সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪ ।। ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
চিকিৎসকরা বছরে দুইবারের বেশি বিদেশ যেতে পারবেন না ঢাকা থেকে ভাঙ্গা হয়ে খুলনায় গেলো পরীক্ষামূলক ট্রেন নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করবেন প্রধান উপদেষ্টা: প্রেস উইং ধর্মীয় মূল্যবোধ ও সাম্যের ভিত্তিতে সংবিধান রচনার আহ্বান নেপালে ফের কুরআন প্রতিযোগিতার আয়োজন করছে সৌদি আগামীকাল সংবিধান সংস্কার কমিশনে প্রস্তাবনা পেশ করবে ইসলামী আন্দোলন ‘আল্লামা আতহার আলী রহ. জীবন, কর্ম, অবদান’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন আগামীকাল হাজী ইমদাদুল্লাহ মুহাজিরে মক্কী রহ. : কে এই মহান ব্যক্তি হাজিদের স্বার্থ রক্ষায় সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ : ধর্ম উপদেষ্টা মহানবীকে সা. নিয়ে কটূক্তি করলে সংবিধানে শাস্তির বিধান রাখার প্রস্তাব পার্থের

হিলারি নির্বাচিত হলে মুসলমানদের জন্য ভালো হবে; তবে উল্টোটিও হতে পারে: রশীদ জামিল

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

rashid-jamil

রশীদ জামিল। একজন শক্তিমান লেখক, আলেম ও গবেষক। জন্ম সিলেটে। বর্তমানে নিউইয়র্কে বসবাস করছেন। লিখেছেন কা-মহিলা, আহাফি, জাঁতির চিপায় জাতি, বেচারী গণতন্ত্র, ধ্বংসের মিছিলে, জ্ঞান বিজ্ঞান অজ্ঞান ও নষ্ট রাজনীতির মতো পাঠকপ্রিয় অসংখ্য বই। সম্পাদনা করছেন সাহিত্য পত্রিকা সমীক্ষা। এছাড়াও তার পরিচালনায় সম্প্রচার হচ্ছে ‘কাওনাইন টিভি’।

আগামী ৮ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন। নির্বাচন উপলক্ষ্যে এখন বিশ্বের চোখ সেই দিকে। কী হতে চলেছে কী হবে এসব নিয়ে হিসেব কষছেন সবাই। এসব ছাড়িয়ে আলোচনায় রয়েছে রিপাবলিকান দলের প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিতর্কিত বক্তব্য। মুসলিম ও অভিভাসীদের বিরুদ্ধে যে হুশিয়ারি তিনি উচ্চরণ করছেন এসব আগাম চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে সেখানকার মুসলিমদের। যদিও মিডিয়া বিশ্লেষণ অনুযায়ী জয়ের পাল্লা হিলারির দিকে ঝুঁকে আছে কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশের প্রেক্ষাপট কোন দিক থেকে কোনভাবে ঘুরে যায় তা আগাম চিন্তা করার অসম্ভব। এসব নিয়ে লেখক গবেষক রশীদ জামিলের সঙ্গে কথা বলেছে আওয়ার ইসলাম। যেখানে তিনি নির্বাচনসহ আনুসঙ্গিক বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন।

মার্কিন নির্বাচন নিয়ে এই মুহূর্তে মুসলিমরা কী ভাবছে?

চলমান নির্বাচন ইস্যুতে আমেরিকান মুসলমানদের ভাবনা মেইনস্ট্রিম ভাবনার সাথে খুব একটা ফারাক নেই। অন্যান্য বারের মতই মুসলমানদের ভাবনা। তবে বিজ্ঞজনেরা বলছেন, আমেরিকান মুসলমান ভোটাররা অন্যান্য যে কোনো সময়েরচে' এবারের নির্বাচন নিয়ে অধিক সচেতন।

নির্বাচন তো ৮ নভেম্বর। চলমান বলছেন কেনো?

