মাওলানা আতিকুল্লাহ আতিক
‘আতর’ শব্দটাতেই কেমন যেন আরাম আর সুখ জড়িয়ে আছে। আতর হলো ফুটফুটে শিশুর মতো! দেখলেই আদর করতে ইচ্ছে হয়। আতরের শিশিও দেখলেই হাত আর মন নিশপিশ করতেই থাকে! একছিলিম লাগিয়ে নিই না!
নবীজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঠিকই আমাদের মনের কথা জানতেন। এটা ঠিক, তিনি মনের দিকে চেয়ে কোনও বিধান দিতেন না। আল্লাহর ইশারাতেই সবকিছু করতেন। ইসলামের বড় বড় বিষয়গুলোতেই একটা ‘ব্যষ্টি’ ব্যষ্টি ভাব আছে। নামাজ পড়তে গেলে জামাত জরুরি। কুরবানি করতে গেলে, গোশত অন্যদের মাঝে বিলিয়ে দেয়া ভাল! একা একা থাকা ও আত্মচিন্তায় অনুক্ষণ ডুবে থাকা ইসলামের মানশা নয়। ইসলামে বলে আমরা সবাই এক দেহের মতো বাঁচবো।
জুমু‘আ অর্থ? জমায়েত। গরিবের ঈদের দিন। ধরা যাক কোথাও বসে আছি। দলবেঁধে। এমন সময় কেউ একজন এলো। সাথে সাথে ছড়িয়ে পড়লো এক অপার্থিব সুবাস! মনে কেমন লাগবে? যত কাঠখোট্টা আর নিরসই হোক, একটু হলেও মনে রঙ লাগবে! এ তো গেলো স্বাভাবিক অবস্থা! . গরম কাল। ভ্যাপসা তাপে সবাই জবজবে হয়ে আছে। ফ্যানের বাতাস কটু গন্ধ নাকে এনে আছড়ে ফেলছে। কিছু বলাও যাচ্ছে না, সওয়াও যাচ্ছে না। এমন মুহূর্তে নাকের কাছে একটা ফুল ধরলে কেমন লাগবে? . আমরা যখন মসজিদে, জুমা পড়তে যাই, একসাথে অনেক মানুষ জমায়েত হয়। নফল পড়ি। তিলাওয়াত করি। বয়ান শুনি। সাথে যদি নাকের আশেপাশে সুগন্ধি বাতাসের আনাগোনা থাকে? ইবাদতে বাড়তি মনোযোগ আসে না?
নবীজি বলেছেন: حُبِّبَ إِلَيَّ مِنَ الدُّنْيَا النِّسَاءُ وَالطِّيبُ، وَجُعِلَ قُرَّةُ عَيْنِي فِي الصَّلاَةِ দুনিয়াতে নারী ও সুগন্ধি আমার কাছে প্রিয় করে দেয়া হয়েছে। আর নামাযের মাঝে আমার প্রশান্তি সৃষ্টি করে দেয়া হয়েছে (নাসায়ী)।
নবীজির কাছে ‘আতর’ প্রিয়! আমার কাছে কেন প্রিয় হবে না? নবীজির সব সুন্নাত পালন করতে না পারি, এ-সুন্নাতটা পালন করতে কোনও কষ্ট আছে? হাঁ, টাকা খরচার একটা ব্যাপার আছে! কিন্তু একটা সুন্নাত পালনের তুলনায় ‘টাকাকড়ি’ কি খুবই গুরুত্বপূর্ণ কিছু?
আতর কেন ব্যবহার করা হয়? নিজের ভালো লাগার জন্যে। অন্যের ভালো লাগার জন্যে। অন্যের ভালো লাগাটা কখন হবে? যখন অন্যের সাথে মিশতে যাবো তখন। জুমু‘আর দিনই হলো একসাথে জমায়েত হওয়ার দিন। তাই এই দিন আতর ব্যবহার করার মাহাত্ম্য বহুগুণ বেড়ে যায়: إِنَّ هَذَا يَوْمُ عِيدٍ، جَعَلَهُ اللَّهُ لِلْمُسْلِمِينَ، فَمَنْ جَاءَ إِلَى الْجُمُعَةِ فَلْيَغْتَسِلْ، وَإِنْ كَانَ طِيبٌ فَلْيَمَسَّ مِنْهُ، وَعَلَيْكُمْ بِالسِّوَاكِ আল্লাহ জুমাবারকে মুসলমানদের জন্যে ঈদের দিন বানিয়েছেন। জুমার আগে গোসল করে নেয়া চাই। আর ‘সুগন্ধি’ থাকলে, একটু লাগিয়ে নেয়া উচিত। আর তোমরা অবশ্যই মিসওয়াক করবে! (ইবনে মাজাহ)।
নবীজি জুমার দিন আতর ব্যবহার করাকে কতোটা গুরুত্ব দিয়েছেন, আরেকটা হাদীস পড়লে বোঝা যাবে: الْغُسْلُ يَوْمَ الْجُمُعَةِ عَلَى كُلِّ مُحْتَلِمٍ، وَالسِّوَاكُ، وَأَنْ يَمَسَّ مِنَ الطِّيبِ مَا يَقْدِرُ عَلَيْهِ، وَلَوْ مِنْ طِيبِ أَهْلِهِ জুমাবারে প্রাপ্তবয়স্কদের মিসওয়াক করে, গোসল সেরে নেয়া উচিত। সম্ভব হলে একটুখানি সুবাস ব্যবহার করে নেয়া। (নিজের না থাকলে) স্ত্রীর ‘ফর ওম্যান’ আতর থেকে হলেও একটুখানি লাগিয়ে যাওয়া ভালো!
নবীজি কী ঘরোয়া সুরে কথা বলে গেছেন! নিজের শিশিটা শেষ, সমস্যা নেই! ড্রেসিং টেবিলের ড্রয়ার খুলে বা ভ্যানিটি ব্যাগ থেকেই আজকের জন্যে চালিয়ে দাও! পরের সপ্তাহের জন্যে Perfumance তো আছেই! চিন্তা কি! আতর একদম পকেটে এসে সেঁধোবে!
আরআর