তা কেন প্রকাশ্য মানুষকে দেখতে দেয়া হবে না? এরকম একটা ভালো কাজ সারা বিশ্বের মানুষ দেখবে এটাই তো হওয়ার কথা। বরং যারা মিডিয়ায় কাজ করতে চায় বা যাদের আগ্রহ আছে তাদের ডিজিটাল ক্যামেরা দিয়ে দাঁড় করিয়ে দেয়া দরকার, তুমি ভালো একটা ট্রেনিং নাও লাইভ দেখাও। লুকিয়ে দেখাবে কেন।
এই যে হাটহাজারি মাদরাসা যেখানে এক সময় পত্রিকা হারাম ছিলো। এখন সেখানে ছাত্ররা লাইভ ক্লাস দেখায়। (হাসি) সুতরাং ফেসবুকের বিরোধিতা করে কোন লাভ নেই। এটাকে জায়গামতো ব্যবহার করাই হচ্ছো মঙ্গল। সেজন্য আমি আবার কখনো এটাও চাইবো না যে আমার বউও ফেসবুক ব্যবহার করুক। (অনেক হাসি)
আওয়ার ইসলাম: একটা সময় ছিলো যখন আলেমরা প্রিন্ট মিডিয়ায় সরব থাকলেও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় তেমন উপস্থিতি ছিল না। বর্তমানে কি এর উল্টোটা হয়ে যাচ্ছে বলে মনে করেন? যদি তাই হয় তবে প্রিন্ট মিডিয়া তো উপেক্ষিতই রয়ে যাবে।
লাবীব আবদুল্লাহ: না না এটা একদম ঠিক না। কোন কালেই আলেম ওলামারা কোন মিডিয়ায় সরব ছিলো না। ওরা তো ক্যামেরাই ঠিক মতো ধরতে পারে না, টকশো করতে পারে না সুন্দর করে। বিভিন্ন এডিটিংসহ আরো অনেক ধরনের কাজ তারা পারে না। তবে হ্যাঁ ওলামায়ে কেরামদের মধ্য থেকে অল্প কয়েকজন আছে যারা অনেক তৎপর। আমরা তাদের জন্য উজ্জীবিত আলহামদুলিল্লাহ। কিন্তু নিজেদের নেই কোন মিডিয়া। শুধুমাত্র রমজানে কিছু অনুষ্ঠান হয় তাছাড়া হঠাৎ কোন কোন সময় একটা দুটো অনুষ্ঠানে দেখা যায়। সরব কখনোই ছিলো না এখনোও নেই। এটাকে সরব বলা চলে না।
বাংলাদেশের আলেম উলামারা তো ওই যে আগে পত্রিকা বিরোধী ছিলো তারা এখনও অনেকেই যদি শোনে যে অমুক ফেসবুকে লেখালেখি করে তবে তার সাথে কথাই বলতে চাইবে না। মনে করবে যেন নষ্ট হয়ে গেছে।
আওয়ার ইসলাম: ফেসবুকে ছবি বা ভিডিও আপলোড করা জায়েজ মনে করেন কি?
লাবীব আবদুল্লাহ: এটা নিয়ে একেকজন একেক মত দিবে এবং সেটাই স্বাভাবিক। মাওলানা মাহমুদুল হাসান সাহেব জায়েজ বলবেন না আবার মামুনুল হক সাহেব উল্টোটা বলবেন। এরকমই হয়। আসলে এসব হচ্ছে প্রেক্ষাপট অনুযায়ী। সরাসরি জায়েয-নাজায়েজ বলা যাবে না। আপনি নায়ক নায়িকাদের নগ্ন ছবি দিবেন সেটা কি কখনো জায়েয হবে নাকি।
আবার ধরুন মামুনুল হক সাহেবের বয়ান হচ্ছে সেটার লাইভ ভিডিও দেয়া হচ্ছে সেটা তো একটা ভালো দিক। এগুলো করার জন্য অবশ্য ট্রেনিং এরও দরকার আছে। যা আমাদের অঙ্গনে নেই। ধরুণ কেউ পান চিবুচ্ছে আর আপনি লাইভ ওদিকেই দেখাচ্ছেন এতে কি লাইভের মর্যাদা থাকলো।
আওয়ার ইসলাম: আপনাকেও তো এখন এরকম লাইভে আসতে দেখা যাচ্ছে।
লাবীব আবদুল্লাহ: হ্যাঁ আমি এরকম আরো অনেক লাইভ নিয়ে আসবো। এগুলো হচ্ছে পরীক্ষামূলক সম্প্রচার তাই প্রথম প্রথম দুএকটা একটু এলোমেলো হবে। ছবি ভালো আসবে না। সাউন্ড কম হবে। ভালো জায়গার দেখা মিলবে না ইত্যাদি নানা ঝামেলা থাকবে তবে এটা চলছে চলবেই। আমার বিরুদ্ধে অনেক কথাই হয়। আমি ওসব নিয়ে ভাবি না। তাছাড়া আমি ফেসবুকে কোন ব্যক্তির সমালোচনা করি না। আমি অন্যায়ের বিরুদ্ধে বলি এবং ভবিষ্যতেও বলবো।
আওয়ার ইসলাম: তরুণদের প্রতি আপনার কোন বক্তব্য?
লাবীব আবদুল্লাহ: মাদরাসা, স্কুল, কলেজ সব অঙ্গনের তরুণদের বলবো এখন জ্ঞান-বিজ্ঞানের যুগ। প্রতিযোগিতার যুগ। এখানে সর্বদা আন্তর্জাতিক বিশ্বকে সামনে রেখে প্রতিযোগিতায় নামতে হবে। শুধু ফেসবুক নিয়ে পড়ে থেকে মানসিক ও শারীরীক প্রতিবন্ধী না হয়ে খেলাধুলাসহ সব কিছুতেই পজেটিভ রাখতে হবে নিজেকে। কওমির ছাত্রদের বিশেষভাবে বলবো ভালো আলেম হও লাইকার বা কমেন্টার হলে কিছুই হবে না।
আওয়ার ইসলাম: আওয়ার ইসলাম সম্পর্কে...
লাবীব আবদুল্লাহ: (কথা টেনে নিয়ে) আওয়ার ইসলাম সম্পর্কে ভালোই জানি। ওরা ভালো কাজ করে যাচ্ছে। তাদের কাজ আরো অগ্রগামী হোক। এখানে যারা কাজ করছে তাদেরও সাধুবাদ জানাই এবং আগামী দিনে আওয়ার ইসলাম মিডিয়া জগতে ভালো অবদান রাখবে এই প্রত্যাশাও করি।
আওয়ার ইসলাম: আমাদের সময় দেয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
লাবীব আবদুল্লাহ: আপনাকেউ ধন্যবাদ।
সম্পাদনা: রোকন রাইয়ান