আমেরিকার কন্সটিউশন অনুযায়ী প্রতি চার বছর পরপর নভেম্বর মাসে প্রেসিডেন্সিয়াল নির্বাচন হয়ে থাকে। তবে এখানকার ভোট গ্রহণের প্রক্রিয়া একটু ভিন্ন। নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক তারিখের আগেই ভোট দেয়ার সুযোগ করে দেয়া হয়। কোনো স্টেইটে একমাস আগে আবার কোনো স্টেইটে পনেরো দিন আগেই ভোট দিয়ে দেয়া যায়। এটাকে বলাহয় Absentee ballot। ভোটের নির্ধারিত দিন কারো কাজ আছে অথবা সে ঐদিন ভোটকেন্দ্রে গিয়ে টাইম ওয়েস্ট করতে চাচ্ছে না। সে চাইলে আগেই সুবিধামত দিনে ভোটটি দিয়ে দিতে পারে। বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে ইতোমধ্যে অনেকেই তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করে ফেলেছেন। তবে প্রার্থীদের কে কত ভোট পেলেন, সেটা নির্ধারিত তারিখ তথা ৮ তারিখের আগে প্রকাশ করা হবে না। ৮ তারিখ ভোটদান প্রক্রিয়া সমাপ্ত হলে একসাথে ফলাফল ঘোষণা করাহবে।

বর্তমান প্রেসিডেন্ট মিস্টার বারাক ওবামার মেয়াদ আছে জানুয়ারি পর্যন্ত। এটাই এদেশের সাংবিধানিক নিয়ম। নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন নভেম্বরে। দুইমাস পর জানুয়ারিতে গিয়ে দায়িত্ব বুঝে নেন।

আরেকটি ইন্টারেস্টিং ব্যাপার হল, বারাক ওবামা রানিং প্রেসিডেন্ট। তাঁর দল থেকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন হিলারি। প্রেসিডেন্ট নিজেও হিলারির পক্ষে কাজ করছেন। প্রতিপক্ষ প্রার্থী রকমারি অভিযোগ উত্থাপন করলেও এটা নিয়ে কোনো প্রশ্ন তুলেননি। কারণ, এদেশের ভোটে ভোট জালিয়াতি অথবা ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিং এর কোনো চান্স নেই। প্রেসিডেন্ট হিশেবে নির্বাচনকে প্রভাবিত করবার কোনো ক্ষমতাই প্রেসিডেন্টের থাকে না। এটাই এখানকার নির্বাচনের একটি সৌন্দর্য।

ইন্টারেস্টিং প্রক্রিয়া। আচ্ছা কতজন প্রার্থী হয়েছেন এবার?

লাইম লাইটেড প্রার্থী তো দু'জনই। রিপাবলিকান পার্টি থেকে মিস্টার ডোনাল্ড ট্র্যাম্প এবং ডেমোক্রেট থেকে হিলারি ক্লিনটন। এছাড়া উল্লেখযোগ্য প্রার্থী হলেন নিউ ম্যাক্সিকো স্ট্রেইটের সাবেক গভর্নর লিবরেটারিয়ান পার্টির গ্যারি জনসন, গ্রীন পার্টি থেকে ড, গিল স্টেইন এবং কন্সটিউশনাল পার্টি অব ইউ এস থেকে মিস্টার ড্যারেল ক্যাসল। আরো অনেকেই প্রার্থী হয়েছেন এবারের নির্বাচনে।

এখানে আরেকটি তথ্য জানানো দরকার। আমেরিকায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী হবার জন্যে পঞ্চাশটি স্টেইটের প্রত্যেক স্টেইটে প্রার্থীর পক্ষে সমর্থনের একটা মিনিমার রিকুয়ারমেন্ট আছে। প্রার্থীর পক্ষে নির্ধারিত সংখ্যক সমর্থক থাকতে হয়। ভোট এবং ব্যালটের কাঠামো সেভাবেই বিন্যাস করা হয়ে থাকে। সে অনুযায়ী কমপক্ষে বিশটি স্টেইটে মিনিমাম সমর্থন আছে, এবারের নির্বাচনে হিলারি, ট্রাম্প ছাড়াও এমন পার্থী আছেন আরো ৫ জন। পাঁচটি বা তারও কম সমর্থনপোস্ট স্টেইট নিয়ে এবারের নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন আরো বিশজনের মত।

তার মানে কিছু প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন প্রায় অকারণেই?

