ওয়ালি উল্লাহ সিরাজ
আসছে ৪৫ তম স্বাধীনতা দিবস। এই দিবস সত্যি আমাদের কাছে বড় আনন্দের। একটি জাতির স্বাধীনতা ও তার ইতিহাসে যেমন গৌরবের, তেমনি বেদনার। অনেক রক্ত ও আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে আমাদের স্বাধীনতা। এই স্বাধীনতা অর্জনের জন্য কতজন দেশের জন্য জীবন বিসর্জন দিয়েছেন, শহীদ হয়েছেন। শুধু মাত্র এই দেশ ও এই দেশের স্বাধীনতা অর্জনের জন্য। এই স্বাধীনতা অর্জনের ফলেই আজ আমরা দারিদ্র্য বিমোচন করে এগিয়ে চলছি, শিক্ষার প্রসার ঘটাচ্ছি, নারী উন্নয়নও কোন অংশে পিছিয়ে নেই। আর শিশুমৃত্যুর হার কমানোর ক্ষেত্রে বেশ সাফল্য রয়েছে আমাদের।
এই দেশের মানুষ ধর্ম মানে, আল্লাহর আদেশ ও নবীর সুন্নাহ মেনে চলে কিন্তু তারা জঙ্গিবাদ (সন্ত্রাস) কে কখনো প্রশ্রয় দেয় না। এই দেশের মানুষ যারা ধর্মের নামে সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালায় তাদের ঘৃণা করে। মহান বিজয় দিবসে আমরা আমাদের মত করে অনেক কাজ করে থাকি কিন্তু আসলে আমদের কি করা উচিত। এ বিষয়ে কথা হয় দুই আলেম ও সংস্কৃতিকর্মীর সঙ্গে।
ঢাকার জামিয়া সাঈদিয়া কারিমিয়া’র প্রিন্সিপাল মাওলানা ফজলে বারি মাসউদ বলেন, মহাকালের বিচারে ৪৪ বছর খুব বড় সময় নয়। তবে এ সময়ের ব্যবধানে কোনো কোনো জাতির অনেক দূর এগিয়ে যাওয়ার নজিরও আছে। আজ আমাদের বিচার-বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন, স্বাধীনতার চার দশকে আমরা কতটা এগিয়েছি, কী ছিল আমাদের লক্ষ্য ও প্রত্যাশা, পূরণ হয়েছে কতটা? কোথায় আমাদের ব্যর্থতা, কী এর কারণ? এই কারণে আমাদের এই সব দিনে বিশেষত শিক্ষার্থীদের ইতিহাস জানার প্রতি গুরুত্ব দেয়া উচিত। তাই বিজয় দিবসের মত একটি মাহান দিনে বিজয় দিবসের ইতিহাস নিয়ে বিভিন্ন প্রকার রচনা প্রতিয়োগিতা হতে পারে।
দ্বিতীয়ত, আমাদের দেশের এই স্বাধীনতার সময় আলেমদের যে ভূমিকা ছিল সেটা মানুষের সামনে তুলে ধরতে হবে।
তিনি বলেন, চরমোনাই মাদরাসাসহ আরো অনেক মাদরাসায় মুক্তিযুদ্ধের সময় ক্যাম্প করা হয়েছিল অথচ এই ইতিহাস অনেকেরই জানা নেই। তাই বিজয় দিবসের বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দেশের জন্য যে সকল আলেম জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করে ছেলেন তাদের ইতিহাস তুলে ধরতে হবে।
তৃতীয়ত, আমাদের স্বাধীনতা ৪৫ বছর হয়ে যাচ্ছে, সংসদে বিভিন্ন আইন পাশ হচ্ছে কিন্তু আমাদের দেশে খুনি-ডাকাতের সংখ্যা বাড়ছে কেন এমন হচ্ছে, মূলত দেশের উন্ননের সাথে সাথে এই সব কমার কথা ছিলো তাহলে কমছে না কেন? এই বিষয়গুলো নিয়ে গবেষণা হওয়া প্রয়োজন। আমাদের দেশ অর্থতৈনিকভাবে উন্নয়ন লাভ করছে কিন্তু আমরা দেখছি দিন দিন ভিক্ষুক বাড়ছে এরই বা কি কারণ?
চতুর্থ, এই দিবসগুলোতে আমাদের অনেক বেশি বিচার-বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন, দেশ স্বাধীন হয়েছে কিন্তু স্বাধীনতা চার দশক পার করার পরেও আমরা আসলে কতটা স্বাধীনতা পাচ্ছি। এই স্বাধীনতা না পাওয়ার পেছনে কী কী কারণ রয়েছে? কারা আমাদের এই স্বাধীনতা বিনষ্টকারী? কিভাবে আমরা আমাদের পূর্ণ স্বাধীনতা উপভোগ করতে পারবো ইত্যাদি বিষয় নিয়ে স্বাধীনতা দিবসে খুব বেশি আলোচনা হওয়া প্রয়োজন।
খ্যাতিমান আবৃত্তিশিল্পী শাহ ইফতেখার তারিক আওয়ার ইসলামকে বলেন, আমি একজন সংস্কৃতি কর্মী। কিন্তু আমার কাছে মানে হয় বিজয় দিবসে সংস্কৃতি অনুষ্ঠান না হয়ে ইতিহাস নিয়ে বিভিন্নভাবে চর্চা হওয়া প্রয়োজন। আমাদের অনেকেই হয়তো স্বাধীনতার ইতিহাস জানে কিন্তু সেই সময় এমন কি প্রয়োজন দেখা দিয়ে ছিল যে, স্বাধীনতার জন্য অস্ত্র ধরতে হয়েছিল। ব
র্তমানে যে আমরা নিজেদের স্বাধীন হিসাবে দাবি করছি আসলেই কি আমরা স্বাধীনভাবে জীবন-যাপন করতে পারছি? স্বাধীনতা বলতেই বা কি বুঝায়? স্বাধীনতার মাধ্যমে আমরা যা চেয়েছি আসলেই কি তা পেয়েছি?
সব থেকে বড় কথা হচ্ছে, আমাদের মহান মুক্তিযোদ্ধারা নিজেদের জীবন বাজি রেখে আমাদের যে স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন, আমরা কি এখান স্বাধীনতা রক্ষার এই মহান দায়িত্ব পালন করতে পারছি। এই ধরনের অনেক প্রশ্নের উত্তরই আমদের অনেক শিক্ষার্থী দিতে পারবে না।
তিনি বলেন, আমাদের ভবিষ্যতকে গড়ার জন্য ইতিহাস জানার কোন বিকল্প নেই। তাই এদেশের একজন নাগরিক তথা একজন দেশপ্রেমিক হিসাবে আমি বলবো বিজয় দিবসসহ অন্যান্য সময়ও আমাদের শিক্ষার্থীদের ইতিহাস চর্চার বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে।
আরআর
বিজয় উৎসবে আপনিও আসুন...