۞ আদনান ফয়সাল
সাধারণভাবে যার অনেক টাকা-পয়সা আছে বা যে কোনো বিশেষ ক্ষেত্রে খুব ভালো কিছু করে থাকে তাকে আমরা সফল বলি। কিন্তু, এমন হতে পারে আমরা যাকে সফল বলে মনে করি আল্লাহর কাছে সে চরমভাবে ব্যর্থ, আবার আমরা যাকে অসফল মনে করে থাকি সে আল্লাহর কাছে সফল। একজন বড় গায়ক, নায়ক বা খেলোয়াড় মানুষের বিচারে সফল হলেও আল্লাহর বিচারে অসফল হতে পারেন। আমাদের জীবনের লক্ষ্য হওয়া উচিত মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলার বিচারে সফলতা অর্জন করা।
তাহলে আসুন দেখি কোরআনের আলোকে ‘সফল’ কে –
১. যে নিজের উপর শুদ্ধি অভিযান চালায় সে সফল:
“অত:পর (আল্লাহ) তাকে তার অসৎ কর্ম ও সৎ কর্মের জ্ঞান দান করেছেন। যে নিজেকে শুদ্ধ করে সেই সফল, যে নিজেকে কলুষিত করে সে ব্যর্থ”। – (৯১ সূরা আশ-শামস: ৮-১০)
যে সব রকম কাজে নিজেকে সব সময় ইমপ্রুভ করার চেষ্টা করে, ব্যবহারে ও সততায় প্রতিনিয়ত নিজের উন্নয়নের চেষ্টা করে, অন্যের ভুলের চেয়ে নিজের ভুল নিয়ে বেশী চিন্তা করে – সে সফল।
২. যে কৃপণতা করে না সে সফল:
“তোমরা আল্লাহকে যথাসাধ্য ভয় কর, শুন, আনুগত্য কর এবং ব্যয় কর। এটা তোমাদের জন্য কল্যাণকর। যারা মনের কার্পণ্য থেকে মুক্ত তারাই সফলকাম”। (৬৪ সূরা তাগাবুন:১৬)
এই কৃপণতা আত্মিক ও পার্থিব দুই-ই হতে পারে। আত্মিক কৃপণতা হলো আল্লাহর প্রতি আনুগত্য প্রদর্শনের কৃপণতা, আর পার্থিব কৃপণতা হলো আল্লাহ যে নিয়ামত দিয়েছেন তা অন্যের সাথে শেয়ার না করা।
৩. যে ভালো কাজে সহায়তা করে, খারাপ কাজে বাধা দেয় সে সফল:
“আর তোমাদের মধ্যে এমন একটি দল থাকা দরকার যারা মানুষকে ভালোর দিকে আহবান করে এবং সৎ কাজের আদেশ করতে থাকে ও অসৎ কাজ হতে নিষেধ করতে থাকে, আর এরাই হবে সফলকাম”। (৩ সূরা আলে-ইমরান:১০৪)
৪. যারা জান্নাতী হবে তারা চূড়ান্তভাবে সফল:
“প্রত্যেক প্রাণকেই মরণের স্বাদ নিতে হবে। কিয়ামতের দিন তোমাদের কর্মফল পুরো করে দেয়া হবে। যাকে আগুন থেকে দূরে রাখা হবে ও জান্নাতে যেতে দেওয়া হবে সে-ই সফলকাম। আর পার্থিব জীবন তো ছলনাময় ভোগ ছাড়া আর কিছুই নয়। –আল কোরআন (৩ সুরা আলে-ইমরান:১৮৫)
কোরআন ও সুন্নাহর আদেশ-নিষেধ যে ব্যক্তি মেনে চলবে মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা তাকে পরকালে জান্নাত দিয়ে বিশেষ অনুগ্রহ করবেন। এটা তার ত্যাগ, ধৈর্য্য ও আনুগত্যের পুরষ্কার।
পার্থিব সকল আনন্দ, সকল সফলতাই ক্ষণস্থায়ী, কিন্তু জান্নাত হবে চিরস্থায়ী। আমাদের মা-বাবা যখন বৃদ্ধ হয়ে যান তখন আমাদের মনে হয় ইশ! আম্মু-আব্বু যদি চিরদিন বেঁচে থাকতো! একইভাবে আমাদের নিজেদেরও কিন্তু পৃথিবীর মায়া ছেড়ে চলে যেতে ইচ্ছে করে না। জান্নাতে যেয়ে মানুষ চিরকাল বসবাস করতে পারবে তার মা-বাবা, স্বামী/স্ত্রী, আর সন্তান-সন্তুতি নিয়ে (যদি তারাও জান্নাতী হয়)। জান্নাতীদের মনে কোনো কষ্ট থাকবে না, থাকবে না অপরিচ্ছন্ন কোনো কিছু। মানুষের অমরত্বের স্বভাবজাত ইচ্ছাসহ সকল ইচ্ছা যেখানে পূরণ হবে সেই জায়গাটিই হলো জান্নাত। আল্লাহ যাদেরকে চিরস্থায়ী সুখের সেই বাগান গিফট করবেন, তারাই চূড়ান্তভাবে সফল।
আরআর