ওয়ালি উল্লাহ সিরাজ
‘এটা ইসলামী টাওয়ার। সারা বাংলাদেশে ইসলামি বই এখান থেকেই বিলি হয়। অথচ এখানে একটা নির্ধারিত নামাজের স্থান নেই এবং অজুরও খুব ভালো একটা ব্যবস্থা নেই। বিষয়টা ভাবতেই খারাপ লাগে। আমি মাঝে মাঝেই ইসলামি বিভিন্ন বই কেনার জন্য এখানে আসি। কিন্তু নামাজের ব্যবস্থার এই অনিয়ম আমাকে ভীষণ মর্মাহত করে।’ বাংলা বাজারের ইসলামী টাওয়ার নিয়ে এমই বলছিলেন এশিয়া ইউনিভার্সিটির মনজুর আহসান নামের একজন শিক্ষার্থী।
ফরিদাবাদ মাদরাসার আল-আমিন নামের আরেক শিক্ষার্থী বলেন, এখানে বই কিতাব কিনতে আসা বেশিরভাগই কওমি’র ছাত্র শিক্ষক। এখানে নামাজের এতো অব্যবস্থাপনা সত্যিই হতাশাজনক।
বাংলা বাজারের ইসলামী টাওয়ার। সারা দেশে সকল ইসলামি বই কিতাব এখান থেকেই সেল হয়। ভেতরে ঢোকার পর গন্ধ আসবে আতরের। টুুপি পাঞ্চাবিতে মনে হবে কোনো সম্মেলন বুঝি অনুষ্ঠিত হবে আজ। কিন্তু এটা শুধু একদিনের নয়, এখানকার প্রতিদিনের চিত্র।
২০০৪/০৫ সালের দিকে আনুষ্ঠানিকভাবে এই টাওয়ারের যাত্রা শুরু। টাওয়ারের বেশিরভাগ ব্যবসায়ীই হচ্ছেন কওমি পড়ুয়া। ইসলামি বই কিতাব সংগ্রহের একটি নির্ভরযোগ্য স্থান হয়ে গেছে এই ইসলামী টাওয়ার। সুনাম ছড়িয়েছে সারা দেশে। তবে এখানে এলে ক্রেতাদের যে ভোগান্তিতে পড়তে হয় তা হলো মসজিদ। আশে পাশে কয়েকশ গজের মধ্যে কোনো মসজিদ নেই। থাকলেও এখানকার যে অলিগলি সেটার ভেতর নতুন ক্রেতাদের মসজিদ খোঁজা মানে পুকুরে সুই খোঁজা। আর আজকাল অধিকাংশ বড় বিল্ডিংয়েই যেখানে নামাজের জন্য আলাদা রুমের ব্যবস্থা রয়েছে সেখানে ইসলামী টাওয়ারে এমনটি না থাকা বিস্ময়েরই সৃষ্টি করে। এ কারণেই ইসলামী টাওয়ার হিসেবে একটি নামাজের জন্য আলাদা রুমের দাবি হয়ে উঠেছে ক্রেতা বিক্রেতা সবার।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নামাজের সময় হলে বিল্ডিংয়ের ফ্লোরেই চিপা গলিতে পাটি বিছিয়ে নামাজ আদায় করেন সবাই। যারা এই জামাতে নামাজ ধরতে পারেন না তাদের আর নামাজ পড়ার সুযোগ থাকে না।
এই বিষয়ে মাকতাবাতুল হেরার মুফতি হাবিবুল্লাহ মেসবাহ আওয়ার ইসলামকে বলেন, নামাজের জন্য নির্ধারিত স্থান না থাকাটা আমাদের জন্য একটা বড় দুঃখের বিষয়। আমাদের পাশের কম্পিউটারের একটা মার্কেট আছে, সেখানে দু একজন আমাদের মত ইসলমি লোক থাকতে পারেন কিন্তু বেশিরভাগ লোকই হচ্ছে সাধারণ মানুষ। অথচ সেখানে নামাজের জন্য নির্ধারিত একটা স্থান আছে।
