সালাহউদ্দীন জাহাঙ্গীর
কবি
অনির্ভরযোগ্য তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে বর্তমানে কওমি মাদরাসার ছাত্র-ছাত্রী সংখ্যা ২০ লাখ! বিলিভ ইট ২০ লাখ!
ধরে নিলাম এ তথ্য সত্য। আচ্ছা, যদি এ তথ্যকে সত্য বলে ধরে নিই তাহলে আরেকটি সত্যও আমাদের মানতে হবে— ২০ লাখ ছাত্র যদি মাদরাসায় থাকে তবে আরও ২০ লাখ কওমিয়ান মাদরাসার বাইরে আছে। তারা মাদরাসা থেকে পাশ করে অথবা অর্ধেক পড়ে বর্তমানে দেশে-বিদেশে বিভিন্ন কাজে কর্মরত আছেন। এরা কওমিয়ান কিন্তু বর্তমানে কওমি মাদরাসার সঙ্গে হয়তো যুক্ত নন। তবে মনেপ্রাণে কওমিয়ান।
তো, পরিসংখ্যান যেটা দাঁড়ালো- বাংলাদেশে কওমিয়ানদের মোট সংখ্যা ৪০ লাখ!
ভাবতে পারছেন বিষয়টা? ৪০ লাখ! কী বিরাট একটা সংখ্যা! কতো বিশাল একটা জনগোষ্ঠী!! ১৭ কোটি বাংলাদেশি জনগণের ২.৫ পারসেন্ট!! আড়াই ভাগ!!!
কওমি মাদরাসার একটা বড় এ্যাডভান্টেজ হলো, এসব মাদরাসায় যারাই পড়েন তারা নিজেদের কখনো কওমি থেকে দলছুট ভাবতে পারেন না। ফলাফল ভালো হোক বা মন্দ হোক, কওমিয়ানরা সবসময় নিজেদের একক জাতিগোষ্ঠী মনে করে থাকেন। নিজেদের আলাদা একটি চেতনায় বিশ্বাসী, নিজস্ব একটি ভাবাদর্শে উদ্বুদ্ধ থাকাকে গর্ব মনে করেন। এরা সবসময় নিজেদের মধ্যে আলাদা একটা বলয়বদ্ধ থাকতে ভালোবাসেন।
এটা ভিন্ন অর্থে নিলে অনেক নেগেটিভ কথা বলা যাবে। কিন্তু এই ৪০ লাখ সংখ্যাটাকে নিয়ে যদি একবার আপনি পজেটিভ কিছু চিন্তা করেন, ইতিবাচক কোনো কিছুর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে পারেন, বাংলাদেশে বিপ্লব সংঘটিত হয়ে যাবে। এই বলয়বদ্ধতা, এই নিজস্ব চিন্তা ও আদর্শ নিয়ে আলাদা থাকাকে যদি একবার সমাজের উৎকর্ষ সাধনে ছড়িয়ে দেয়া যায়, বিপ্লব হতে দেরি হবে না মোটেও।
না, আমি রাষ্ট্রীয় বিপ্লবের কথা বলছি না। সামাজিক বিপ্লবের কথা বলছি। মানুষের বিপ্লবের কথা বলছি। জনমানুষের সমাজবিপ্লবের কথা বলছি। কীভাবে? আসুন, একটি উদাহরণ দেই।
আচ্ছা, একবার ভাবুন তো, বাংলাদেশের ৪০ লাখ মানুষ একদিন যদি হঠাৎ সিদ্ধান্ত নেয়— তারা বাংলাদেশকে একদম নিট এন্ড ক্লিন বানিয়ে ফেলবে। ঢাকা শহরের যেখানে যতো ময়লা আবর্জনা আছে, প্রতিটি রাস্তায় যতো পলিথিন, কাগজের ঠোঙা, পাশের বাসার কিচেনের বর্জ্য, ড্রেনের আবর্জনাসহ সব ময়লা পরিস্কার করে ফেলবে...। এভাবে দেশের প্রতিটা শহরকে ৪০ লাখ লোক মিলে স্বেচ্ছাশ্রমের মাধ্যমে পর্যায়ক্রমে একদম ঝকঝকে তকতকে করার মহান ব্রত নিয়ে একদিন পথে নেমে পড়লো...।
কী ভয়াবহ একটা ব্যাপার হবে, ভাবতে পারেন?
