আমিন আশরাফ
শেষপর্যন্ত ইহুদি খ্রিস্টানদের সম্মিলিত শক্তি মুসলমানদের আত্মসম্মানে আঘাত করার জন্য এমন কৌশলকে একটা চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছে। ধর্মানুভূতিতে আঘাত করার জন্য ব্যঙ্গচিত্র থেকে শুরু করে এখন আজান পর্যন্ত চলে এসেছে।
মতপ্রকাশের স্বাধীনতার নাম করে তারা কদিন পর পর মুসলমানদের অনুভূতিতে আঘাত করে যাচ্ছে। এখন আজানের শব্দও যেন তাদের নাপাক কানে গলিত সিসা ঢালছে।
এরাই মুসলমানদের প্রথম কেবলা বায়তুল মুকাদ্দাস দখল করে রেখেছে। যদি এখনই বিশ্বের মুসলমান এর বিরুদ্ধে এক ও ঐক্যবদ্ধ না হয়, পরে মুসলমানদের কোনো কিছু করার থাকবে না। আর এই ইতিহাস বলার মতো কেউ থাকবে না যে, ঈসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু মুসলমানদের আজানের শব্দ সংখ্যা আরো কমানোর জন্য বিল পাস করে ইতিহাস হয়ে আছেন।
ইসরাঈলি গণমাধ্যম জানায়, আজান নিষিদ্ধ করার প্রস্তাব পাস হওয়ায় এর মাধ্যমে মাইকে আজান দেওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে।
ইতোপূর্বে নেতানিয়াহু তার এক ভাষণে কোনো সংখ্যা উল্লেখ না করেই বলেছেন, ইসরাঈলের প্রতিটি শহরের প্রধানদের কাছ থেকে আমার কাছে অভিযোগ এসেছে, জনসাধারণ মাইকে আজানের শব্দ সম্পর্কে অভিযোগ করছে, এর কারণে তাদের সমস্যা হচ্ছে। আর তাদের আবেদন রক্ষা করে মাইকে আজান বন্ধ করে দেওয়া আমার জন্য অবশ্য কর্তব্য।
আর এ অভিযোগের ভিত্তিতেই ঈসরাইল সরকার মাইকে আজান দেওয়ার ব্যাপারটা নিয়ে গভীরভাবে ভাবছে যে, মসজিদগুলোতে মাইকে আজানে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে হবে। যদিও এ বিল পাসের কারণে নিষেধাজ্ঞা আরোপটা সব ধর্মের ওপর প্রয়োগ হবে কিন্তু তাদের আসল উদ্দেশ্য যেভাবেই হোক মুসলমানদের অনুভূতিতে আঘাত হানা।
আজান নিষিদ্ধের বিরুদ্ধে প্রস্তাব পাসের মাধ্যমে অধিকৃত মসজিদুল আকসা এলাকার মসজিদগুলোতে এমনিতে মুসলমানরা মাইকে আজান দিতে পারে না। আজানবিরোধী বিল পাসের মাধ্যমে এটা যেন কাগজে কলমেও বৈধতা পেল। আর মাইকে আজান দিলেই মুয়াজ্জিনকে বিনা বাধায় গ্রেফতার করে ইসরাঈলি আদালতে পেশ করবে এবং জরিমানা করবে।
[caption id="attachment_17975" align="aligncenter" width="558"] ইসরায়েলের সংসদে আজান দিয়ে প্রতিবাদ[/caption]
ফিলিস্তিন গণমাধ্যমের মতে, এর মাধ্যমে ইসরাঈল নতুন করে একটা যুদ্ধের ফ্রণ্ট খুলছে। মাইকে আজান বন্ধ হবে না। মসজিদে আজান চলবেই।
সমগ্র আরব এবং ইসরাঈলের বসতির প্রায় সাড়ে ১৭ শতাংশ মুসলমান এ নিয়ে ইহুদিদের বিরুদ্ধে কঠোর সমালোচনা করছে।
আর ইসরাইলের থিঙ্ক ট্যাঙ্ক ডেমোক্রেটিক প্রতিষ্ঠান আজানের নিষেধাজ্ঞা আরোপের ঘোরবিরোধী।
থিঙ্ক ট্যাঙ্কের মুখপাত্র হাদ্দাদ ইয়াহইয়া বলেন, আজান নিষিদ্ধের উদ্দেশ্য আজানের আওয়াজ কমানো না, বরং আরও বেশি আওয়াজ সৃষ্টি করা, যাতে ইহুদি এবং আরবদের মধ্যকার সম্পর্ক আরো বেশি খারাপ হয়।
