শায়েখ আহমাদুল্লাহ
লেখক ও টিভি আলোচক, দাম্মাম সৌদি আরব
সফরে ছিলাম। গাড়িতেই পেয়েছি বেফাক মহাসচিবের মৃত্যুর সংবাদ। বেফাক আমার জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। জীবনে যা পেয়েছি যদি বলি, তার সবটুকুর গোড়াতেই বেফাকের অবদান- তবে খুব বেশি বলা হবে না।
এই বেফাকই আমাকে শিক্ষা জীবনে প্রতিযোগিতা শিখিয়েছে। বেফাকই আমার ক্যারিয়ারের ভীত রচনা করে দিয়েছে। বেফাকই আমাকে স্বপ্ন দেখিয়েছে। আর তাই নির্দ্বিধায় বলা যায়, আমার ওপরে উঠার সিঁড়ি এই বেফাক। সুতরাং আল্লাহর পর 'বেফাক' নামটার প্রতি যে শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা আমার রয়েছে তা বলাই বাহুল্য। আর সে কারণে বেফাক এর প্রাণপুরুষতূল্য-নিবেদিতপ্রাণ মহাসচিবের মৃত্যুতে যে কষ্ট পেয়েছি তা অন্য সাধারণ কোন আলেমের মৃত্যুর চেয়ে বেশিই ছিল।আল্লাহ তা'আলা তাঁকে আপন রহমতের চাদরে ঢেকে নিন।
কিছু কিছু ব্যক্তি নিজেকে চিবিয়ে জীবনের সবটুকু 'রস' প্রতিষ্ঠানের জন্য ঢেলে দেন। তাদের থেকে প্রতিষ্ঠানকে পৃথক করা সম্ভব হয় না। মরহুম আবদুল জব্বার রহিমাহুল্লাহ বেফাকের তেমনই এক জীবনোৎসর্গকারী মহাসচিব ছিলেন-একথা সবারই জানা। এজন্য বেফাক মানেই তিনি। তিনি মানেই বেফাক।
আমার ছাত্র জীবনে একবার গিয়েছিলাম বেফাকের ফকিরাপুলস্থ অফিসে। সনটা ছিল সম্ভবত: ১৯৯৮। প্রথমবারের মতো বেফাক পরীক্ষায় আংশগ্রহণ করে ভালো রেজাল্ট করেছি। জাতীয় পত্রিকায় (দৈনিক ইনকিলাবে) প্রথম নিজের নাম দেখেছি। শুনেছি গেজেটেও মেধা তালিকায় ছাপার অক্ষরে আমার নাম প্রকাশ হয়েছে। আর সেজন্য অচেনা ঢাকায় ঘুরে ঘুরে বেফাক অফিস আবিস্কার করেছি। উদ্দেশ্য ছিল সেই সালের বেফাক পরীক্ষার ফলাফলের গেজেট সংগ্রহ করা।
সেই প্রথম দেখেছি মরহুম আবদুল জাব্বার রহ. কে। সময়টা ছিল সকাল বেলা। অফিসের এক কোণে একটি কক্ষে মশারি টানা। তিনি পাশের টেবিলে বসে কাজ করছিলেন। তখনও আমি জানতাম না যে গেজেট নিতে টাকা লাগে। সেজন্য প্রস্তুতিও ছিল না। আর এও জানতাম না যে তিনিই এই প্রতিষ্ঠানটির মহাসচিব।
একজন তালিবুল ইলম বেফাক অফিসে যাওয়ার কথা নয়। এটা ছিল আমার নির্বুদ্ধিতা ও ছেলেমানুষি। সেদিন তিনি আমার মতো নিয়মভঙ্গ করা এক তালিবুল ইলমের সাথে যে সুন্দর ব্যবহার করেছেন এবং বিনা পয়সায় একটি গেজেট দিয়েছেন তা কোনদিনও ভুলবো না। এখনো সেই গেজেটটি আমি সংরক্ষণ করে রেখেছি।
এরপর বহুবার তাঁর সঙ্গে বসার সুযোগ হয়েছিল, কাছে থেকে দেখেছি অনেক। আমিত্ব জাহিরের এই যুগে তিনি ছিলেন মাটির মানুষ। অত্যন্ত বিনয়ী। বেফাক আজ যতদূর পৌঁছতে পেরেছে তাঁর জায়গায় অন্য কেউ থাকলে ততদূর যেতে পারতো বলে মনে হয় না আমার।
মৃত্যুর আগে বিগত কয়েক মাসের বেফাক সংক্রান্ত বিভিন্ন মিটিংয়ে বেশ বিষাদগ্রস্থ এবং ব্যথায় ভারাক্রান্ত মনে হতো তাঁকে। যেন সম্প্রতি বেফাক নিয়ে যা হচ্ছিল তা দেখে চরম মর্মপিড়ায় ভুগছিলেন তিনি।
মৃত্যু যদি কারো নিজের ইচ্ছায় হতো তাহলে আমি বলতাম, কিছু দিন ধরে তাঁর প্রাণের বেফাক নিয়ে যা চলছিল তাতে তিনি দু:খে, অভিমানে চলে গেছেন।
আল্লাহ তাঁর ভুলত্রুটি ক্ষমা করুন এবং তাঁকে জান্নাতের সুউচ্চ মাকামে স্থান দিন। তাঁর মতো বিনয়ী এবং নিবেদিতপ্রাণ ব্যক্তি বেফাকের ভাগ্যে যেন জুটে সেই দুআ রইলো রাব্বে কারীমের প্রতি।
আরআর
সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বেফাকের প্রতিনিধিদের সাক্ষাৎ, কী আছে চিঠিতে?