۞ ওয়ালি উল্লাহ আরমান
ওর নাম আয়লান কুর্দি না। ওর নাম কেউ জানে না, জানবেও না কোনোদিন৷ রবিবার বাংলাদেশ উপকূলে পরিবারসহ শিশুটি প্রাণ বাচাতে মংডু থেকে নৌকায় করে কক্সবাজার অভিমুখে রওনা হয়েছিলো। অতঃপর বার্মার সীমান্তরক্ষী পুলিশদের (Burmese Border Guard Police) গুলিতে নিহত হয়।
হলুদ রংয়ের হাফ শার্ট, নিম্নাঙ্গে প্যান্ট কিংবা নেংটি জাতীয় কোনো কাপড় নেই৷ ছোট্ট নিষ্প্রাণ শিশুটি উপুড় হয়ে নদী তীরে কাদামাটিতে শুয়ে আছে৷ সাথে থাকা মা কিংবা বাবার ঝাঁঝরা হয়ে যাওয়া লাশ কোথায় ভেসে গেছে কেউ জানে না!!
আজ দুপুরে Chowdhury Akbor Hossain এর টাইমলাইনে নিষ্প্রাণ শিশুটির মর্মান্তিক ও হৃদয়স্পর্শী ছবিটি দেখেই দেহ-মন, আবেগ-অনুভূতি প্রচণ্ডভাবে কেঁপে উঠেছে৷ অব্যক্ত যন্ত্রণায় দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে হৃদয়৷
ওর মতো সন্তান আমার ঘরেও রয়েছে৷ তার মুখের ‘আব্বু' সম্বোধনে আমিও উতলা হই৷ হয়তো সে কারণেই নাফ নদী তীরে চিরতরে ঘুমিয়ে পড়া হতভাগা শিশুটির মুখচ্ছবি আরো বেশি আপ্লুত করেছে আমাকে৷ আমি নিশ্চিত, করবে আপনাকেও!
অনন্তকালের পথে মহাযাত্রা হয়ে গেছে বাংলাদেশ-মায়ানমার উপকূলে নিথর দেহে পড়ে থাকা এই শিশুটির৷ কিন্তু নিষ্প্রাণ অর্ধ উলঙ্গ দেহের ছবিটি কি আমাদের মনুষ্য পরিচয়কে প্রশ্নবিদ্ধ করছে না চরমভাবে?
নিজের ভাষায়, ছোট্ট কচি মুখে শেষ সময়ে কি বলছিলো সে? ওর অব্যক্ত ভাষারা হয়তো বলছিলো; ‘আমার কি একটু স্বস্তিতে নিঃশ্বাস নেয়ার অধিকার ছিলো না এই পৃথিবীতে? আমার অন্তিমযাত্রা কি কাদামাটিতে না হয়ে মর্ত্যের পৃথিবীতে হতে পারতো না?’
জীবন বাচানোর চরম আকুতিতে দুনিয়ার সবচে নিরাপদ ঠিকানা মায়ের পরম স্নেহের বাহুডোরে আবেশে চোখ বুজে এই কচি সোনা হয়তো ভাবছিলো, ‘মায়ানমারের মানবরূপী রক্তখেকো দানবদের রাইফেলের গুলি, ধারালো ছুরির ফলা আর লকলকে আগুন থেকে তো বাচলাম!'
নিশ্চয়ই ওর চোখে মৃত্যুর আগ মুহূর্ত পর্যন্ত বেঁচে থাকার আকুতি ছিলো৷
মহান আল্লাহ চাইলে তার দেহটি সমুদ্রের অতলে ডুবিয়ে দিতে পারতেন৷
কিন্তু ঢেউ আর স্রোতের মাঝেও নিথর দেহটি তীরে ভাসিয়ে এনে পুরো পৃথিবীর মনুষ্যকুল বিশেষত ১৬০ কোটি নামধারী মুসলমানকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন, আমরা নিজেদের ‘মানুষ' পরিচয় দেয়ার যোগ্যতাও হারিয়ে ফেলেছি৷
অঘোরে প্রাণ যাচ্ছে নিষ্পাপ বনী আদমের৷ জানি না কবে এ থেকে নিষ্কৃতি মিলবে ওদের৷৷ কবে শেষ হবে নিষ্পাপ শিশুদের মৃত্যুর মিছিল৷
ওয়ালি উল্লাহ আরমানের ফেসবুক টাইমলাইন থেকে
আরআর