আওয়ার ইসলাম: ইরানের একজন প্রসিদ্ধ ধর্মীয় ব্যক্তি সাইদ তৌসি, যিনি দেশটির অন্যতম কোরান তেলাওয়াতকারী হিসেবে সুপরিচিত-তাঁর বিরুদ্ধে শিশু যৌন নির্যাতনের অভিযোগ ওঠার পর দেশটির মানুষ হতবাক হয়ে পড়েছে ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। কয়েকজন অভিযোগকারী জনসম্মুখে তাদের অভিযোগ প্রকাশের অভিনব পদক্ষেপ গ্রহণের পর ইরানজুড়ে এ নিয়ে ব্যাপক আলোড়ন উঠেছে।
যৌন নির্যাতনের শিকার শিশুরা ও তাদের পরিবারের সদস্যরা বিবিসি পার্সিয়ান সার্ভিসকে জানিয়েছের বিভিন্নভাবে সরকারি চ্যানেলের মাধ্যমে সুবিচার পেতে ব্যর্থ হয়ে তারা জনসম্মুখে এটি প্রকাশের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
৪৬ বছর বয়সী সাইদ তৌসি, ইরানের একজন অন্যতম ধর্মীয় ব্যক্তি যার দেশটির রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে দারুণ যোগাযোগ রয়েছে। বলা যায় ধর্মীয় ও রাজনৈতিক আভিজাত্য দুটোই রয়েছে তাঁর।
মি: তৌসির বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে যে তিনি ১০জন বালককে যৌন নির্যাতন করেছেন, এই বালকেরা সবাই তাঁর কাছে কোরান পড়তে ও শিখতে আসতো।
একজন অভিযোগকারী বিবিসিকে বলেছেন, জনসাধারণের জন্য যে গোসল-ঘর সেখানে প্রথম তাকে যৌন নির্যাতন করেন সাইদ তৌসি। সেই সময় ওই বালকের বয়স ছিল ১২ বছর।
"আমি আকাশ থেকে পড়েছিলাম, বুঝতে পারছিলাম না কী হচ্ছে। খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম, মনে হচ্ছিল আমি কাকে কী বলবো? কিছু বললে যদি দোষ আমার উপরেই এসে পড়ে। কিন্তু তারপরেই আমি দেখলাম যে তার অন্য ছাত্রদের সঙ্গেও এমন ঘটনা ঘটেছে। সুতরাং নিরব না থেকে যৌন হামলার ঘটনা প্রকাশের সিদ্ধান্ত নিলাম"-বলছিলেন ওই বালক।
তবে মি: তৌসির বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ উঠেছে সেগুলো আলাদা করে যাচাই করা সম্ভব নয় এবং অভিযোগকারীরা বলছে যে তারা ছয় বছর আগে সাইদ তৌসির বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছিল, মামলাটি আদালতেও উঠেছিল। সে কারণে মি: তৌসিকে আদালতের দ্বারস্থও হতে হয়েছিল।তবে মামলার কার্যক্রম বেশিদিন চলেনি।
দ্বিতীয় আরেকজন অভিযোগকারী বলছেন যে তারা যে সুবিচার পাবেন সেই আশা তারা ছেড়ে দিয়েছেন।
অন্যদিকে বিচার বিভাগের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, যথেষ্ট তথ্য-প্রমাণাদি না থাকায় অভিযোগ প্রমাণ করা সম্ভব হয়নি।
ইরানের মানুষেরা এ ধরনের সংবেদনশীল বিষয় নিয়ে জনসম্মুখে আলোচনায় একদমই অভ্যস্ত নয়।
আর শিশু যৌন নির্যাতনের এই অভিযোগের বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পর সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপক আলোড়ন চলছে, বিতর্ক চলছে।
একজন লিখেছেন "ইসলামিক কোনও দেশে এটা আরেকটা লজ্জাজনক ঘটনা। ধর্মের আড়ালে মানুষ হয়রানির শিকার হচ্ছে এবং এর দায় কেউ নিচ্ছে না"।
"হয়রানির শিকার যদি কোনও মেয়ে হতো তাহলে কর্তৃপক্ষ বলতো পোশাক ঠিকভাবে পড়েনি, সে বাধ্য করেছে এমনটা করতে। এবং এমন হতো যে তারা বলতো যৌন নির্যাতন নয় সম্পর্কটা দুপক্ষের সম্মতিতেই হয়েছে"-সোমায়েহ নামের এক ব্যক্তি এ মন্তব্য করেছেন সোশ্যাল মিডিয়ায়।
তবে মি: তৌসির পক্ষে একজন বিচারপতি আয়াতুল্লাহ সাদেক আমোলি কথা বলেছেন, যারা মি: তৌসির বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছেন তাদের 'অকৃতজ্ঞ মানুষ বলে বর্ণনা করেছেন তিনি। পাশাপাশি তিনি এটাও বলেছেন যেসব 'বিদেশি প্রচারমাধ্যম' এসব অভিযোগকারীদের সহায়তা করছে তাদের তিনি বিচারের কাঠগড়ায় দাড় করাবেন।
সূত্র: বিবিসি
এফএফ