আওয়ার ইসলাম: ২৩ নভেম্বর সন্ধ্যায় আল্লামা শাহ আহমদ শফীর চিঠি নিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন বাংলাদেশ কওমি মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড বেফাকের প্রতিনিধি দল।
আল্লামা আশরাফ আলীর নেতৃত্বে ৯ সদস্যের এই প্রতিনিধি দল সন্ধ্যা ৬টা থেকে ৮ টা পর্যন্ত দীর্ঘ বৈঠক করেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে। বৈঠকে পঠিত চিঠিতে দেওবন্দের আদলে স্বীকৃতির দাবি করে বলা হয় , আমরা কওমী মাদরাসা সনদের সরকারি মান চাই, তবে তা নিঃশর্ত হতে হবে। শর্ত এবং সরকারি কোন প্রকারের নিয়ন্ত্রণ ব্যতিরেকে দাওরায়ে হাদীসের (টাইটেল) সনদের মান নির্ধারণের দৃষ্টান্ত হিসেবে আমরা আপনার সামনে ভারতের দারুল উলূম দেওবন্দের উদাহরণ পেশ করতে চাই। দেওবন্দের ইতিহাস ঐতিহ্য উল্লেখ্য করার পর চিঠিতে দেওবন্দের সনদধারীরাও সরকারি চাকরি করার উদাহারণ পেশ করা হয়।
চিঠিতে বলা হয়, ইতিহাস ও ঐতিহ্যমন্ডিত এই দারুল উলূম দেওবন্দের শিক্ষা সনদের সরকারী মান ও মূল্যায়ন বৃটিশ ও পাকিস্তান শাসনামলসহ বর্তমান ভারতে বিদ্যমান থাকলেও বাংলাদেশে তা কার্যকর নেই। অথচ সময় ও বাস্তবতার তাগিদে কওমী মাদরাসা পড়ুয়া আলেমদের কর্মক্ষেত্র সম্প্রসারণ, তাদের মেধা-প্রতিভার মূল্যায়ন এবং সর্বোপরি দেশ ও জাতির আরো বৃহৎ পরিসরে সেবাপ্রদানের সুযোগ উন্মুক্ত করার স্বার্থে কওমী সনদের সরকারি মান নির্ধারণের প্রয়োজন রয়েছে। এটি আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারত ও পাকিস্তানে বহু বছর আগ থেকেই আছে। ভারত সরকার কোনো প্রকার শর্ত, নিয়ন্ত্রণ ও দাপ্তরিক ছাড়াই দারুল উলূম দেওবন্দের সনদের (নির্ধারিত বিষয় ও ক্ষেত্রে) রাষ্ট্রীয় মান এবং সাধারণ শিক্ষার সমমান প্রদান করেছে। ফলে দেশে ও বিদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে দারুল উলুম দেওবন্দের (কওমী মাদরাসার) সনদধারী শিক্ষার্থীগণ বিভিন্ন বিষয়ে উচ্চশিক্ষা ও চাকুরীর সুযোগ পাচ্ছে। ভারতের সড়ক, রেল ইত্যাদি জনপরিবহনে দারুল উলূম দেওবন্দের কার্ডধারী শিক্ষার্থীরা অর্ধেক ভাড়া প্রদানসহ সাধারণ শিক্ষার্থীদের মতো সুবিধা ভোগ করে থাকে।
আমি এখানে উল্লেখ করতে চাই যে, ১৯০৯ সালে কলকাতা আলিয়া মাদরাসায় যখন টাইটেল খোলা হয়। তখন সেখানে এমন অনেককে মুহাদ্দিস পদে নিয়োগ দেয়া হয়, যারা দেওবন্দ অথবা দেওবন্দী ধারার কওমী মাদরাসা থেকে সনদপ্রাপ্ত। যেমন- মাওলানা ইসহাক বর্ধমানী, মাওলানা ইয়াহইয়া, মাওলানা আব্দুল হামিদ চট্টগ্রাম। পরবর্তীতে ১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হলে ইসলামিয়াত বিভাগে মাওলানা জফর আহমাদ উসমানী ও মাওলানা ইসহাক বর্ধমানীকে (বদলী করে) অধ্যাপক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। তাঁরা উভয়ই দারুল উলূম দেওবন্দের সনদধারী ছিলেন। এমনিভাবে হায়দরাবাদ উসামানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে শাইখুল হিন্দ মাহমূদ হাসান দেওবন্দী (রাহ.)এর স্নেহধন্য বিশেষ ছাত্র দেওবন্দের সনদপ্রাপ্ত মাওলানা মানাজির হাসান গিলানীকে প্রধান অধ্যাপক পদে নিযুক্ত করা হয়। চট্টগ্রাম আলিয়া মাদরাসা এবং সিলেট আলিয়া মাদরাসায়ও দেওবন্দের সনদপ্রাপ্ত আলেমরা শিক্ষকতা করেছেন। পাকিস্তান আমলেও ১৯৫৪ সালে ঢাকা আলিয়ায় হেড মুহাদ্দিস পদে নিয়োগ পান দেওবন্দের সনদপ্রাপ্ত আলেম। জাতীয় মসজিদ বায়তুল মুকাররমের খতীব মাওলানা উবাইদুল হক এবং অধ্যাপক পদে নিযুক্ত হন তাঁরই ভ্রাতা দেওবন্দের সনদপ্রাপ্ত আলেম মাওলানা আবদুল হক। কিশোরগঞ্জ হায়বতনগর আলিয়া, পাবনা আলিয়াসহ দেশের বহু আলিয়া মাদরাসায়ও দেওবন্দের সনদপ্রাপ্ত অনেক আলেম কর্মরত ছিলেন। তন্মধ্যে মাওলানা কাজী মুতাসিম বিল্লাহ, শায়খুল হাদীস আল্লামা আজিজুল হক, মাওলানা নূরুদ্দীন গওহরপুরী প্রমুখের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
পূর্ণাঙ্গ চিঠি পড়তে ক্লিক করুন
আরআর