মাওলানা মাহমুদ হাসান
বাসায় এলে আমার চার বছরের মেয়েটা যখন আব্বু বলে গলায় জড়িয়ে ধরে তখন আমার চোখের সামনে মিয়ানমারের বাবাহারা এতিম শিশুদের দৃশ্যগুলো সামনে ভেসে উঠে। ৬ মাসের অবুঝ সন্তান হামেদ যখন মায়াভরা নয়নে তাকিয়ে তাকিয়ে খিলখিল করে হাসে তখন আরাকানের ওই সদ্য ভূমিষ্ট হওয়া শিশুদের কথা মনে পরে, যারা বাবার আদর, মায়া, মমতা, স্নেহ ও ভালবাসা পাওয়া এবং উপলব্ধি করার পূর্বেই তাদের বাবারা হারিয়ে যাচ্ছে।
প্রায় ৬ বছর আগে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হওয়া স্ত্রী সম্পর্কের ২৩/২৪ বছরের তরুণীটি যখন বের হওয়ার সময় জুতা থেকে মাথা পর্যন্ত পোশাক আশাক ঠিক করে দেয়, আশা করে স্বামীর একটু আদর-সোহাগের- তখন মিয়ানমারের সেই অসংখ্য-অগনিত স্বামীহারা বিধবা নারীদের কথা মনে পরে, যাদের সামনে তাদের স্বামী সন্তানদের নির্মমভাবে শহীদ করা হয়েছে অথবা তাদের সামনে আগুনে পুরে ফেলা হয়েছে।
ষাটোর্ধ্ব বিধবা মা যখন অপরপ্রান্ত থেকে মোবাইলে সন্তানদের খবরাখবর নেওয়ার জন্য একের পর এক কল দিয়ে যায় তখনও মিয়ানমারের সেই মা’দের কথা মনে পরে- যাদের সামনে তাদের গর্ভে ভূমিষ্ট ও তাদের অক্লান্ত পরিশ্রমে লালিত পালিত পরিণত বয়সে পৌঁছা ছেলেদের নির্মমভাবে জবাই করা হয়েছে বা গুলি করে মাথার খুলি উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে কিংবা আরো পাষণ্ডভাবে দুনিয়া থেকে বিদায় করে দেওয়া হয়েছে।
আর এক টুকরো কাফনের কাপড় বা একটা কবর অথবা জানাজা হওয়ার আশায় যারা জীবনটা হাতে নিয়ে এপারে এসে জীর্ণ শরীরে, শীর্ণ বদনে ফেলে আসা নিকট অতীতের বিবরণ দিচ্ছে তার চিত্র কিন্তু কল্পনাকেও হার মানায়।
ওই পারে যা হচ্ছে, যা আমরা শুনছি- তাদের বাস্তব চিত্র আরো বিভীষীকাময়। কিন্তু এরপরও কি আমাদের কিছুই করার নেই?
একটি প্রতিবেশী রাষ্ট্রের অধিবাসী হিসাবে আমরা কি কোনভাবেই দায় এড়াতে পারব? আমরা মিয়ানমার ইস্যুর একটা সুষ্ঠু সমাধান চাই। তাদের অধিকার হারানো অধিকার ফিরে পেতে আন্তর্জাতিকভাবে একটু চেষ্টা করি। মানুষ হিসাবে বেঁচে থাকার অধিকার আদায়ে মানবিকভাবে তাদের সহযোগিতায় এগিয়ে আসি।
আন্তর্জাতিক আইন ঠিক রেখে রাষ্ট্রীয় পররাষ্ট্রনীতি অবলম্বনে নিজেদের হাতটা প্রসারিত করার চেষ্টা করি। আমাদের মত করে তাদের বেঁচে থাকার সুযোগ করে দেই। আমরা মানুষ। মানবিকতাই আমাদের কাম্য। মানবিকতা ছাড়া মানুষ নাম ধারণ করে বেঁচে থাকার কি কোন অর্থ হয়?
লেখক: প্রিন্সিপাল, মাদরাসা উসমান ইবনে আফফান রা., মাতুয়াইল, ডেমরা, ঢাকা।
আরআর