আওয়ার ইসলাম: প্রায় ৪০টি ইমাম সংগঠন মিলে সারাবাংলা সংখ্যালঘু যুব ফেডারেশনের সভাপতি মোঃ কামরুজ্জামানের আহ্বানে মঙ্গলবার হাজারো ইমাম জড়ো হয়েছিলেন কলকাতার রাজপথে।
সবার উদ্দেশ্য ছিল ইমাম, মুয়াজ্জিনদের ভাতা বৃদ্ধিসহ ইউনিফর্ম সিভিল কোড অর্থাৎ শরিয়ত কানুনের বাইরে অভিন্ন ‘দেওয়ানী বিধি’ কেন্দ্র সরকার দ্বারা জোর করে চাপিয়ে দেওয়ার অপপ্রয়াসকে রুখে দেয়া।
ইমামরা সমাবেশ থেকে জানিয়েছেন তারা কোনো মতেই মুসলিম পারিবারিক আইনের বদলে অভিন্ন দেওয়ানী বিধি মেনে নেবেন না। ভারতে মুসলমানদের জন্য পৃথক পারিবারিক আইনের বদলে অভিন্ন দেওয়ানী বিধি চালু করা যেতে পারে কী না, তা নিয়ে যে বিতর্ক চলছে, তার মধ্যেই আজ কলকাতায় এই ইমাম সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গের সব জেলা থেকে কয়েক হাজার ইমাম আজ কলকাতায় এসেছিলেন রাজ্য সরকারের কাছে তাদের ভাতাসহ বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা আদায় এবং রাজ্যের ওয়াকফ সম্পত্তির সুস্থ ব্যবস্থাপনার দাবী নিয়ে। কিন্তু সেই সব দাবি ছাপিয়ে উঠে এল সব ধর্মের মানুষের জন্য অভিন্ন দেওয়ানী বিধি চালু করা নিয়ে যে বিতর্ক চলছে ভারতে বেশ কিছু দিন ধরে, সেই প্রসঙ্গ।
সভায় বিশিষ্ট ব্যাক্তিদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সভার আহ্বায়ক এবং সারা বাংলা সংখ্যালঘু যুব ফেডারেশনের সভাপতি মোঃ কামরুজ্জামান, তৃণমূল সাংসদ সুলতান আহমেদ, কলম পত্রিকার সম্পাদক ও তৃণমূল সাংসদ আহমাদ হাসান ইমরান, আইনজীবী ইদ্রিস আলি, এটিএম রফিকুল হাসান, কলকাতা রেড রোডের ঈদগাহ মাঠের ইমাম ক্বারী ফজলুর রহমান, আইনজীবী আব্দুল হান্নান এবং সুখনন্দ সিং আলুওলিয়া। এছাড়াও বিভিন্ন জেলা থেকে ৪০টির বেমি ইমাম সংঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
সভায় প্রায় সব বক্তাই কেন্দ্রে নরেন্দ্র মোদির উপর কথার বান ছুড়ে দেন। ব্যাতিক্রম নন তৃণমূলের তিন সাংসদও। একদিকে যেমন আহমেদ হাসান ইমরান মূখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির প্রশংসা করতে গিয়ে অপমানিত হন এই বলে যে চাকরিতে মুসলিমদের শতাংশ বেড়েছে। এই দাবি করতেই মিডিয়া ব্যারিকেটের পিছন থেকে আওয়াজ ওঠে মিথ্যা কথা, সঙ্গে সঙ্গে গলা মেলান কিছু উপস্থিত জনতা। তাদের বসিয়ে দেওয়া হলে প্রসঙ্গ বদলান আহমেদ হাসান ইমরান। অন্যদিকে সুলতান আহমেদ সরাসরি তৃণমূলের প্রচার করে আগামী লোকসভা নির্বাচনে মোদিকে পরাজিত করার জন্য মমতার নেতৃত্বে যদি কোন ফ্রন্ট তৈরি করা হয় তাহলে সেই ফ্রণ্টকে অসহযোগিতা করার আহ্বান জানান ইমামদের। প্রয়োজনে তিনি নিজে দায়ীত্ব নিয়ে মূখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের সঙ্গে কথা বলে ওয়াকফ সম্পত্তি উদ্ধারে সচেষ্ট হবেন এবং ইমাম–মুয়াজ্জিন ভাতা বৃদ্ধির চেষ্টা করবেন বলে জানান।
সভায় ইউনিফর্ম সিভিল কোড, নাজিব আহমেদ নিখোঁজ, সিমি সদস্য হত্যা, আখলাক হত্যা, রোহিত ভেমুলা সুইসাইড, জেএনইউ ক্যম্পাসের ছাত্রদের উপর অত্যাচার, ঘর ওয়াপসিসহ ইত্যাদি বিষয়ে বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি করা হয়।
সভার আহ্বায়ক মোঃ কামরুজ্জামান বলেন, ‘ইডেন গার্ডেন ও রাজভবনসহ অর্ধেক কলকাতা ওয়াকফ সম্পত্তি। অবিলম্বেই তার তদন্ত করা হোক। মূখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী ৫ বছর আগে ইমাম–মুয়াজ্জিনদের ভাতা ঘোষণা করেন। তখন বাজার দরে আলুর দাম ছিল ৬ টাকা কেজি আর এখন ২০ টাকা কেজি তাহলে সেই ২৫০০ টাকা ইমাম ভাতা এবং মুয়াজ্জিনদের ১০০০ টাকা পুরানো ভাতায় কীভাবে চলতে পারে।’ তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, ‘রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির মাইনে ২ লাখ ৫০ হাজার থেকে বেড়ে ৫ লাখ হতে পারে তাহলে ইমাম–মুয়াজ্জিনদের ভাতা কম থাকবে কেন? আমরা রাজ্য সরকারের টাকা থেকে ভাতা চাইনা, আমাদের পৈতৃক সম্পত্তি উদ্ধার করে দিল্লির ন্যায় ভাতার ব্যাবস্থা করা হোক।’
সূত্র: বিবিসি ও টিডিএন