বেফাক মহাসচিবের শেষ ইচ্ছা । ঢাকার মগবাজারের হলি ফ্যামিলি হাসপাতালের বিছানায় জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে রয়েছেন বেফাকের মহাসচিব মাওলানা আব্দুল জব্বার জাহানাবাদী। মহান এই বটবৃক্ষের শেষ ইচ্ছা ঢাকার কাজলায় বেফাকের জমিতেই হবে তার সমাধী।দীর্ঘ বছর তিলে তিলে গড়ে তোলা আপন প্রতিষ্ঠানটিকে মৃত্যুর পরও আপন করে রাখতে চেয়েছেন মাওলানা আবদুল জব্বার। কওমি নেতৃত্বশীল আলেমরা কী পারবে তার এই চাওয়ার মর্যাদা দিতে? বীজ থেকে বটবৃক্ষ হওয়া মানবের কর্মকে স্মরক হিসাবে ধরে রাখতে? বেফাকের ইতিহাসে এই মানুষটি থাকনা চিরকাল আবদ্ধ হয়ে। এ বিষয়ে কথা বলেছেন দেশেল চিন্তাশীল দুই আলেম।
ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন
অধ্যাপক, ওমরগণী কলেজ চট্টগ্রাম
বেফাকের মহাসচিব আমাদের কাছে একটি আরজি জানিয়েছেন। তার মনের চাওয়া যেন তাকে বেফাকের জমিতে দাফন করা হয়। এটি পূরণ করা আমাদের দায়িত্ব। একজন মানুষের শেষ চাওয়া পূরণ করতে হয়। মাওলানা আবদুল জব্বার জীবনের দীর্ঘ সময় দিন রাত পরিশ্রম করেছেন এই বেফাক নিয়ে। বেফাকের উচ্চ অবস্থানে আসার পেছনে তার অবদান মোটাদাগে আমাদের সামনে রয়েছে।
একজন মানুষের মৃত্যুর পর তো মাত্র সাড়ে তিন হাত জায়গা রাখেন। এটা বেফাকের জন্য কোনো ব্যাপার নয়। তিনি বেফাককে বিশাল জায়গার মালিক করে দিয়েছেন। তার জন্য এতটুকু জায়গা পাওনা। বরং এটি আমরা পূরণ করতে পারলে আমাদেরই ফায়দা। আমরা সাধারণ তো কারো অবদান স্বীকার করতে চাই না। সারাজীবন যা আদায় করে নেয়ার তা নিয়ে নেই। কিন্তু তিনি মৃত্যু বরণ করলেই তার সবকিছু বিস্মৃত হই। এটি তো কারো কাম্য নয়।
মাওলানা আবদুল জব্বার একজন নির্মোহ নিরহঙ্কারী মানুষ। আমাকে বেশ স্নেহ করতেন। বেফাকে গেলে বা কোথাও দেখা হলে এগিয়ে আসা, সম্মানে কথা বলা এগুলো তার আদত। আল্লাহ তার অন্তিম ইচ্ছা পূরণ করুক আমরা এটাই চাই।
মুহাম্মদ যাইনুল আবিদীন
শিক্ষা সচিব, জামিয়াতুল উলুমিল ইসলামিয়া মোহাম্মদপুর ঢাকা।
১৯৭৮ সালে যখন বেফাকের সূচনা তখন থেকেই প্রতিষ্ঠানটির পেছনে লেগে আছেন মাওলানা আবদুল জব্বার। এবং আজ হাসপাতালের বেডে শুয়ে থাকা অবস্থাতেও তিনি বেফাকের সঙ্গেই আছেন। তার আত্ম শরীর মিশে আছে বেফাকের সঙ্গে। সুতরাং তার অন্তিম ইচ্ছে অনুযায়ী বেফাকের জমিতে তার কবর হোক এটা আমি মনে প্রাণে চাই।
বেফাকে সবচেয়ে বেশি যে অবদান রেখেছেন তিনি মাওলানা আবদুল জব্বার। বেফাকের বর্তমান ভালো সময়ে শুধু নয় তিনি লেগে আছেন যখন কিছুই ছিল না। বেফাকের ভালো কোনো অফিস ছিল না, খাবার ছিল এমনকি কোনো টাকা পয়সাও ছিল না। সেই সময়ও তিনি বেফাককে আগলে রেখেছেন এবং এটি কিভাবে আরো সম্প্রসারিত হয় তার ফিকির করেছেন। এটি করতে গিয়ে তিনি নিজের ও পরিবারের জন্য কিছুই করতে পারেনি। সুতরাং কওমি মাদরাসার এই মূলকেন্দ্র আজ যিনি তৈরি করে গেলেন তার সামান্য চাওয়া যেন অবশ্যই পূরণ হয়।
অনেক মাদরাসাই এমন আছে যেখানে যেখানে প্রতিষ্ঠাতাদের কবর দেয়া হয়েছে। যেখানে প্রতিদিন মানুষ আসে তাকে স্মরণ করে। কিন্তু মাওলানা আবদুল জব্বার তো বেফাক ছাড়া আর কিছু করেননি। তার ধ্যান জ্ঞান ছিল এই বেফাক। আমার জানা মতে ঢাকায় বড় আলেমদের মধ্যে কেবল কাজী মু’তাসিম বিল্লাহ এবং মাওলানা আবদুল জব্বারের কেবল কোনো জায়গা জমি নেই। সুতরাং মৃত্যুর পর সামান্য একটু জায়গা তার প্রাপ্য।
মতামত নিয়েছেন: রোকন রাইয়ান