সালাহুদ্দীন জাহাঙ্গীর
কবি
প্রবাসী এক রোহিঙ্গা ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলছিলাম। ফোনে কথা বলতে বলতে কান্নায় স্তব্ধ হয়ে যাচ্ছিলো তার কণ্ঠ। হাজার মাইল দূর থেকে আমার চোখও ভিজে উঠলো রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতনের ভয়াবহতা শুনে।
যারা প্রোফাইল পিকচার চেইঞ্জ আর ফেসবুকে ফেইক ছবি দেখে হা-হুতাশ করছি, আমরা আসলে জানিই না কী ঘটছে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে। মায়ানমারে যা ঘটছে সে-সব না হয় বাদই দিলাম, বাংলাদেশে আশ্রয় গ্রহণের পর তাদের নিয়ে যে পাশবিক তাণ্ডব চলছে... আল্লাহ মাফ করো!
ভয়াবহ, মুখে বলার মতো নয় সেসব পাশবিকতা। আশ্রয়ের আশায় পালিয়ে আসা কয়েকজন রোহিঙ্গা নারী এবং কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শীর কিছু অডিও ক্লিপ শুনলাম। চাটগাঁয়ের ভাষা যদিও ততোটা বুঝি না, তবে যেটুকু বুঝলাম তাতেই শরীরের রোম দাঁড়িয়ে গেলো।
এ কোন জাহিলিয়্যাত, এ কেমন বর্বরতা! মৃত্যুপুরী থেকে বেঁচে এসে তারা যেনো দাঁড়িয়ে আছে এক নরকের দুয়ারে। প্রত্যেকটা মেয়ে... একাধিকবার ধর্ষণের শিকার হচ্ছে। যে যেভাবে পারছে তাদের নিয়ে যাচ্ছে। একেকজন পাঁচ দিন-সাত দিন ধরে না খাওয়া, পানি ছাড়া আর কোনো খাবার পড়েনি পেটে। এমন মরণপণ অবস্থাতেই তাদের ভাগাভাগি করে নিয়ে যাচ্ছে স্থানীয় পিশাচের দল। কারো চিৎকার করার শক্তিটুকুও নেই। এই বিসর্জনের পরও যদি একটু আশ্রয় মিলে, একবেলা খাবার পাওয়া যায়। এ-ই দিয়েই তো আমরা স্বাগত জানাচ্ছি রোহিঙ্গা মুসলিমদের।
আমরা সীমান্ত খুলে দেয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। কিন্তু সীমান্ত পাড়ি দিয়ে আমরা তো তাদের আহ্বান জানাচ্ছি হাবিয়া দোজখের দুয়ারে। আর কোথায় যাবে এই নিরন্ন, সবকিছু হারিয়ে নিঃস্ব মানুষগুলো? সবচে ভালো হয় মাঝ দরিয়ায় তাদের নৌকা বোঝাই করে নিয়ে মেরে ফেলা। সাগরের বুকে তলিয়ে যাক। পৃথিবীর বুক থেকে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাক তাদের নাম-নিশানা।
ইসলামি রাজনীতির বড় বড় নেতারা কোথায় আপনারা? এই শত শত কালেমাপড়া মুসলমানের জন্য আপনারা কি একবার টেকনাফ অভিমুখে লংমার্চ করতে পারবেন না? একজন মুসলিম মেয়ের আর্তনাদ শুনে হাজ্জাজ বিন ইউসুফের মতো জালিম শাসক তিন রাত ঘুমাতে পারেননি। হিন্দুস্তানে সেনাবাহিনী প্রেরণ করে তবেই তিনি বিছানায় গিয়েছিলেন। আপনারা কি শত শত মুসলিম বোনের জন্য শান্তিপূর্ণ লংমার্চও করতে পারবেন না? নাকি কর্মসূচি ঘোষণা করবেন আগামী বছরের জন্য? যখন রোহিঙ্গা মেয়েদের গর্ভ থেকে ভূমিষ্ঠ হবে ধর্ষকদের সন্তান, তারপর কি আপনাদের কর্মসূচি শুরু হবে?
আমার যেসব সাংবাদিক বন্ধু আছেন, তাদের অনুরোধ করবো সরেজমিনে একবার টেকনাফ-উখিয়া ঘুরে আসার। বুঝতে পারবেন মানুষের বর্বরতার পরিসীমা। সাংবাদিকতার বাইরেও ‘মানুষ’ বলে আপনাদের যে পরিচয়টুকু এখনও স্বগর্বে নিজেদের পরিচয় প্রকাশ করছে, একবারের জন্য হলেও সেই মনুষ্যত্ব দিয়ে এই মানুষগুলো বাঁচার একটা সহায় করুন। নিউজ না হোক, নিজের বিবেকের কাছে অন্তত নিজে একবার সাহসী হোন।
আরআর
http://ourislam24.com/2016/11/24/%E0%A6%86%E0%A6%B0%E0%A6%BE%E0%A6%95%E0%A6%BE%E0%A6%A8-%E0%A6%B8%E0%A7%87%E0%A6%87-%E0%A6%B8%E0%A6%BE%E0%A6%B2%E0%A6%A4%E0%A6%BE%E0%A6%A8%E0%A6%BE%E0%A6%A4-%E0%A6%8F%E0%A6%87-%E0%A6%97%E0%A6%A3-3/