۞ মাওলানা আহমাদুল্লাহ
আল্লাহর নবী ইউসুফ আলাইহিস সালাম প্রেম করেছেন? মুর্খতা কিংবা দু:সাহস কোথায় গিয়ে ঠেকলে একজন নবীর ওপর বিবাহ বহির্ভুত নষ্টামীর মিথ্যা অভিযোগ আনা যায়! সুরা ইউসুফ জুড়ে এই নবীর পবিত্রতা ও সচ্চরিত্রের ভূয়সী প্রশংসা করছেন স্বয়ং আল্লাহ তা’আলা। বিষদ বিবরণ রয়েছে তাঁর চরিত্র হেফাজতের সফল যুদ্ধের বিরত্বগাঁথা। অথচ উক্ত ঘটনাকে বলা হচ্ছে ‘অমর প্রেম কাহিনী’! পথভ্রষ্ট ইরানী শিয়াদের নির্মিত ফার্সী ফিল্ম বাংলায় ডাবিং করে প্রচার করছে এসএ টিভি। এই ফিল্ম সম্পর্কে মুসলিম বিশ্বের বড় বড় স্কলারগণকে প্রশ্ন করা হলে তাঁরা একবাক্যে এই ফিল্ম প্রস্তুত ও প্রদর্শন করাকে হারাম ও কুরআন বিকৃতি বলে অভিহিত করেছেন।
প্রথমত: নাটক সিনেমা মানেই খেল তামাশা। নবীদের নিয়ে নাটক-সিনেমা তৈরি করা মানে তাঁদেরকে খেল তামাশার বস্তুতে পরিণত করা। ফিল্মে চরিত্রের প্রয়োজনে অনেক মুখরোচক অবাস্তব ডায়ালগ দরকার হয়। করতে হয় অনেক কৃত্রিতমা ও লৌকিকতা। যার কোনটিই কোন নবীর শানে বেমানান। অথচ এর সবই করা হয়েছে ইউসুফ-জুলেখা সিরিজে। এতে উপস্থাপিত অনেক কাহিনীই কুরআনের বিপরীত।
যেমন (ক) ইউসুফ আ: এর ছোট ভাইকে তাঁর সৎ ভাইরা নিজেরাই ইউসুফ আ: এর কাছে বিক্রি করেছেন বলে ফিল্মে প্রদর্শিত হয়েছে। (খ) ইউসুফ আ: কে ফিরআউনদের যুগের বলে সাব্যস্ত করা হয়েছে। (গ) ফিরআউনদের তাওহীদবাদী হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে। এর সবই মিথ্যাচার এবং কুরআন বিকৃতি।
দ্বিতীয়ত: পৃথিবীর যে কোন ব্যক্তিকে আল্লাহর যে কোন নবীর আকৃতিতে উত্থাপন করা নবীদের মর্যাদার চরম অবমাননা। নবীগণের চরিত্রের কোন নকল হতে পারে না। সেখানে সিনেমার একজন ফাসেক নায়ককে আল্লাহর নবীর আকৃতি ও চরিত্রে উপস্থাপন নবীর শানে চরম ধৃষ্ঠতা ছাড়া কি হতে পারে? এর ফলে নবীদের প্রতি মানুষের আকাশচুম্বী শ্রদ্ধাবোধ কমে যাবে।
তৃতীয়ত: এসব ফিল্মে কিছু লোক কাফেরদের চরিত্রে অভিনয় করতে গিয়ে কাফেরদের স্থালাভিষিক্ত হয়ে তাদের গর্হিত কথা ও কাজের নকল করতে হয়! নবীদের ওপর মিথ্যারোপসহ নানা আপত্তিকর কথা বলতে হয়! এসব কথা কাফেরদের উক্তির স্রেফ বর্ণনা হিসেবে বলা হয় না, রীতিমত কাফের সেজে বলা হয়!! বিষয়টি চরম জঘন্য। যেই অভিশপ্তদের নামে নামকরণও চরম নিন্দনীয়, সেই কাফেরদের আকার ধারণ ও তাদের স্থলাভিষিক্ত হয়ে অভিনয় করা রীতিমত দু:সাহস এবং মারাত্মক দায়িত্বজ্ঞানহীনতা জঘন্য অপরাধ।
অনেকে মনে করেন, এসব ফিল্ম প্রচারের ফলে নবীদের ইতিহাস মানুষ যতোটা রপ্ত করতে পারবে ততোটা নিছক ওয়াজ-আলোচনা দ্বারা সম্ভব নয়। একথা আংশিক সত্য হলেও এর ক্ষতিকর দিকগুলো অনেক ভয়াবহ। তাছাড়া আল্লাহর নবীগনের কেউ দ্বীন প্রচারে এ ধরণের ভ্রান্ত পদ্ধতি অবলম্বন করেননি। অথচ তাঁরা সকলেই যুগে যুগে তাঁদের দাওয়াতী কাজে সফল হয়েছেন। পক্ষান্তরে এসব ফিল্ম দেখে কেউ মুত্তাকী হয়ে গেছে কিংবা কোন অবিশ্বাসী ঈমান এনেছে- এমন কোন নজীর নাই!
মূলত: নাটক-সিনেমার মতো বাস্তবতাবিবর্জিত নেকামো আজ আমাদের জীবনের অংশ। তাই সবকিছুকেই সিনেমার আয়নায় দেখতে চাই। দ্যা ম্যাসেজ কিংবা ইউসুফ-জুলেখা বা সুলতান সুলেমান সিরিজ- নিজেদের সিনেমা দেখার নিষিদ্ধ খাহেশ পুরা করার উছিলা মাত্র। শয়তানের নেক সুরতে ধোঁকা। বাংলাদেশের কোন টিভি চ্যানেল ইতিপূর্বে এমন ধৃষ্টতা দেখানোর দু:সাহস করেনি। আসুন, যার যার অবস্থান থেকে প্রতিবাদ করি। এসএ টিভি ও দীপ্ত টিভির এই ফিল্ম প্রদর্শন বন্ধ করা হোক।
আরআর
এটিও পড়ুন : কী দেখানো হচ্ছে সুলতান সুলেমানে?