আওয়ার ইসলাম: রোহিঙ্গা ইস্যুতে মানবিক বিপর্যয়ে গোটা দুনিয়াবাসী ক্রমান্বয়ে সরব উঠছে। আন্তর্জাতিক মহলেও চলছে নানা আলোচনা সমালোচনা। আর আলোচনার প্রাথমিক সমাধান হিসেবে বাংলাদেশের সীমান্ত পথ খুলে দেওয়ার প্রসঙ্গটি উঠে আসছে বারবার । এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের অবস্থান কেমন হওয়া উচিত তা নিয়ে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন কূটনৈতিক ডা. দেলোয়ার হোসেন ও কূটনৈতিক ওয়ালিউর রহমান।
রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে মিয়ানমারকে আন্তর্জাতিকভাবে চাপ দেওয়া উচিত কিনা? বাংলাদেশের সীমান্ত পথ খুলে দেওয়ার বিষয়ে জাতিসংঘের আহ্বান মেনে নেওয়া যৌক্তিক কি? এছাড়া অং সান সু চি অমানবিক ভূমিকায় কেনো? এমন প্রশ্নের জবাবে এই দুই কূটনৈতিক মানবিক বিবেচনায় বাংলাদেশ সরকারের অবস্থান পরিষ্কার করার আহ্বান জানিয়েছেন।
কূটনৈতিক ড. দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘আন্তর্জাতিক চাপ প্রয়োগ কোনো ভালো কৌশল নয়। বাংলাদেশ কূটনৈতিকভাবে মিয়ানমারকে যে চাপ দিবে সেটা সম্ভব নয়। কারণ মিয়ানমারে এখনো সেইভাবে গণতান্ত্রিক সরকার গড়ে ওঠেনি। ওখানে সামরিক সরকারের সকল বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান।’
তিনি বলেন, ‘মিয়ানমারের সঙ্গে আমাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক এখনো বিকশিত হয়নি। যার ফলে দুই দেশের মধ্যে পারস্পারিক বোঝাপড়ায় যথেষ্ট অভাব রয়েছে। এ কারণে মিয়ানমার খুব সহজে বাংলাদেশকে ভুল বুঝতে পারে। এছাড়া অন্যদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে আমাদের হস্তক্ষেপ উচিত নয়। আমরাও নিজেদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে কারও হস্তক্ষেপ পছন্দ করি না।’
রোহিঙ্গা প্রসঙ্গে আন্তর্জাতিক দৃষ্টি দেওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের ভূমিকা কিভাবে প্রকাশ করা যায় সেই বিষয়ে ড. দেলোয়ার বলেন, ‘আমাদের দেশে যে সকল রোহিঙ্গা রয়েছে তাদের ফিরিয়ে নেয়ার বিষয়ে আন্তর্জাতিকভাবে চাপ দেওয়া যেতে পারে। তখন মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের উপর অত্যাচার নিপীড়নের বিষয়গুলো উঠে আসবে। রোহিঙ্গা বিষয়টা দ্বিপাক্ষিক নয়। এটা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার বিষয় যা আন্তর্জাতিকভাবে তুলে ধরা উচিত। কূটনৈতিকভাবে অতীতে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি, যা এখন নেওয়া উচিত।’
তিনি আরো বলেন, ‘অং সান সু চি শান্তিতে নোবেল পেয়েছেন। তার গণতন্ত্রের মধ্যে মানবাধিকারের বিষয় ছিল। কিন্তু তিনি বর্তমানে রাজনৈতিক বিবেচনা থেকে অনেক কাজ করছেন। যা হতে পারে তার রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ। এর ফলে সু চির গণতান্ত্রিক চেতনা এবং মানবিক বোধ পরিষ্কারভাবে ফুটে উঠছে না।’
জাতিসংঘের আহ্বান মেনে নেওয়া উচিত কিনা? এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘জাতিসংঘ যা বলছে তা তাদের নিজস্ব অবস্থান থেকে বলছে। মূলত ইউএনএইসসিআর তাদের মৌখিক এবং প্রাতিষ্ঠানিক দায়বদ্ধতা থেকে এসব কথা বলছে। তবে এই মুহূর্তে বাংলাদেশের উচিত ইউএনএইসসিআর' এর সহায়তা নিয়ে নিপীড়নের শিকার রোহিঙ্গাদের চিহ্নিত করে মানবিক দিক বিবেচনায় আশ্রয় দেওয়া। কারণ এমনিতেই সীমান্তে বিভিন্ন পন্থায় রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করছে বলে শোনা যায়।’
তিনি আরো বলেন, ‘অং সান সু চি নিজের রাজনীতি ও মিয়ানমার নিয়ে চিন্তিত। কিন্তু তিনি মানবিকভাবে যে বিষয়গুলো বিবেচনা করছেন না, এটি দুর্ভাগ্যজনক। কিছুটা হলেও তিনি অবস্থান নিতে পারতেন, যেহেতু তার হাতে ক্ষমতা রয়েছে।’
ওয়ালিউর রহমান বলেন, ‘রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমার যেভাবে আইন করেছে এবং তাদের সংবিধান যেভাবে করা হয়েছে সেখানে আন্তর্জাতিক চাপের প্রসঙ্গ আসবে না। মিয়ানমারের একমিক গ্রুপ আইনে উল্লেখ রয়েছে রোহিঙ্গারা তাদের নাগরিক নয়। রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের কোনো সুযোগ পাবে না। শুধু বার্মিচরা মিয়ানমারের সুবিধা ভোগ করতে পারবে। এক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক চাপ অন্যভাবে প্রয়োগ করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘সীমান্ত খুলে দেওয়া বাংলাদেশের পক্ষে সম্ভব নয়। আন্তর্জাতিক সীমান্ত আইন যেটা রয়েছে তা সব সময় পালন করাও সম্ভব নয়। ইরাক, সিরিয়া ও আফগানিস্তান যুদ্ধে কোন ধরনের সীমান্ত আইন ব্যবহার করা হয়েছে? তাহলে রোহিঙ্গাদের ক্ষেত্রে কোন সীমান্ত আইনের কথা বলা হচ্ছে?’
তিনি আরো বলেন, ‘তবে রোহিঙ্গা প্রসঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের মানবিক ভূমিকা থাকা দরকার। ১৯৯৭ সালে তিন লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আসে। তাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর দায়িত্ব আমাকে দেওয়া হয়। তখন যে সরকার ছিলেন সেই সরকারের পক্ষে ইসলামি সেক্রেটারিতে গেলাম এবং এই সমস্যার সমাধান করতে সক্ষম হয়েছি। রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের নাগরিক নয়। তারা ওখানে শুধু বসবাস করে।’
তিনি বলেন, ‘আন্তর্জাতিক সমর্থন আছে রোহিঙ্গাদের পক্ষে। তাই আমাদের সরকারকে বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে আলোচনা করে এবং মানবিক দিক বিবেচনা করে গুরুত্ব সহকারে এই সমস্যার সমাধান করা উচিত।’
এবিআর