আওয়ার ইসলাম: হজ এজেন্সিগুলোর অনিয়ম, হাজিদের তালিকা দিতেও গড়িমসি ৩০ অক্টোবরের মধ্যে কোন এজেন্সি থেকে কতজন হজে গিয়েছিলেন এবং নির্ধারিত সময়ে কতজন ফিরে এসেছেন, তাদের বিস্তারিত তথ্য আশকোনা হজ অফিসে জমা দিতে বলা হলেও এখনও সে তালিকা পায়নি ধর্ম মন্ত্রণালয়। কবে নাগাদ ৪৮৩টি হজ এজেন্সি হাজিদের এই তালিকা ধর্ম মন্ত্রণালয়ে জমা দেবে তাও জানে না কেউ। নতুন করে সময় বাড়ানো না হলেও ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকেও এ তালিকা পাওয়ার কোনও জোর উদ্যোগ নেই।
ধর্ম মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রত্যেক হজ এজেন্সিকে হজ লাইসেন্স নম্বর, হজ এজেন্সির নাম, প্রাপ্ত ও অপ্রাপ্তবয়স্ক জমাকৃত মুয়াল্লিম ফি’র সংখ্যা, সৌদি আরব থেকে সংগৃহীত বারকোডের মোট সংখ্যা, মোট প্রেরিত হজযাত্রীর সংখ্যা (প্রাপ্ত, অপ্রাপ্তবয়স্ক ও শিশু), ব্যর্থ হজযাত্রীর সংখ্যা এবং ফেরত আসা হজযাত্রীর সংখ্যাও উল্লেখ করতে বলা হয়েছিলো। কিন্তু তাদের কাছ থেকে সাড়া পাওয়া যায়নি।পরিচালকের দায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারী হজ অফিসার আবদুল মালেক বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, অনেকে এখনও বিষয়টি জানেন না তাই হয়তো সবাই দেয়নি। অনেকে তালিকাটি এখনও তৈরি করছেন তাই হয়তো দেরি হচ্ছে। কেউ কেউ এখনও সৌদি আরবে অবস্থান করছেন তাই দিতে পারেনি।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, মোট ৪৮৩টি হজ এজেন্সির মধ্যে আমরা অর্ধেকের কিছু বেশি এজেন্সি থেকে তালিকা পেয়েছি, বাকিটাও পেয়ে যাবো। তালিকা জমা দেওয়ার জন্য ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত সময় বেধে দেওয়া হয়েছিলো। সময় বাড়ানো হয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি জানান, সময় বাড়ানো হয়নি।
তবে, প্রতিবছরের মতো এবারও হজ কার্যক্রমে অংশ নেওয়া বেসরকারি এজেন্সিগুলোর বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্ত করছে ধর্ম মন্ত্রণালয়। বিভিন্ন এজেন্সির ব্যবস্থাপনায় মক্কা ও মদিনায় অবস্থানরত হাজিদের লিখিত অভিযোগ এবং সংশ্লিষ্ট স্থান পরিদর্শনের মাধ্যমে মন্ত্রণালয়ের হজ প্রশাসনিক দলের সদস্যরা এ তদন্ত কাজ পরিচালনা করছেন। সব হজযাত্রী দেশে না ফেরা পর্যন্ত, এমনকি দেশে ফেরার পরও সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ খতিয়ে দেখে দোষী এজেন্সির বিরুদ্ধে জরিমানাসহ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে।
আশঙ্কা করা হচ্ছে এবারের হজ শেষ করে অন্তত একহাজার হাজি দেশে ফেরেননি। হজ শেষ করে দেশে না ফেরা হাজির সংখ্যা সৌদি আরব সর্বোচ্চ দুই শতাংশ পর্যন্ত অনুমোদন করে। সেদিক থেকে বাংলাদেশ চমৎকার স্থানে রয়েছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