একদম অকারণেও বলা যাবে না। কারণ হল আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে পদপ্রার্থী হওয়ার তালিকায় নাম লেখানো। মূল কারণ অবশ্য রাজনৈতিক। কোথাও কোথাও প্রতিপক্ষের কিছু ভোট নষ্ট করার উদ্দেশ্যেও কাউকে কাউকে নির্বাচনে দাঁড় করিয়ে দেওয়া হয়। অনেকটা বাংলাদেশি স্টাইল আর কি!

তবে এবারের নির্বাচনে প্রায় বিশ জনের মত প্রার্থী আছেন, ব্যালট পেপারে যাদের নামই থাকবে না। কারণ, আগেই জানিয়েছি মিনিমাম সংখ্যক জনসমর্থন ছাড়া প্রতিদ্বন্দ্বিতায় দাঁড়ালে ভোটারদের সামনে যাওয়া ব্যালট পেপারে তাদের নামই যুক্ত করা হয় না।

রিপাবলিকান পার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প কতটা বিপজ্জনক মুসলিমদের জন্য?

ট্রাম্প কতটা বিপজ্জনক, ব্যাপারটি এই দৃষ্টিকোন থেকে ব্যাখ্যা করার কিছু নেই। আমরা কথা বলছি আমাদের নিজস্ব ধারণার অ্যাঙ্গেল থেকে। আর আমেরিকা চলে তার নিজস্ব রাষ্ট্রনীতির আলোকে। প্রেসিডেন্ট পরিবর্তিত হলেই রাষ্ট্রনীতির আমূল পরিবর্তন হয়ে যায় না, যেমনটি হয়ে থাকে আমাদের বাংলাদেশে। আবার প্রেসিডেন্ট চাইলেই যা খুশি করতে পারেন না। আপনার জানা থাকবার কথা অভিবাসীদের বৈধতা প্রশ্নে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা অধ্যাদেশ জারি করার পরও আদালতের স্থগিতাদেশের কারণে সম্ভব হয়নি অদ্যাদেশকে আইন আকারে বাস্তবায়ন করার।

দ্বিতীয়ত, বাহ্যিক কথাবার্তা বা আচরণের উপর ভিত্তি করে ট্রাম্প-হিলারি কাউকেই বিপজ্জনক বা আপনজনক কিছুই বলা যাবে না। আসলে কথাহল, হিলারি-ট্রাম্প দুজনের মধ্যে মুসলমানদের জন্য কে বেশি নিরাপদ, প্রশ্ন সেখানে নয়। মুসলমানদের ভাবনায় আছে কে কম অনিরাপদ।

যুক্তরাষ্ট্র কিংবা অন্যান্য ধর্মের জন্যও কি ট্রাম্প বিপদজনক?

আগেই বলেছি কে কখন কাদের জন্য কতটা বিপজ্জনক হয়ে ওঠেন, সেটা এখনই আন্দাজের উপর ভর করে মন্তব্য করা ঠিক হবে না। অনেকেইন ধারণা করছেন, হিলারি নির্বাচিত হলে মুসলমানদের জন্য অনেক ভালো হবে। আদতে উল্টোটিও হতে পারে। আবার যারা ভাবছেন, ট্রাম্প যদি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হয়ে যান, তাহলে আমেরিকান মুসলমানরা অনেক বিপদে পড়ে যাবে। বাস্তবে তার উল্টোটিও ঘটতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রে এই মুহূর্তে মানুষের চিন্তা কী ট্রাম্পকে নিয়ে?

দেখুন, যুক্তরাষ্ট্রের মানুষ বাংলাদেশের মানুষের মত এতটা রাজনীতি-পাগল না। এখানকার মানুষ কাজ পাগল আর এনজয় পাগল। সোম থেকে শুক্র, পাঁচদিন ইনকাম করে দুইদিন খরচ করে। তাদের তো আর দেশে টাকা পাঠানোর কিছু নেই।

বিশেষ কারণ ছাড়া সরকার বা সরকারনীতি নিয়ে সাধারণ জনগণের কোনো মাথাব্যথা নাই। তবে নির্বাচন এলে স্বভাবতই লোকজন একটু রাজনীতিমুখো হয়। দল এবং প্রার্থী নিয়ে কথাটথা বলে। প্রার্থীরা সরসরি বিতর্কে জড়ান। মানুষ তাদের বিতর্ক শুনে। সিদ্ধান্ত নেয়।

