সাবের চৌধুরী
২০ শতকের শুরু থেকে ১৯৫০ সাল পর্যন্ত সময়টি পুরো বিশ্ব অত্যন্ত জটিল একটি সময় পার করে। ১৯১৪ সালের দিকে ইউরোপজুড়ে বহুমুখী একটি মহাযুদ্ধ শুরু হয়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ নামে খ্যাত ১৯১৪ সালে শুরু হওয়া সে মহারণে মিত্রপক্ষে ছিল বৃটেন ফ্রান্স রাশিয়া। আর অক্ষশক্তিতে ছিল জার্মানি অস্ট্রিয়া-হাঙ্গেরি।
অটোমান সাম্রাজ্য তথা উসমানি খেলাফত বাধ্য হয়ে অক্ষশক্তির পক্ষ নেয়। এ সময়ে ইউরোপ তাবৎ মুসলমানের বিরুদ্ধে অনেকগুলো টার্গেট নিয়ে একটি জটিল মিশনে নামে। এ মিশনের নেতৃত্বে ছিল চতুর বৃটেন। তাদের সে মিশনের মূল টার্গেটগুলো ছিল-
১. ইউরোপ ও বৃটেনের দীর্ঘদিনের শত্রু উসমানি খেলাফতকে ধ্বংস করা। ২. উসমানি খেলাফতের রাজ্যগুলোকে নিজেদের মধ্যে ভাগ বাটোয়ারা করে নিজেদের সাম্রাজ্য বিস্তার করা। ৩. ইহুদিদের জন্য একটি নিরাপদ স্থায়ী দেশ প্রতিষ্ঠা করে তাদের সমর্থন, সম্পদ, বুদ্ধিকে নিজেদের ফেভারে নেওয়া। ৪. সমগ্র ইউরোপের জন্য হুমকি হযে দাঁড়ানো ইহুদিদের নিরাপদে অন্য কোন জাযগায় পাঠিয়ে ইউরোপকে ইহুদি মুক্ত করা। ৫. মুসলমানদের মুলভূমি মধ্য প্রাচ্যে ইহুদি বিষফোঁড়া তৈরি করে মুসলমানদের একটি স্থায়ী সমস্যার মধ্যে ফেলে রাখা।
এ মিশন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে তারা পরস্পর বিপরীতমুখী তিনটি চুক্তিতে আবদ্ধ হয়। এক. সাইকোস-পিকোট চুক্তি ১৯১৫-১৬ সালের শীতে বৃটেনের স্যার মার্ক সাইকস ও ফ্রান্সের ফ্রান্সিস জর্জেস পিকোট উসমানি খিলাফত পরবর্তী আরব বিশ্বকে ভাগ বাটোয়ারা করে কারা কোন অঞ্চল অধিকার করবে সে মর্মে একটি গোপন চুক্তিতে মিলিত হয়। ইহুদিদের বিষয়টি সামনে রেখে ফিলিস্তিনের ব্যাপারে কোন সিদ্ধান্ত না নিয়ে এটি মুলতবি রাখে। ইতিহাসে একে সাইকস-পিকোট চুক্তি নামে ডাকা হয়। দুই. আরব বিদ্রোহ বৃটেন ফ্রান্সের সাথে করা গোপন চুক্তিটি গোপন রেখেই মক্কার গভর্ণর শরীফ হুসেইন বিন আলীর সাথে আরেকটি গোপন চুক্তিতে মিলিত হয়। তাকে প্রতিশ্রুতি দেয়া হয় আরব ভূখণ্ড, ইরাক, ফিলিস্তিনসহ বিশাল এক একক আরব সাম্রাজ্যের অধিপতি করা হবে। এই বলে তার নেতৃত্বে উসমানি শাসনের বিরুদ্ধে আরব বিদ্রোহের সূচনা করে। এ বিদ্রোহ বাস্তবায়নের জন্য তারা আরব জাতীয়তাবাদের ভূয়া স্লোগান তোলে। শরীফ তার বাহিনী নিয়ে মক্কা মদীনাসহ হেজাজ ও তৎপার্শ্ববর্তী বিশাল এলাকা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে উসমানি বাহিনীকে হটিয়ে দেয়। তিন. বেলফোর ঘোষণা এদিকে ১৯ শতকের দিকে ইউরোপে ইহুদিদের জায়নবাদী আন্দোলনের সূচনা হয়। তাদের দাবি হল ইউরোপ ও রাশিয়ার ইহুদিদের জন্য ইউরোপের বাইরে একটি আবাসভূমি গড়ে তোলা। এ ক্ষেত্রে তাদের টার্গেট ছিল ফিলিস্তিন। তারা বৃটেনের কাছে এ ব্যাপারে সাহায্য চায়। তাদের এ আবেদন বৃটেনের স্বার্থ অর্জনের জন্য ছিল খাপের খাপ মমতজের বাপ। তাছাড়া বৃটিশ সরকারের ভিতরেও ইহুদিদের সহমর্মী অনেক কর্মকর্তা বিদ্যমান ছিল।
১৯১৭ সালের ২ নভেম্বর বৃটিশ পররাষ্ট্র সচিব আর্থার বেলফোর জায়োনিস্ট নেতা ব্যারণ রসথ চাইল্ডকে একটি চিঠি প্রেরণ করেন। সেখানে তিনি ফিলিস্তিনে একটি ইহুদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে বৃটিশ সরকারের সম্মতি ও সমর্থনের কথা ঘোষণা করেন। ইতিহাসে একেই বেলফোর ঘোষণা বলে ডাকা হয়।
১৯১৮ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধে অক্ষশক্তি পরাজিত হয়। সেই সাথে উসমানি খেলাফতের পতন ঘটে। এবং পৃথিবীর ইতিহাসে বেআইনীভাবে জবরদস্তিমূলক হিংস্র একটি ইহুদি রাষ্ট্রের পত্তন ঘটে। ক্রমান্বয়ে নিজেদের সংখ্যা বৃদ্ধি করে সুসংহত হয়ে ১৯৪৮ সালে ইহুদিরা আনুষ্ঠানিকভাবে সদম্ভে ইসরাইল ইহুদি রাষ্ট্রের ঘোষণা দেয়।
আজকের ইসরাইল হলো সে কুটচালের ফসল। সে থেকেই শুরু হয় শান্তিতে বসবাসকারী স্বাধীন শান্তিপূর্ণ ফিলিস্তিনের আকাশে দুর্যোগের ঘনঘটা। তুফান। রক্তের সয়লাব। গতকাল ২ নভেম্বর সে ঐতিহাসিক বেলফোর ঘোষণার কালো দিন। মুসলমানগণ, আপনারা কেমন আছেন? আপনাদের ফিলিস্তিন ভালো নেই!!
লেখক: শিক্ষক, জামিয়া কাসিমুল উলূম বাহুবল হবিগঞ্জ
আরআর
http://ourislam24.com/2016/11/03/%E0%A6%86%E0%A6%AB%E0%A6%97%E0%A6%BE%E0%A6%A8%E0%A6%BF%E0%A6%B8%E0%A7%8D%E0%A6%A4%E0%A6%BE%E0%A6%A8%E0%A7%87-%E0%A7%A8-%E0%A6%AE%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%95%E0%A6%BF%E0%A6%A8-%E0%A6%B8/