ওমর শাহ : বিশেষ ক্ষেত্রে মেয়েদের বয়স সীমা শিথিলের সুযোগ রেখে ‘বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন’ টি যৌক্তিক ও গ্রহণযোগ্য বলে দাবি করছেন দেশের শীর্ষস্থানীয় আলেমরা। তাদের দাবি, আইনটির পাস হলে সমাজে বিবাহপূর্বক হাজারো সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।
গত মাসে মন্ত্রিসভার অনুমোদন পাওয়া ‘বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন’এর খসড়ায় ছেলেদের বিয়ের বয়স ২১ ও মেয়েদের ক্ষেত্রে ১৮ বছর রাখা হলেও ‘বিশেষ প্রেক্ষাপটে’ আদালতের নির্দেশনা নিয়ে এবং বাবা-মায়ের সমর্থনে অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়েদেরও বিয়ের সুযোগ রাখা হয়েছে।
তবে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ, বাংলাদেশের নারী অধিকার, মানবাধিকার ও উন্নয়ন সংগঠনগুলো ও দেশের বুদ্ধিজীবী মহল এ আইনটির বিরোধীতা করে আসছে। মানবাধিকার সংগঠনটি বলছে, বাংলাদেশের মন্ত্রিসভার অনুমোদন পাওয়া ওই আইন পাস হলে তা মেয়েদের আরও বেশি বাল্যবিয়ের ঝুঁকির মুখে ঠেলে দেবে। তবে শীর্ষ আলেমরা আইনটির পক্ষে নানা যুক্তি তুলে ধরেছেন।
এ বিষয়ে শোলাকিয়া ঈদগাহের ইমাম মাওলানা ফরিদ উদ্দীন মাসঊদ আওয়ার ইসলাম টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ইসলামে বিয়ের জন্য কোন নির্দিষ্ট বয়স সীমা বলা হয়নি। যে কোন সময়ে বিয়ে হতে পারে। হযরত ফাতেমা রা.কেও রাসুল সা. কোন কোন বর্ণনায় আছে ১৯ বছরে বিয়ে দিয়েছেন আবার কোন কোন বর্ণণায় আছে ১৫ বছরে দিয়েছেন। অতএব ইসলামে এ নিয়ে কোন বাধ্যবাধকতা নেই। তবে পরিণত হওয়ার একটি বিষয় রয়েছে। সেটা কারও কারও ক্ষেত্রে ১৬ বছরেও হয়ে যেতে পারে আবার কারও কারও ক্ষেত্রে ১৮ পার হয়ে গেলেও হয় না। হযরত আয়শা রা. এর বিয়ে হয়েছিল ৭ বছর বয়সে পরে পরিণত হওয়ার পর তাকে রাসুল সা. এর ঘরে পাঠানো হয়েছিল। বাবা মা যদি মনে করেন ১৮ বছর এর আগে ছেলে মেয়েদের বিয়ে দেওয়া উচিত আদালতেরও এ সুযোগ দেওয়া উচিত। না হয় সমাজে অন্যায় পাপাচার বেড়ে যাবে। আইনটি পাস হলে চারিত্রিক দিয়ে সমাজ এগিয়ে যাবে।
দেশের শীর্ষ আলেম ও দৈনিক ইনকিলাব পত্রিকার সহসম্পাদক মাওলানা উবায়দুর রহমান খান নদবী আওয়ার ইসলাম টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, আইনটি খুবই যুক্তিসঙ্গত ও ফলদায়ক হবে। বাল্য বিয়ে শিথিলতার এ আইনটি না হলে সমাজে বাল্য যৌনাচার বেড়ে যাবে, বাল্য পলায়ণ বেড়ে যাবে, বাল্য অবৈধ সন্তানও বেড়ে যাবে। অনেকগুলো সমস্যা সমাধানের জন্য এ আইনটিতে শিথিলতার সুযোগ রাখা হয়েছে। বাল্য বিয়ে হলে সমস্যা একটি আর না হলে সমস্যা হাজারটা। এ আইনটি দুনিয়ার অন্যান্য দেশেও অনুসরণ করা উচিত।
তিনি বলেন, যারা এর বিরোধিতা করছেন তারা কারও না কারও এজেন্ট। তাদেরকে দিয়ে প্রতিবাদ করানো হচ্ছে যাতে বাংলাদেশে বিবাহপূর্ব বেবিচার বাড়ে। এ জন্য তাদের পেছনে প্রচুর পরিমাণ টাকাও ব্যয় করা হচ্ছে। বিয়ে আগে হলে সন্তান মারা যাবে, অথচ বিয়ের আগেই এ দেশে হাজার হাজার অবৈধ সন্তানের মৃত্যু হয়। কোন কোন সময় ১৮ বছরের আগেও বিয়ের প্রয়োজন হয়ে যায়। যাদের অভিভাবক নেই, দেখাশুনার মানুষ নেই, যাদের বিয়ের প্রয়োজন হয়ে গেছে তাদেরকে আদালতের সম্মতিক্রমে বিয়ে দেওয়া যেতেই পারে। যাদের সমস্যা নাই তাদের ষোল বছরে বিয়ে হবে যাদের সমস্যা নাই তাদের ১৭ বছরে বাচ্চা হবে। পৃথিবীতে বহু জায়গায় মানুষের ষোল সতের বছরে বাচ্চা হচ্ছে। তাদের বাচ্চা সুস্থ্য আছে, মেধাবী আছে, মায়েরাও ভাল আছে। ১৮ এর আগে বাচ্চা হলে মা মারা যাবে পৃথিবীেেত এমন কোন বিজ্ঞান নেই। এসব তাদের অহেতুক চিৎকার। সব আইনের মধ্যেই কোন না কোন ব্যতিক্রম আছে। যারা এর বিরোধীতা করে তারা সরকার ও জনগণের কল্যাণ চায় না। তারা টাকার বিনিময়ে এসব কাজ করছে। বাংলাদেশের মানুষের সামাজিক অবস্থার ক্ষতি ও চারিত্রিক অবক্ষয়ের জন্য এসব কাজ করানো হচ্ছে। ইউরোপ ও আমেরিকার অসভ্য সমাজের চিত্র এ দেশে বাস্তবায়নের জন্য তাদের হীন ষড়যন্ত্র। যে সমস্ত মেয়েদেরকে হয়রানি করা হচ্ছে, দেশ নিরাপত্তা দিতে পারছে না তারা কি তাদের ছেলে সন্তানদের বিয়ে দিয়ে দিবে না? সরকার যদি এ আইন পাশ না করে সরকারকে জিজ্ঞাসা করতে হবে, তারা কি জনগণের সরকার নাকি মানবাধিকার সংস্থার সরকার?