আওয়ার ইসলাম: বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে চুরি হওয়া অর্থের আরো ১৫ মিলিয়ন ডলার আগামী দিন কয়েকের মধ্যেই ফেরত পাবে বাংলাদেশ। ফিলিপাইনের আদালত অতি দ্রুত এ অর্থ বাংলাদেশকে ফেরত দেয়ার নির্দেশ দেয়ার পরপরই দেশটির সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।
অবশিষ্ট অর্থ উদ্ধারের বিষয়ে আলোচনা করতে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবিরের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল চলতি নভেম্বরেই ম্যানিলা যাচ্ছে। কারণ অবশিষ্ট অর্থ কোথায় গেছে ফিলিপাইনের সরকার তদন্ত করে তা খোঁজ করতে পেরেছে বলে দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংককে জানানো হয়েছে। বৃহস্পতিবার ঢাকায় নির্ভরযোগ্য কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য।
বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সঙ্গে এক রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন। বৈঠকে সুপ্রিমকোর্টের বিশিষ্ট আইনজীবী আজমালুল হোসেন কিউসি, ফিলিপাইনে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত পদে মনোনীত আসাদ আলম সিয়াম ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অনুবিভাগের মহাপরিচালক মঞ্জুরুল করিম খান চৌধুরীও উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক সূত্রে জানা যায়, রিজার্ভের টাকা ফিরিয়ে আনার বিষয়ে অগ্রগতি সম্পর্কে পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে অবহিত করেন গভর্নর। এ সময় গভর্নর জানান, ফিলিপাইনের একজন ক্যাসিনো ব্যবসায়ী তার কেসিনোতে এক রাতে নির্ধারিত লেনদেনের চেয়ে ১৫ মিলিয়ন ডলার বেশি পাওয়ায় সেই অর্থ দেশটির কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দিয়েছেন। তারপর ফিলিপাইনের আদালত রায় দিয়েছেন যে, এই অর্থ বাংলাদেশের রিজার্ভ থেকে চুরি যাওয়া অর্থের অংশ। ফলে ওই ১৫ মিলিয়ন ডলার বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভে ফেরত দেয়ার নির্দেশ দেন ফিলিপাইনের আদালত।
ফিলিপাইনের কর্তৃপক্ষ এই অর্থ নিউইয়র্কে ফেডারেল রিজার্ভের অ্যাকাউন্টে কিংবা ঢাকায় বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভে সরাসরি পাঠাবে। আর এই ফেরত পাওয়ার প্রক্রিয়ায় এখন আর কোনো বাধা নেই এবং এ অর্থ কয়েক দিনের মধ্যেই বাংলাদেশ ব্যাংক পেয়ে যাবে। তবে অবশিষ্ট অর্থ ফিরিয়ে আনার বিষয়ে ফিলিপাইনে বাংলাদেশ দূতাবাসের সহযোগিতার নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
নির্ভরযোগ্য সূত্রমতে, বৈঠকে গভর্নর জানিয়েছেন, অবশিষ্ট অর্থ কোথায় গেছে ফিলিপাইনের সরকার তদন্ত করে তার সন্ধান পেয়েছে। চুরি যাওয়া অর্থ উদ্ধারের ব্যাপারে ফিলিপাইন সরকার বাংলাদেশ ব্যাংককে খুবই সহযোগিতা করছে বলে গভর্নর জানান। পালেমো কনভেনশনের অধীনে বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকসমূহ এ ধরনের ক্ষেত্রে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধে সহযোগিতা করে থাকে। ফিলিপাইনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক তার অধীনেই বাংলাদেশ ব্যাংককে সহযোগিতা করছে।
আইটি সিস্টেম হ্যাক হয়ে গত বছরের ডিসেম্বরের কোনো একসময়ে নিউইয়র্কে অবস্থিত ফেডারেল রিজার্ভের বাংলাদেশ ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট থেকে অর্থ চুরি হয়। এই অর্থের ৮১ মিলিয়ন ডলার ফিলিপাইনের রিজাল ব্যাংকের মাধ্যমে উত্তোলন করা হয়। তারপর এ বিষয়টি বাংলাদেশ ব্যাংক প্রকাশ না করলেও চলতি বছরের ফেব্র“য়ারিতে ফিলিপাইনের ইনকোয়ারার পত্রিকা এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশের পর তা জানাজানি হয়। মানি লন্ডারিংয়ের ঘটনায় ফিলিপাইনের সরকার আন্তর্জাতিকভাবে বেশ চাপের মুখে পড়ে।
তারপর ফিলিপাইন বেশ তৎপর হয়ে ওঠে। ফিলিপাইন ছাড়াও শ্রীলংকার একটি ব্যাংকের মাধ্যমেও রিজার্ভের অর্থ চুরির চেষ্টা করা হয়। তবে হ্যাকিংকালে ভুল করায় অর্থ সরিয়ে নেয়া সম্ভব হয়নি।
এ বি আর