দেশে না ফেরা এই একহাজার হাজির কারণে বাংলাদেশ বিব্রত না হলেও জানা গেছে, অনেক এজেন্সি হয়তো ৫০ জন হাজি পাঠিয়েছেন, সেই ৫০জনই আসেনি। আপত্তি এখানেই। এমন এজেন্সির সংখ্যাও কম নয় বলেও অনুমান করা হচ্ছে। এসব এজেন্সি হজের নামে আদম পাচার করেছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। এসব এজেন্সি খুঁজে বের করতেই সরকারের এই উদ্যোগ বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট একজন যুগ্মসচিব। এ কারণেই অনেক এজেন্সি তাদের পাঠানো এবং ফিরে আসা হাজির তালিকা দিতে গড়িমসি করছে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে হাবের (হজ এজন্সি অব বাংলাদেশ) সভাপতি ইব্রাহিম বাহার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘হাজিদের তালিকা তৈরি হচ্ছে। ফেরত আসাদের তালিকা করতে সাধারণত বিমানবন্দরের সহযোগিতা প্রয়োজন হয়। ঢাকার হযরত শাহজালাল বিমান বন্দর হয়ে ফেরত আসাদের তালিকা পাওয়া গেলেও সিলেট ও চট্টগ্রাম বিমানবন্দর হয়ে যে হাজিরা দেশে ফিরেছেন, তাদের তালিকা পেতেই কিছুটা দেরি হচ্ছে। ওই দুই বিমানবন্দর থেকে তালিকা পেলেই অল্পদিনের মধ্যে এ তালিকা প্রণয়ন করা সম্ভব হবে।
ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়, ব্যবস্থাপনা সুষ্ঠু ও সুন্দর করতে ব্যাপক উদ্যোগ গ্রহণ করে ধর্ম মন্ত্রণালয়। এজন্য মন্ত্রণালয়ের সচিব আবদুল জলিলের নেতৃত্বে একটি হজ প্রশাসনিক দল সৌদি আরবে যান। ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমানও সরাসরি হজ কার্যক্রম তদারকি করেন। হজের আগে ও পরে হজ কার্যক্রমে জড়িত সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেন মন্ত্রী। এসময় সততার সঙ্গে হজযাত্রীদের সেবায় কাজ করার জন্য এজেন্সিগুলোর প্রতি আহ্বান জানান অধ্যক্ষ মতিউর রহমান। মন্ত্রণালয়ের বিশেষ উদ্যোগে অন্যবারের চেয়ে হজ ব্যবস্থাপনা সুষ্ঠু ও সুন্দর হয়েছে বলে জানিয়েছেন অনেক হাজি।
উল্লেখ্য, বরাবরের মতো কিছু এজেন্সির বিরুদ্ধে হাজিদের নানা দুর্ভোগের অভিযোগ এবছরও উঠেছে। কিছু এজেন্সি হাজিদের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী মক্কা-মদিনায় বাসা ভাড়া করেনি। হেরেম শরিফ থেকে তুলনামূলক দূরে ও নিম্নমানের বাসায় হাজিদের থাকার ব্যবস্থা করায় সংশ্লিষ্টদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়। তবে অন্য বারের তুলনায় এবার অভিযোগের পরিমাণ কম বলে জানা গেছে। এ ব্যাপারে লিখিত অভিযোগ পেলে তা তদন্ত করে দোষী এজেন্সির বিরুদ্ধে শাস্তি দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে মন্ত্রণালয়।
সূত্র মতে, এবছর বাংলাদেশ থেকে সরকারি ও বেসরকারি উভয় ব্যবস্থাপনায় ১ লাখ ১ হাজার ৮২৯ জন (ব্যবস্থাপনা সদস্যসহ) পবিত্র হজ পালন করেছেন। এর মধ্যে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ৪২টি ও সৌদি এয়ারলাইন্সের ৬২ ফ্লাইটে তারা দেশে ফেরেন। এবার সৌদি আরবে মোট ৬৬ বাংলাদেশি হজযাত্রী মারা গেছেন। তাদের মধ্যে ৪৯ জন পুরুষ ও ১৭ জন নারী রয়েছেন।
চলতি বছর হজ শেষ করে কতজন হাজি দেশে ফিরে এসেছেন তার হিসাব এখনও দেয়নি হজ এজেন্সিগুলো। হজ করতে গিয়ে কতজন সৌদি আরবে রয়ে গেছেন সরকারের কাছে সে হিসাবও নেই। সরকারের পক্ষ থেকে ধর্ম মন্ত্রণালয় বেসরকারি হজ এজেন্সিগুলোর কাছে হজযাত্রীর হিসাব চেয়েও পায়নি।