[caption id="attachment_19074" align="alignleft" width="500"] ফাইল ছবি[/caption]
আওয়ার ইসলাম: ঐতিহাসিক চরমোনাইর বার্ষিক মাহফিলের উদ্বোধনী বয়ানে আমীরুল মুজাহিদীন আলহাজ্ব হযরত মাওলানা মুফতী সৈয়দ মো: রেজাউল করীম পীর সাহেব চরমোনাই বলেন, দেশের মানুষ শান্তিতে নেই। দুনিয়ার মোহ আজ সবাইকে অন্ধ করে ফেলেছে। আসলে আত্মশুদ্ধি না হলে দেশের ক্রমবর্ধমান হারে বৃদ্ধি পাওয়া অশান্তির দাবানল বন্ধ হবে না। তাই আমাদের আত্মশুদ্ধি অর্জন করে, দুনিয়ার মোহ ত্যাগ করতে পারলে ব্যক্তিজীবন থেকে শুরু করে দেশব্যাপী শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে।
বরিশাল জেলা সদরের চরমোনাই ইউনিয়নের অন্তর্গত চরমোনাই মাদরাসা মাঠে ৩ দিনব্যাপী অগ্রহায়ণের বার্ষিক মাহফিল শনিবার (২৬ নভেম্বর) জোহরের নামাজের পর আমীরুল মুজাহিদীন আলহাজ্ব হযরত মাওলানা সৈয়দ মো: রেজাউল করীম পীর সাহেব চরমোনাই-এর উদ্বোধনী বয়ানের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়।
শুক্রবার থেকেই দেশ-বিদেশের বিভিন্ন স্থান থেকে মানুষ বিমান-নৌ ও সড়কপথে দলবেধে মাহফিলস্থলে আসতে থাকে। দুপুরের পূর্বেই মাহফিলের বিশাল প্যান্ডেল লক্ষ লক্ষ মানুষের উপস্থিতিতে পূর্ণ হয়ে যায়। আগত মানুষ কাতারবদ্ধ হয়ে বয়ান শোনার প্রস্তুতি নিতে থাকে।
মেডান্টা হসপিটালে কেমন আছেন মাওলানা ওলীপুরী
দুপুর ১টা ৩০ মিনিটে জোহরের নামাজ আদায়ের পর পবিত্র কুরআন তেলাওয়াতের মধ্য দিয়ে মাহফিলের কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়।
পীর সাহেব চরমোনাই তার বয়ানে উপস্থিত শ্রোতাদের উদ্দেশ্য করে বলেন, আল্লাহতায়ালা বলেছেন, (হে নবী আপনি বলুন) নিশ্চয়ই আমার নামাজ, আমার কুরবানী, আমার জীবন, আমার মরণ একমাত্র আল্লাহর জন্য। অর্থাৎ আমাদের দুনিয়ার জীবনের সকল কাজ, কামাই, রোজগার, মাহফিল ইত্যাদি একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই করতে হবে। আল্লাহর রাসূলের একটি গুরুত্ত্বপূর্ণ হাদীস, যেটিকে বুখারী শরীফে স্বতন্ত্রভাবে অধ্যায়ের শিরোনাম ছাড়াই উল্লেখ করা হয়েছে। বুখারী ও মুসলিম উভয় হাদীসগ্রন্থে উল্লেখিত উক্ত হাদীসে বলা হয়েছে, সকল কাজের ফলাফল তার নিয়তের উপর নির্ভরশীল। অর্থাৎ নিয়ত ঠিক না হলে কোন কাজের প্রতিদান পাওয়া যায় না। কেউ যদি আল্লাহ ও রাসূলকে পাওয়ার নিয়তে হিজরত করে তবে সে আল্লাহকেই পাবে। আপনারা অনেক কষ্ট করে মাহফিলে হিজরত করে এসেছেন। কিন্তু আপনারা এত কষ্ট করে এসে পরিবার-পরিজন ছেড়ে, এখানে বাথরুম, খানা, ঘুমানোসহ সবসময় কষ্ট সহ্য করেও যদি নিয়ত ঠিক না হয়, কোন লাভ হবে না।
মরহুম পীর সাহেব বলতেন, মাহফিল শুরুর পূর্বে নিয়ত ঠিক করে নিতে হবে, এখানে আসলে কেউ ধনী হবে না, কারো রোগের চিকিৎসাও এখানে হয় না, অন্য কোন দুনিয়াবী উদ্দেশ্য এখানে হাসিল হবে না, এখানে একমাত্র আল্লাহকে পাওয়ার রাস্তা দেখানো হয়। অনেক দরবারে মানুষকে ধনী বানানোর প্রলোভন দেয়া হয়, মাজারে মান্নত করলে মাকসুদ হাসিল হওয়ার কথা বলা হয়, কিন্তু চরমোনাইতে কোন শিরক, বিদআত বা দুনিয়াবী কাজকে প্রশয় দেয়া হয় না। এখানে মুরিদ হলেও দুনিয়ার কোন ফায়দা হবে না, এখানে মুরিদ হলে আল্লাহ চাহেতো হেদায়াত নিয়ে বাড়িতে যেতে পারবেন।
