হযরত মাওলানা মুফতী রূহুল আমীন সাহেব হাফিজাহুল্লাহ আমার প্রিয় উস্তাদ৷ হুজুর যখন পাকিস্তান থেকে পড়া-লেখা শেষ করে বাংলাদেশে ফিরে এলেন এবং আলমারকাযুল ইসলামীর চেয়ারম্যান হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন, কিন্তু তাদরীসের সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন না, তখন আব্বাজান হযরত শাইখুল হাদীস রাহিমাহুল্লাহ হযরত সদর সাহেব হুজুরেরএমন যোগ্য সাহেবজাদা তাদরীস থেকে আলাদা থাকবেন, এটা মেনে নিতে পারেননি৷ আর তাই হযরত রূহুল আমীন সাহেব হুজুরকে জামিয়া রাহমানিয়া নিয়ে আসলেন এবং দুটি সবক পড়ানোর দায়িত্ব হুজুরের যিম্মায় অর্পন করলেন৷ এটা একানব্বই-বিরানব্বইয়ের কথা৷
সৌভাগ্যক্রমে আমি এবং মাহফুজ ভাই (বর্তমানে জামিয়া রাহমানিয়ার পিরিন্সিপ্যাল) আমরা ভিন্ন ভিন্ন দুই জামাতে দুই সবক হুজুরের কাছে পড়লাম ৷ আমি পড়লাম উসূলুশশাশী আর নফহাতুল আরব আর মাহফুজ ভাই পড়লেন তিরমিযী শরীফ জিলদে সানী৷ আমরা তখন অনুভব করি, হুজুর কত মেধাবী আলেম৷ হুজুর আমাকে বাড়তি মহবব্বত করতেন বলে হুজুরের সাথে আমার অনেকটা বে-তাকাল্লুফীর সম্পর্ক ছিল৷ হুজুরকে এখনও সেরকই মহব্বত ও আযমত করি৷ হুজুরের সাথে দৃষ্টিভঙ্গীগত মতপার্থক্য থাকলেও মহব্বত ও আযমতে কোনো ত্রুটি নেই৷ বর্তমান সরকারের সাথে হুজুরের কৌশলপূর্ণ সুসম্পর্ক রয়েছে, এটাকে আমি আগা-গোড়াই সমর্থন করি৷ কেননা আমি বহু আগ থেকেই মনে করি দ্বীনের প্রয়োজনে কিছু কিছু ওলামায়ে কেরামের আওয়ামী লীগ-বিএনপি উভয় দলের সাথে যোগাযোগ ও সুসম্পর্ক থাকা প্রয়েজন৷ যেন যেই দলই ক্ষমতায় থাকে তাদের দ্বারা কিছু ভালো কাজ করানো যায় এবং তাদের ক্ষতির হাত থেকে ইসলামকে রক্ষা করা যায়৷ আমার কোনো কোনো কথায় কেউ কেউ ভুল বুঝেছেন৷ তারা আমার কথার মূল মর্ম উপলব্ধি করতে পারেননি৷ আমি সরকারের মনোভাব ও কৌশলের সমালোচনা করেছি, সরকার শুধু নিজেদের আস্থাভাজনদের দ্বারাই সব কিছু করাতে চাইছে এবং এমনই হয় সরকারগুলোর মনোভাব৷ তারা সব কাজে নিজেদের আজ্ঞাবাহী খুঁজে বেড়ায়৷
আস্থা হারাচ্ছে হজ্ব এজেন্সিগুলো, মানোন্নয়নে ৫ পরামর্শ
সে যাই হোক, গতকাল হযরত মুফতী রূহুল আমীন সাহেব হুজুরের সাথে সাক্ষাতে গেলাম৷ আগের রাতে দীর্ঘ জার্ণির পর সকালে একটু ঘুমুয়েই বেরিয়ে পড়তে হয়েছিল বিধায়, সকালের নাশ্তা করতে পেরেছিলাম না ৷ হুজুরের সাথে সালাম মুসাফাহা করেই সেই বে-তাকাল্লুফীর ভঙ্গিতে বললাম, নাশতা করিনি, ক্ষুধা লেগেছে৷ হুজুর নাশতা আনিয়ে খাওয়ালেন৷ এরপর তরুণ প্রজন্মের প্রতিনিধিত্বশীল উলামাদের সাথে নিয়ে হুজুরের সাথে বৈঠকে মিলিত হলাম৷ হুজুর আন্তরিকভাবে আমাদেরকে গ্রহণ করেছেন এবং খোলামেলা অনেক কথা বলেছেন৷ আমাদের বৈঠকের ঘরটা ছিল হুজুরের জামাতা সন্দ্বীপী হযরতের সাহেবজাদা মাওলানা এহসানুল্লাহ সন্দ্বীপীর হুজরা৷ ছেট পরিসর৷ স্বাভাবিক ভাবেই স্থান সংকুলানের অভাব ছিল৷ হুজুরের হাটুতে ওজর৷ হুজুর খাটে বসা ছিলেন আর আমি হুজুরের পায়ের কাছে বসেছি৷ উস্তাদের পায়ের কাছে বসেই আমি বেশি তৃপ্তি অনুভব করেছি৷ বিশ্বাস করেছি, এটাই আমার গৌরব৷ হুজুর আমার উস্তাদ৷ হুজুর হযরত সদর সাহেবের আওলাদ৷ আমাদের বাবা এবং অামরা পুরা খান্দানই তো এই দরবারের গোলাম! হযরত ওমর আহমদ সাহেব রাহিমাহুল্লাহ যত দিন হায়াতে ছিলেন, তাঁকেও এভাবেই মূল্যায়নের চেষ্টা করেছি৷ এখনো করছি এবং ভবিষ্যতেও করে যাব ইনশাআল্লাহ ৷ আমিই তো ছিলাম আমাদের ছয়জনের দলে সবচেয়ে সিনিয়র ৷ বাকিরা সবাই বয়সে আমার চেয়ে নবীন ৷ সুতরাং এ নিয়ে বিরূপ কোনো মন্তব্য করার সুযোগ আছে বলে আমি মনে করি না ৷
আরআর