তিনি বলেন, প্রথম আমরা মুসলিম হিসাবে আমাদের কোন কাজ করতে হলে সবার আগে নামাজের কথা অবশ্যই মাখায় রাখতে হবে। এই বিষয়ে আমরা একটা সময় অনেক চেষ্টা করেছি কিন্তু মালিক পক্ষের থেকে তেমন কোন সাড়া পাইনি। তাছাড়া এখন দোকান মালিকেদের সংগঠনটি খুব একটা সংগঠিত নয় যার কারণে এই বিষয়ে আর তেমন কোন কাজ হয় না।
একই বিষয়ে গাউছিয়া পাবলিকেশন্সের আতিকুল ইসলাম আওয়ার ইসলামকে বলেন, নামাজের প্রয়োজনীয়তাকে তো আর অস্বীকার করা যাবে না। তবে আমাদের এখানে বাথরুম ও অজুর স্থানের প্রয়োজনীয়তা খুবই বেশি। নামাজ পড়ার জন্য আরো অনেক জায়গা আছে। আমাদের এখান থেকে যদি পবিত্রতা অর্জন করতে পারে তাহলে যে কোন জায়গাতেই নামাজ পড়তে পারবে। সুতরাং এই বিষয়ের প্রতি খুবই গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন।
তবে মাকতাবাতুল আশরাফের বিক্রেতা আবদুল মুমিন জানালেন, বিল্ডিংয়ের সাত তলায় নামাজের জায়গা রয়েছে। এখানে নামাজের কোনো ভোগান্তি নেই। নির্দিষ্ট সময়ের বাইরে যারা নামাজ পড়তে চান তাদের জন্য কী ব্যবস্থা আছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আশে পাশে অনেক মসজিদ আছে সেগুলোতেই পড়তে হবে।
বিষয়টি নিয়ে টাওয়ারের কর্তৃপক্ষ কামরুল হাসান মল্লিকের সঙ্গে কথা বললে তিনি বলেন, প্রথমত বেশির ভাগ দোকানই বিক্র হয়ে গেছে তাই এখন আর নামাজের জন্য নির্ধারিত স্থান করার সুযোগ নেই। তাছাড়া আমি ইসলাম বিষয়ে যা জানি তা হলো, আমাদের নবীজি সবাইকে মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়তে বলেছেন। এছাড়া মসজিদে নামাজ পড়লে ২৭ গুণ বেশি সাওয়াব পাওয়া যায় তাই আমরা চাই না মানুষকে এই সাওয়াব থেকে মাহরুম করতে।
তবে বিল্ডিংয়ের সাত তলায় অবস্থিত মাদরাসার পরিচালক মাওলানা মাহফুজুর রহমান নামাজের আদালা জায়গার কথা অস্বীকার করে বলেন, এখানে সাত তালায় নামাজের জন্য আলাদা জায়গা রয়েছে। সেখানে ভালো ব্যবস্থাও রয়েছে। কিন্তু যারা মসজিদের দাবি করেন তারা উপরে উঠতে চান না। তারা চাচ্ছেন তিন তলাতেই আলাদা ব্যবস্থা করতে কিন্তু তিন তলার সব দোকান ভাড়া হয়ে গেছে এখন তো এগুলো সরিয়ে ব্যবস্থা করা সম্ভব না।
সাত তলায় উঠার মতো ব্যবস্থা রয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, টাওয়ারে একটা লিফট রয়েছে তবে বর্তমানে সেটি ত্রুটির কারণে বন্ধ।
সবার পক্ষে সিড়ি বেয়ে সাত তলায় উঠে নামাজ পড়া সম্ভব কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, হ্যাঁ এটা একটু কষ্টসাধ্য, তবে যারা নামাজের আলাদা জায়গা চাচ্ছেন তারা আসলে লিফটটা ঠিক করে দেয়ার দাবি করতে পারেন।
আরআর
আরো পড়ুন
দেওবন্দ মাদরাসা’র ৩০ কোটি রুপির বাজেট ঘোষণা
চালু হলো কওমি শিক্ষা কমিশনের সরকারি অফিস