আওয়ার ইসলাম: সৈয়দ কামরুল সরোয়ারের আত্মজীবনী মূলক বই 'আমি কে বা কি সোনো ইয়ো' বইয়ের প্রকাশনা উৎসব করা হয়েছে মেসত্রের (ভেনিস) থিয়েটার কলবে মিলনায়তনে। ইতালিয় ভাষার এই বইটি লিখেছেন যৌথ ভাবে অত্তাভিয়া সালভাতোর এবং সৈয়দ কামরুল সরোয়ার।
লেখিকা অত্তাভিয়া সালভাতোরের সভাপতিত্বে এবং ভেনিস কমুনের (পৌরসভা) শিক্ষা কর্মকর্তা মারতা আনসেলমির উপস্থাপনায় প্রকাশনা উৎসবে প্রধান অতিথি ছিলেন, ভেনিস ইমিগ্রেশন অফিসের প্রধান কর্মকর্তা ড. জানফ্রংকো বোনেচ্ছো। উপস্থিত ছিলেন, ইউক্রাইন এসোসিয়েশনের সভানেত্রী তামারা এবং স্থানীয় বাংলাদেশি ও ইতালিয় কমিউনিটির বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ।
লেখক সৈয়দ কামরুল সরোয়ার বলেন, আমি ৩১ বছর যাবৎ ইউরোপে বসবাস করছি। বাংলাদেশ থেকে প্রথমে আসি জার্মানীতে, এর পর সুইজারল্যান্ড হয়ে ইতালিতে এসে থিতু হই। এই দীর্ঘ সময়ের মধ্যে অনেক কিছু দেখেছি। অনেক পরিবর্তন পরিবর্ধন, উত্থান পতন দেখেছি। আমি যখন ইতালিতে আসি তখন আমাদের কম্যুনিটি এত বড় ছিল না। শুধু আমাদের কম্যুনিটির কথা বলি কেনো, মোট অভিবাসীর সংখ্যাই ছিল অনেক কম। তখন প্রায় প্রতিদিন আমরা নানা প্রকারের সমস্যার মুখোমুখি হতাম। নতুন নতুন সমস্যাগুলোর সমাধান কি ভাবে পাবো, কোথায় গেলে পাবো কিছুই জানতাম না। বহু কষ্ট করে, মেহেনত করে আমারা আমাদের জায়গা করে নিয়েছি।
এই দীর্ঘ সময়ে যেমন ইতালিয়দের কাছ থেকে উদার সহযোগিতা পেয়েছি, তেমনি বর্ণবাদসহ নানা প্রকারের সামাজিক বৈশম্যও দেখেছি। তখন চাকরীর এত সংকট ছিল না, কিন্তু নতুন দেশ, নতুন ভাষা, নতুন চাকরী, সব মিলিয়ে সময়টা খুব একটা সহজ ছিল না। আমরা যে কষ্ট করেছি, যে ভাবে করেছি তা আমাদের বর্তমান প্রজন্ম কোনো দিনই উপলব্ধি করতে পারবে না। তারা এখন সব কিছু যতোটা সাজানো গোছানো দেখে এমনটা ছিল না। তাদের জন্য আজকের সুবিধাজনক অবস্থা সৃষ্টি করতে আমাদের বহু কষ্ট করতে হয়েছে, ত্যাগ করতে হয়েছে।
সৈয়দ কামরুল সরোয়ার বলেন, আমি বাংলাদেশের একটা মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে এসেছি। সেখানেও দেখেছি মানুষকে বেঁচে থাকার জন্য, জীবিকার জন্য কতো সংগ্রাম করতে হয়। সেই অনুপ্রেরণা থেকেই আমি নিজেকে সামাজিক কর্মকান্ডে জড়িয়ে ফেলি। আমাদের প্রবাসী কম্যুনিটির উন্নয়তে, অামাদের প্রজন্মদের উন্নয়তে কাজ শুরু করি। শুধু বিদেশেই নয়, একই সাথে বাংলাদেশেও কাজ শুরু করি। বিশেষ করে মানুষের শিক্ষার দিকে মনোযোগ দেয়ার চেষ্টা করি। প্রবাস জীবনে যা আয় করেছি তার বড় একটা অংশ বাংলাদেশে শিক্ষা এবং সামাজিক উন্নয়নে ব্যায় করেছি। মানুষের দারিদ্রতা দুর করতে কাজ করেছি।
প্রধান অতিথি জানফ্রাংকো বোনেচ্ছো বলেন, এই বইটি একটা দলিল। আমাদের সমাজ, আমাদের ইতিহাসের দলিল। আমাদের এই সমাজে যে শুধু আমরাই বৃদ্ধ হচ্ছি, শুধু আমাদেরই বয়স বাড়ছে তা নয়, এখানে বিদেশি একটা প্রজন্মও বৃদ্ধ হচ্ছে। তাদেরও বয়স বাড়ছে। তারাও এই সমাজ থেকে ব্যাপক অভিজ্ঞা অর্জন করেছেন । তারাও এখন আমাদের অংশ হয়ে গিয়েছেন। তাদের জীবনে ঘটে যাওয়া, তাদের চোখে দেখা বিষয়গুলো নিয়ে যে বই লেখা যায়- এই বইটি তারই দালিলিক প্রমান বহন করে। তিনি বইটি লেখার জন্য লেখকদ্বয়কে ধন্যবাদ জানান।
প্রকাশনা উৎসবে আগত সবাইকে হালকা পানীয় খাবার দিয়ে আপ্যায়ন করা হয় এবং ভেনিস বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনজন শিক্ষার্থী বইটির চুম্বক অংশগুলো পাঠ করেন।
আরআর