আব্দুল্লাহ বিন রফিক
হাজরে আসওয়াদ চুমু দেওয়া যেখানে পুরুষের জন্য সুকঠিন সেখানে নারীদের চুমু দেওয়ার চিন্তা করা বেশ জটিলও বটে। এ বিষয়টার প্রতি লক্ষ্য রেখে সৌদি আরবের শূরা কাউন্সিল নারীদের জন্য আলাদা সময় নির্ধারণের চিন্তা-ভাবনা করছেন। নারীদের জন্য হাজরে আসওয়াদ চুমু দেওয়ার জন্য দিনের নির্ধারিত ৩ টি শিফটের প্রস্তাব পেশ করা হয়েছে। যার প্রতি শিফট হবে ২ ঘন্টা করে। সে হিসেবে ২৪ ঘন্টার মধ্যে ৬ ঘণ্টা হাজরে আসওয়াদ বা কালো পাথর উন্মুক্ত থাকবে কেবল নারীদের জন্য।
সৌদি শূরা কাউন্সিলের ইসলামী বিষয়ক বিশেষ কমিটির প্রধান ড. মূযী দাগিছারের সিদ্ধান্ত অনুসারে নারীদের সুবিধার্থে এই পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। শীঘ্রই ভোটের মাধ্যমে একে বাস্তবে রূপ দেওয়া হবে।
বায়তুল্লাহর দক্ষিণ-পূর্ব কোণে স্থাপিত ২০ সে.মি. আয়তনের হাজরে আসওয়াদ থেকে বায়তুল্লাহর তাওয়াফের সূচনা হয়। তাওয়াফের ৭ম চক্করও শেষ হয় এই হাজরে আসওয়াদ বা কালো পাথরে এসে।
প্রথমে আব্দুল্লাহ বিন যুবায়ের রা. হাজরে আসওয়াদকে রূপার খোলসে আবদ্ধ করে স্থাপন করেছিলেন। সর্বশেষ ১৪২২ হিজরীতে সৌদি বাদশা ফাহাদ বিন আব্দুল আজিজ সুসজ্জিত স্বর্ণের খোলসে তা স্থাপন করেন। ইবনে আব্বাসের বর্ণনা মোতাবেক আল্লাহর রাসূল ইরশাদ ফরমান, হাজরে আসওয়াদ যখন জান্নাত থেকে নিয়ে আসা হয়েছিলো তখন এর বর্ণ ছিলো সাদা। আদম সন্তানের পাপ-পঙ্কিলতায় পরে তা কালো হয়ে গেছে। (তিরমিযি)
অন্য এক হাদিসে এসেছে, তাওয়াফের সময় হাজরে আসওয়াদ চুমু দেওয়া সুন্নাত। যদি চুমু দেওয়ার সুযোগ না হয় তাহলে হাত বা লাঠি ইত্যাদি ফিরিয়ে তাতে চুমু দেওয়া যেতে পারে। যদি তাও সম্ভব না হয় তাহলে বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার বলে হাত দিয়ে ইশারা করলেও তাতে সুন্নাত আদায় হয়ে যাবে। হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব রা. হাজরে আসওয়াদ চুমু দেওয়ার সময় পাথরকে লক্ষ্য করে বলেন, হে কালো পাথর! আমি জানি তুমি নিছক এক পাথরমাত্র, না পারো তুমি ক্ষতি করতে আর না পারো কারো উপকার করতে। তোমাকে চুমু দিতে রাসূলকে যদি আমি না দেখতাম তাহলে আমিও তোমাকে কোনোদিন চুমু দিতাম না।
ইবনে ওমরের বর্ণনায় আছে, হাজরে আসওয়াদ ও রুকনে ইয়ামানীতে চুমু দেওয়া পাপ মোচনের কারণ। (মুসনাদে আহমাদ)
হজ-ওমরায় আগত সকলের সাধ জাগে জান্নাতের সেই মহিমান্বিত পাথর চুম্বন করবে। কিন্তু ভিড় আর ঠেলা-ধাক্কার কারণে সে সাধ অপূর্ণই রয়ে যায়। এই হাজরে আসওয়াদ তথা কালো পাথরের চারপাশে ভিড়কে কেন্দ্র করে লোকেরা নিজেদের প্রাণ পর্যন্ত হারিয়েছে।
নারীদের জন্য হাজরে আসওয়াদে চুমু দেওয়া ছিলো খুবই বিপজ্জনক ব্যাপার। স্বাধারণত নারীরা হাজরে আসওয়াদ চুমু দেওয়ার অপূর্ণ স্বাধ মনেরটা মনে পুষেই গন্তব্যে ফিরতো। কিন্তু অধুনা সৌদি শূরা কাউন্সিল নারীদের জন্য এক শুভ বার্তা শোনাতে যাচ্ছেন এবং নারীদের জন্য সময় বেঁধে দিয়ে তাদের অন্তরের সেই সুপ্ত সাধ পূরণ করতে চলেছেন।
সূত্র: দৈনিক পাকিস্তান