ইসরাইলের প্রতিটি সন্ত্রাসবাদী কর্মকা-ে আমেরিকা সব সময় তাদের সঙ্গ দেয়। প্রাচীনকালে ইসরাইল ছিল ইহুদিদের পবিত্র ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমি। তাওরাতের ভাষ্য অনুযায়ী, মহান আল্লাহ তায়ালা ইহুদিদের তিন উপজাতিকে ওই পবিত্র ভূমির ওয়াদা করেছিলেন। ৬৩৫ সালে বর্তমানের অধিকৃত বায়তুল মুকাদ্দাসসহ সমগ্র এলাকা আরবরা জয় করে নিয়েছিল। তারপর থেকে এর আগে ১৩০০ সাল পর্যন্ত এ এলাকা মুসলমানদের অধীনে ছিল। প্রথম ৬০০ বছর পর্যন্ত এ এলাকা উমাইয়া, আব্বাসি এবং ধর্মযোদ্ধারা বারবার দখলে নিয়েছিল।
১২৬০ সালে মামলুক রাজবংশ এ পবিত্র জমিন অধিকার করে নেয়। ১৫১৬ সালে উসমানিয়া খেলাফত এলাকা আবার জয় করে নেয়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে তুরস্কের পরাজয়ের পর ফিলিস্তিন বিট্রিশরা দখল করে নেয়। ১৯২০ সালে এ পবিত্র ভূমি আরবদের মাঝে বণ্টন করে দেয়া হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপে ইহুদি উত্থান শুরু হয়। তারা বিট্রিশ আধিপত্যবাদীদের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করে। আর সে সময় এ ইহুদিরা আন্দোলন শুরু করে যখন লাখো ইহুদি নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার্থে নিজেদের জন্য একটা আলাদা আবাসভূমির সন্ধানে ছিল।
১৯৪৭ সালের নভেম্বরে সাধারণ পরিষদে ২৯টি ইহুদি এজেন্সি প্রতিনিধিদের মাধ্যমে ইহুদিরা তাদের আলাদা আবাসভূমির নির্মাণে অনুমতি পায়। ইহুদিরা সেটা লুফে নেয়। কিন্তু আরবলীগ এবং ফিলিস্তিনের আরব উচ্চকমিটি সেটা প্রত্যাখ্যান করে। তখন যে সমস্যা তৈরি হয়েছিল আজও সে সমস্যার সমাধান হয়নি।
সেই সূত্র ধরে ইসরাঈল ফিলিস্তিনসহ পৃথিবীব্যাপী সন্ত্রাসী কর্মকা- চালিয়ে যাচ্ছে। আমেরিকাসহ কোনো রাষ্ট্রই তাকে বাধা দেয়ার মতো ক্ষমতা রাখে না। ফলে প্রতিনিয়ত লাখো ফিলিস্তিনি বেঘোরে প্রাণ হারাচ্ছে। আহত হয়ে আজীবনের জন্য পঙ্গুত্ব বরণ করছে।
বিট্রিশ সরকারের স্বার্থমূলক ফায়সালার জন্য কাশ্মীর এবং ফিলিস্তিনের লাখও মানুষ আজ হতাহত হচ্ছে।
জাতিসংঘে এটা উপস্থাপন করা না করা সমান কথা। মুসলমানদের বিষয়ে তাদের দ্বি-চারিত্রিক মনোভাবে কখনো পরিবর্তন আসবে না। জাতিসংঘ নামকাওয়াস্তে একটা সংঘ সেখানে মুসলমানদের পক্ষে কোনা আবেদন-নিবেদন কোনোদিন কার্যকারিতার মুখ দেখে না।
ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতকারী ব্যঙ্গচিত্র থেকে শুরু করে এখন তারা আজানে পর্যন্ত হাত দিয়েছে। আজান নিষিদ্ধের বিল পাস করে আমাদের চেতনাহীন বোধে বারবার আঘাত করে যাচ্ছে। কিন্তু আফসোস, শত আফসোস যে, আত্মসম্মানবোধটা আমাদের ভেতর থেকে চলে গেছে।
মুসলিম জাতিকে গাফলতের ঘুম থেকে কে জাগাবে? আল্লামা ইকবালের ভাষায় বলতে হয়-
পোশাকে-আশাকে তুমি খ্রিস্টান
সভ্যতায় তুমি হিন্দু না মুসলমান
যা দেখে লজ্জা পায় ইহুদিরাও
পাকিস্তানের জিও নিউজ উর্দুতে প্রকাশিত জাবের সাঈদ বদর এর কলাম অবলম্বনে
আরআর