সারাদেশে হুলস্থূল পড়ে যাবে। দেশের সবগুলো টিভি, প্রিন্ট, অনলাইন মিডিয়া হুমড়ি খেয়ে পড়বে- কারা করছে এ কাজ? কারা আবার? ওই যে পাশের মাদরাসার ছাত্ররা...। মুহতামিম সাহেব পান খেতে খেতে নারী সাংবাদিককে টিভি সাক্ষাৎকার দেবেন— হ, ইগ্গা আমরাই খরতাছি মা-সকল! আমগো এগ্গা দায়িত্থ আছে না...!
বিদেশি মিডিয়াতেও তোড়জোড় পড়ে যাবে। স্বেচ্ছাশ্রমের মাধ্যমে পুরো একটি দেশের সাফাই চলছে? তাজ্জব ব্যাপার! বিবিসি, রয়টার্স, সিএনএন, আলজাজিরার সাংবাদিকরা পথের পাশে সাফাই করতে থাকা নাকে মুখে কালি-ঝুলি মাখা এক ছাত্রকে জিজ্ঞেস করবে— হোয়াই ইউ পিপল ডোয়িং দিস ক্লিনিং অপারেশন? ছাত্র লাজুক হেসে জবাব দিবে- জামিল ভাইরে জিগান, আমি কয়তারুম না! আমার শরম লাগতেছে!
হয়তো খুবই উচ্চাশা এটা। কিন্তু একেবারেই কি অসম্ভব? ঢাকা শহরে বড় বড় মাদরাসা আছে মিনিমাম ৩০টি। যেগুলোর কোনোটিরই ছাত্রসংখ্যা ১৫০০ (পনেরোশো)-এর কম নয়। ত্রিশ ইনটু পনেরোশো, সমান সমান ৪৫,০০০ পাঁচচল্লিশ হাজার! ছোট ছোট আরও শ’খানেক মাদরাসা মিলে ধরেন আরও ৫০,০০০ পঞ্চাশ হাজার। সবমিলিয়ে ঢাকার মোটামুটি এক লাখ মাদরাসাছাত্র এক শুক্রবার ভোরবেলা রাজধানীর পথে পথে নেমে পড়াটা মোটেও আকাশ কুসুম স্বপ্ন নয়।
বেফাকুল মাদারিস বা মাদরাসা কর্তৃপক্ষ যদি একবার দায়িত্ব নিয়ে মাদারাসাওয়ালাদের ডাক দেন, এমন মহৎ কাজে কেউই পিছনে থাকবে না। মাদরাসার আগ্রহ দেখে ঢাকার দুই মেয়র আনিসুল হক আর সাঈদ খোকন দৌড়ে আসবে হুজুরদের কাছে- হুজুর, ক্যামতে কী? পুরা তো ফকফকা কইরা ফালাইছেন। আমরা আছি আপনাগো লগে। খালি কন কী করতে অইবো!
সিটি কর্পোরেশন নেমে পড়বে কওমিয়ানদের পেছনে পেছনে।
এ কারণেই আমি বলছিলাম- কওমিয়ানরা সবসময় নিজেদের একক জাতিগোষ্ঠী মনে করে থাকেন। এই একক জনগোষ্ঠীকে পজেটিভলি এ্যাক্টিভ করতে পারলে আগামী দিনে তারাই হয়ে যাবে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার প্রধান হাতিয়ার। বাংলাদেশের সত্যিকারের অভিভাবক। বাংলাদেশে যদি সত্যিকারের কোনো সামাজিক বিপ্লব গড়ে ওঠে, তবে সেটা হবে কওমিয়ানদের হাত দিয়ে। সুদী মহাজন বা ব্র্যাক-আশা নামের রক্তচোষা এনজিওরা কখনো সমাজে বিপ্লব আনতে পারবে না।
শুধু একটু পজেটিভ চিন্তা। একটুখানি ভিন্ন উদ্যোগ। কওমি মুরব্বিদের একটু সমাজসংলগ্নতা।
৪০ লাখ মানুষের এ বৃহৎ জনগোষ্ঠী এক শপথে দাঁড়িয়ে গেলে, বাংলাদেশের চেহারা পাল্টিয়ে ফেলতে পারে যেকোনো সময়। দেশবাসী এ কথা ভালোভাবেই বিশ্বাস করে।
আরআর