শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪ ।। ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
জমিয়ত সভাপতি মাওলানা মনসুরুল হাসানের ইন্তেকালে খেলাফত মজলিসের শোকপ্রকাশ কাল ১০ ঘণ্টা গ্যাস থাকবে না যেসব এলাকায় রোজায় বাজার সহনশীল রাখার চেষ্টা করা হবে: বাণিজ্য উপদেষ্টা মাওলানা মনসুরুল হাসান রায়পুরীর ইন্তেকালে বিএনপি মহাসচিবের শোক রাষ্ট্রপতি নির্বাচনসহ যেসব সুপারিশ সংস্কার কমিশনের বাংলাদেশিদের সুখবর দিলো ইতালি, পুনরায় ভিসা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হাসিনা ও তার দোসরদের পুনর্বাসনে কোনো সাফাই নয়: সারজিস মাওলানা মনসুরুল হাসান রায়পুরীর ইন্তেকালে সিলেট মহানগর জমিয়তের শোক পিকনিকের বাসে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে ৩ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীর মৃত্যু দাবি পূরণে ৭ দিনের আল্টিমেটাম ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকদের

নাসিরনগরে হিন্দুদের উপর হামলা: স্থানীয় প্রশাসন কর্তব্য অবহেলার জন্য দায়ী

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

b-baria5আওয়ার ইসলাম: ৩০ অক্টোবর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর ও মন্দিরে হামলার ঘটনায় গঠিত পুলিশ সদর দপ্তর ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া পুলিশের গঠিত দুটি তদন্ত কমিটিই তদন্তে স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশের গাফিলতির প্রমাণ পেয়েছে। শনিবার দুটি কমিটির প্রধানই ডেইলি স্টার পত্রিকাকে জানিয়েছেন, প্রশাসন এবং পুলিশ দক্ষতার সঙ্গে এবং সঠিকভাবে সক্রিয় হলে এই হামলার ঘটনা ঘটতো না। রসরাজ দাস নামের এক যুবকের কথিত ফেসবুক স্ট্যাটাসকে কেন্দ্র করে ধর্মান্ধ একটি গোষ্ঠি হিন্দুদের বাড়িঘরসহ ১৭ টি মন্দিরে হামলা করার একদিন পর এই কমিটি দুটি গঠন করা হয়। ফেসবুক পোস্টে ‘মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত’ দেওয়ার এক মামলায় রসরাজকে গ্রেফতার করে কারাগারে প্রেরণ করা হয়। পুলিশের অতিরিক্ত উপ-মহাপরিদর্শক (চট্টগ্রাম অঞ্চল) সাখাওয়াত হোসেনকে প্রধান করে চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে পুলিশ সদর দপ্তর। অন্যদিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইকবাল হোসেনকে চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটির প্রধান করে জেলা পুলিশ দপ্তর থেকে আরো একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এ ছাড়া হামলার পর ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসকের অফিস থেকেও অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সামসুল হককে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রথম দুটি তদন্ত কমিটিকে ৭ কার্যদিবসে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়। অন্য কমিটিকে ১০ কার্যদিবস সময় দেওয়া হয়। একটি সূত্র থেকে জানা যায়, সবগুলো কমিটিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে স্থানীয় প্রশাসন এবং পুলিশের কোনো গাফিলতি আছে কিনা, অথবা তারা পরিস্থিতি সামাল দিতে ব্যর্থ হয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখতে। ঘটনার কারণ এবং এর পেছনে কোনো পরিকল্পনাকারী আছে কিনা সেটাও খতিয়ে দেখতে বলা হয়েছে। সাখাওয়াত হোসেন বলেন, “তদন্তে আমরা প্রমাণ পেয়েছি যে ওই ঘটনায় স্থানীয় প্রশাসন এবং পুলিশ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি।” তিনি বলেন স্থানীয় প্রশাসনের উচিত ছিল এই ঘটনা যাতে না ঘটে তার ব্যবস্থা নেওয়া, কিন্তু তারা সেটা করতে ব্যর্থ হয়েছে। দু-এক দিনের মধ্যেই প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে বলে তিনি জানিয়েছেন। ঘটনার সময় নাসিরনগর থানার ওসি আব্দুল কাদিরের ভূমিকার ব্যাপারে তিনি বলেন, তাঁর বিষয়টিতে অধিক গুরুত্ব দেওয়া উচিত ছিল। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা চৌধুরী মোয়াজ্জেম হোসেন দুটি ইসলামিস্ট গোষ্ঠিকে সমাবেশ করার অনুমতি দেওয়ার ব্যাপারে মতামত চেয়ে স্থানীয় থানাকে অবগত করা উচিত ছিল। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোয়াজ্জেমকে পরে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে বদলি করা হয়।

স্থানীয় অনেকে ডেইলি স্টার পত্রিকাকে জানিয়েছেন, তৌহিদী জনতা ও আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের ডাকা পরের দিনের সমাবেশ নিয়ে ২৯ অক্টোবর থেকেই উত্তেজনা বিরাজ করছিল। কিন্তু আইন শৃঙ্খলা বাহিনী অথবা প্রশাসন বিষয়টিকে গুরুত্ব দেয়নি। তারা অভিযোগ করে বলেন, ফেসবুক পোস্টের প্রতিবাদে স্থানীয় জনতাকে উত্তেজিত করে তুলতে সকাল থেকেই কয়েক ঘন্টা যাবত বিভিন্ন মসজিদ থেকে ডাকা হচ্ছিল। কিন্তু এইসব ধর্মান্ধ ব্যক্তিদের নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য কোনো উদ্যোগ স্থানীয় প্রশাসন বা পুলিশ গ্রহণ করেনি। ব্রাহ্মণবাড়িয়া পুলিশের গঠিত কমিটির প্রধান ইকবাল হোসেনও বলেন, তার কমিটিও ঘটনায় পুলিশ এবং স্থানীয় প্রশাসনের গাফিলতির প্রমাণ পেয়েছেন। ১২ তারিখ কমিটির প্রতিবেদন দাখিল করার কথা। তিনি বলেন, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সঙ্গে কথা না বলে মৌখিক অনুমতি দিয়ে ইউএনও দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন। যদি তিনি অনুমতি দেওয়ার আগে বিষয়টি নিয়ে পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে আলাপ করতেন তাহলে এই ঘটনা এতদূর যেত না। এই হামলার পেছনে উদ্দেশ্য এবং ইন্ধনদাতাদের চিহ্নিত করা গেছে বলে তিনি দাবি করেন। কিন্তু তদন্তের স্বার্থে তা প্রকাশ করা যাচ্ছে না বলে জানান।

ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুল কাদিরের ঘটনা নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার বিষয়ে তিনি বলেন, তার উচিত ছিল উর্ধতন কর্মকর্তাদের তাৎক্ষণিক বিষয়টি জানানো। ওসি অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েরন করতে ব্যর্থ হয়েছেন বলেও তিনি জানান। এই ভারপ্রাপ্ত কর্মকত্যাকে পরে প্রত্যাহার করা হয়।

ইকবাল আরো বলেন, ঘটনার সময় তিনি কেবল এক প্লাটুন পুলিশ মোতায়েন করেন এবং পরে আরো ৬০ জন পুরিশ মোতায়েন করা হয় যা মোটেও যথেষ্ট ছিল না। ওদিকে জেলা প্রশাসক রেজাউর রহমান জানিয়েছেন, জেলা প্রশাসনের গঠিত তদন্ত কমিটি অচিরেই প্রতিবেদন করবে।
সূত্র : ডেইলি স্টার

এফএফ


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