এবারের নির্বাচনে মূল দুই প্রতিদ্বন্দ্বী ট্রাম্প এবং হিলারি, দু'জনকে নিয়েই বাজারে অনেক বিতর্কের ছড়াছড়ি। হিলারির ইমেইল বিতর্ক ট্যাকল দিতে হিলারিকে রীতিমত হিমশিম খেতে হচ্ছে। ট্রাম্পকে ঘিরে আছে নারীঘটিত বিতর্ক। দুজনেই আছেন বিব্রতকর অবস্থায়। অবশ্য এক্ষেত্রে বেফাস কথাবার্তা বলে ডোনাল্ড ট্রাম্প একটু বেশিই বিতর্কিত অবস্থানে আছেন। এমনটিই যুক্তরাষ্ট্রের মানুষের ভাবনা বলে আমার কাছে মনেহচ্ছে।

ট্রাম্পের নির্বাচিত হওয়ার সম্ভাবনা কত পার্সেন্ট?

আমি তো বলব ফিফটি পার্সেন্ট। কারণ যে বিষয়গুলোর কারণে ট্রাম্প বেশি বেকাদায় আছেন বলে অনেকের ধারণা, সেগুলো আমেরিকান কালচারে অতি আশ্চর্য হয়ে যাওয়া বা আকাশ থেকে পড়ে যাওয়ার মত কোনো ব্যাপার নয়।

প্রতিদিন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের জরিপ রিপোর্ট আসছে। কোথাও হিলারি এগিয়ে আছেন, কোথাও আবার ট্রাম্প। তবে শেষ হাসি হিলারিই হাসতে পারেন বলে পর্যবেক্ষক মহল মনে করছেন। অবশ্য এখানে ছোট্ট একটি 'কিন্তু' আছে। সেটি হল, আজ ২ নভেম্বর। চূড়ান্ত নির্বাচন ৮ তারিখ। দিন দশেক আগেও জয়ের পাল্লা ছিল হিলারির দিকে অনেক বেশি ভারি। বোদ্ধামহল ভাবছিলেন আমেরিকার ইতিহাসে এবারই বুঝি সর্বোচ্চ ভোটের ব্যবধানে প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন মিসেস হিলারি ক্লিনটন। কিন্তু শেষবেলায় এসে হিলারির ইমেইল ক্যালেংকারিকে নতুন রূপে সামনে নিয়ে আসছেন রিপাবলিকানরা। অবশ্য এখনো সামনে আছে পাঁচদিন। এই পাঁচদিনে হিসাব-কিতাব অনেক পালটে যেতে পারে।

হিলারির মুসলিম ও শরণার্থীদের প্রতি সহানুভূতিমূলক মনোভাব কি তাকে পরাজিত করবে বলে মনে করেন?

আমার মনে হয় না এগুলো নির্বাচনে মেজর কোনো প্রভাব ফেলবে। কারণ আমেরিকানরা জানে, এন্ট্রি মুসলিম কথাবার্তা যেমন ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাচনি কৌশলের একটা অংশ হতে পারে, ঠিক তেমনি মুসলিম সিম্পিতিও হিলারির নির্বাচনি কৌশল হয়ে থাকতে পারে।

ট্রাম্পের বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের জন্য তার দলের লোকের তারপ্রতি সমর্থন উঠিয়ে নেয়ার ঘোষণার কথা শোনা যাচ্ছে এগুলো কি বাস্তব না নির্বাচনী কোনো কৌশল?

কিছুটা সত্য। প্রায় ত্রিশজনের মত কংগ্রেসম্যান ও সিনেটর তাদের নিজ দলের প্রার্থী ট্রাম্প থেকে সমর্থন প্রত্যাহার করে নিয়েছেন বলে এখানকার মূলধারার সংবাদ মাধ্যমগুলো প্রকাশ করছে। উল্লেখযোগ্যদের মধ্যে আরো আছেন সাবেক বুশ সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী কলিন পাওয়েল, ২০১২'র নির্বাচনে বারাক ওবামার বিরুদ্ধে রিপাবলিকান পার্টি থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা জন ম্যাকেইন। তবে শেষ পর্যন্ত তাঁরা তাদের সিদ্ধান্তে অটল থাকবেন, নাকি দলীয় প্রার্থীর পক্ষেই ইউ টার্ন নেবেন, সময়ই জানে।

সাক্ষাৎকার নিয়েছেন রোকন রাইয়ান


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