তিনি বলেন, কোন দরবারে গিয়ে যদি কেউ দুনিয়াবী নিয়ত করে তবে দুনিয়ার চাহিদা পূরণ হলেও সে আল্লাহর কাছে কিছুই পাবে না। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কেউ যদি শুধু বাতাস পেতে ঘরের দক্ষিণ দিকে জানালা বানায় তাহলে সে শুধু বাতাসই পাবে, কিন্তু যদি সে নিয়ত করে আমি দক্ষিণ দিকে জানালা দিয়ে আলো আসবে আর এই আলোতে আমি কুরআন তেলাওয়াত করব। তাহলে তুমি বাতাসতো পাবেই উপরন্তু নিয়তের কারণে আমলনামায় সওয়াবও হতে থাকবে। এজন্য তিনি সকলকে নিয়ত সহীহ করে মাহফিলে অবস্থানসহ সকল কাজ করার আহবান জানান। তাহলে দুনিয়াবী কোন মকসুদ থাকলে তা কবুল হলেও সহীহ নিয়তের কারনে সওয়াবসহ হেদায়েতপ্রাপ্ত হবে। যারা আল্লাহ থেকে পৃথক হয়ে আছে, তাদেরকে আল্লাহর পরিচয় শিক্ষা দেয়ার জন্য এই দরবার বা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে। এখানে আপনারা আসছেন রোগী হিসেবে। এই তিনদিনে আপনাদেরকে প্রেসক্রিপশনও দেয়া হবে, ইনশাআল্লাহ।
যারা এই প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী চলতে পারবেন তারা রোগ থেকে মুক্তি লাভ করতে পারবেন এবং আল্লাহর সাথে সম্পর্ক গড়তে পারবেন। আর যদি এখানে মাহফিলের পক্ষ থেক এই লক্ষ লক্ষ মানুষের খাওয়ার আয়োজন করা হতো, তাহলে দেখা যেতো, খানার আঞ্জাম দিতে গিয়ে আসল উদ্দেশ্যই হাসিল হতো না। এজন্য এখানে আমরা এই ব্যবস্থা করিনি। যেহেতু আপনারা অন্তরে রোগ নিয়ে এখানে আসছেন সেহেতু মূল উদ্দেশ্য হলো এই রোগ দূর করা। তাই আমরা রোগের চিকিৎসা করাটাকেই মূল উদ্দেশ্য বলে মনে করি।
আল্লাহপাক পবিত্র কুরআনে বলেছেন, তোমরা ছাদীকীনদের সাথী হয়ে যাও, আর এখানে আল্লাহর রহমাতে হাজার হাজার আল্লাহর খাটি বান্দা বা ওলী রয়েছে। এখানে এমন কিছু আল্লাহর পাগল আছে যারা এই তিন/সাড়ে তিনদিন পর্যন্ত কিছু ভক্ষণও করে না।
পীর সাহেব ভাল মানুষের সোহবতে থাকার জন্য সকলের প্রতি আহবান জানিয়ে বলেন, ভাইয়েরা! আগুনের কাছে ঠান্ডা জিনিস থাকলে যেমন গরম হয়। বরফের মতো কোনো ঠান্ডা জিনিসের কাছে কোনো জিনিস থাকলে দেখবেন সে জিনিসটিও ঠান্ডা হয়ে যায়। তেমনি ভাল মানুষের সোহবতে থাকলে ভাল হওয়া যায়।
৩দিন ব্যাপী মাহফিলে প্রতিদিন ফজর ও মাগরীবের নামাজের পর পীর সাহেব ও মুফতী সৈয়দ মো: ফয়জুল করীম (পীরে কামেল চরমোনাই) -এর বয়ান ছাড়াও দেশবরেণ্য ওলামায়ে কেরাম বয়ান পেশ করবেন।
ওলামায়ে কেরামের মধ্যে রয়েছেন, মাওলানা মোবারক করীম, প্রিন্সিপাল মাওলানা সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানী, মুফতী সৈয়দ এছহাক মো: আবুল খায়ের, মাওলানা নুরুল হুদা ফয়েজী, অধ্যক্ষ মাওলানা ইউনুছ আহমাদ, মাওলানা আব্দুল মজিদ প্রমুখ।
আরআর