দিল দিল পাকিস্তান/তুম মিল গায়েসহ অসংখ্য কালজয়ী সঙ্গীতের মাধ্যমে সারাবিশ্বের দরবারে খ্যাতির সুউচ্চ শিখরে আরোহন করা জুনাইদ জামশেদ চিত্রলের নিকটবর্তী বিমান দূর্ঘটনায় শাহাদাত বরণ করে মহান আল্লাহর প্রিয় হয়ে গেলেন। এমন প্রিয় তো তখনই হন, যখন তিনি জিন্স এবং পপ তারকার জ্যাকেট খুলে লম্বা জুব্বা ও পাগড়ি পরা শুরু করে দেন। তার মাঝে দীনে ইসলামের বুঝ আসার পর তার সবকিছু অভাবনীয় পরিবর্তন তার চেহারায় এক নুরানি আভা এনে দেয়। তাঁর এ জৌতির্ময় চেহারা অনেক শোবিজ তারকাকে মহান আল্লাহর কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। তিনি দীনের পথে আসার পর থেকে মহান আল্লাহর শানে হামদ ও নাত গাইতে শুরু করেন। তার এই বৈপ্লবিক পরিবর্তন দেখে সবাই প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়ে ওঠে।
মাওলানা তারিক জামিলের নিরলস দাওয়াতে বেশ কয়েকজন শিল্পীর হেদায়েত পথে আসার পথ ধরে তিনিও এ মহান দায়ীর আবেদন ফেলতে পারলেন না। সে সময়ই তিনি আর পপ সঙ্গীত গাইবেন না বলে তাওবা করেন। আর সে সময় থেকে মহান আল্লাহর শানে হামদ এবং রাসুলের শানে নাত গাইতে শুরু করেন। তারপর থেকে আজ পর্যন্ত তিনি দীনের দায়ী হিসেবে কাজ করে গেছেন।
আরো পড়ুন
পাকিস্তানে বিমান বিধ্বস্ত; যাত্রীদের মধ্যে আছেন জুনায়েদ জামশেদও
দীনী দাওয়াত ও তাবলিগের ওপর তিনি টিভিতে একটি ধারাবাহিক অনুষ্ঠান শুরু করেছিলেন। এ নিয়ে তার ওপর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্রাম ও হজরত আয়েশা রাযি.-এর সঙ্গে বেয়াদবী করার অপবাদ আরোপ করা হয়। শুধু তাই নয় এ নিয়ে তাকে মুরতাদ ঘোষণাও করা হয়েছিল। তিনি বিষয়টি নিয়ে ইসলামাবাদ এয়ারপোর্টে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। এতদসত্তেও দুস্কৃতিকারীরা ইসলামাবাদের এয়ারপোর্টে তাকে অপমানও করেন।
বায়ান্ন বছর বয়সী জুনাইদ জামশেদ ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন। পাকিস্তানের একটি বেসরকারি কোম্পানিতে সোল কন্টাক্টরের কাজও করেছিলেন তিনি। কিন্তু মিউজিকের শখ তাঁকে বৈচিত্র্যময় রঙিন জীবনের ঝলমলে জীবনের দিকে টেনে নেয়। তিনি নিজের ভাগ্যকে এ পথে আলোকিত দেখতে পান। অনেক বছর পর্যন্ত তিনি গিটার এবং হালকা মিষ্টিসুরের মাধ্যমে তারুণ্যের হৃদয় রাজ্যে বসবাস করেন। দীনের পথে আসার পর থেকে শোবিজ জগতের আয়-রোজগারকে তিনি নিজের জন্য হারাম করে নিয়েছিলেন। জুনাইদ জামশেদ নামে নিজেদের ঐতিহ্যবাহী পোশাককে বর্তমান সময়ে একটি ব্রান্ডপোশাক হিসেবে সবার মাঝে পরিচয় করিয়েছেন।
জুনাইদ জামশেদ দুইটি পথ ও মতকে নিজের লক্ষ্য হিসেবে স্থির করে নিয়েছিলেন। শোবিজের তারকাদের কাছে ইসলামের দাওয়াত দেওয়া এবং তাদের জাতীয় পোশাক সালওয়ার ও কামিজকে অগ্রাধিকার দেওয়া।
তিনি বলেন, আমাকে কলেজ-ইউনিভার্সটি পপ সম্রাট হওয়ার রাস্তা দেখিয়েছে। আর তাই এমন গোনাহের কাফফারা আমাকে আদায় করতেই হবে। সেজন্য তিনি কলেজ-ভার্সটির ছাত্রদের গোমরাহির পথকে দীনের পথে আনার জন্য তাদের মাঝে তাবলিগ করা শুরু করেন।
জুনাইদ জামশেদের মেধা ও চিন্তাশক্তি ছিল খুবই প্রখর। তিনি শোবিজ থেকে দূরে সরে যাননি এজন্য যে, টিভিতে খারাপ বিষয় প্রচার করা হয়, সেখানে দাওয়াত-তাবলিগ এবং হামদ ও নাত প্রচার করার মাধ্যমে তাতে পরিবর্তন আনা সম্ভব।
মহান আল্লাহর নামকে হৃদয়ে ধারণ করে প্রতিটি সকাল-সন্ধ্যা শুরু করা জুনাইদ জামশেদ প্যান্ট ছাড়ার পর কখনো তিনি এ পোশাক পরেননি। পাজামা জুব্বাকে তিনি নিজের পোশাক বানিয়ে নিয়েছিলেন। তিনি বলেছেন, মুসলমান যেহেতু, তবে মুসলমান হয়েই দেখানো উচিত। এজন্য তিনি নিজেদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরাকে নিজের মিশন বানিয়ে নিয়েছেলিন।
সূত্র: দৈনিক পাকিস্তান উর্দু
আরআর
জুনায়েদ জামশেদ সম্পর্কে আরো খবর ও লেখা পড়তে আওয়ার ইসলামের সঙ্গেই থাকুন..