ফারুক ফেরদৌস
গত মাস দুই ধরে স্বীকৃতির পক্ষ বিপক্ষ নিয়ে কওমি অঙ্গনে অস্থিরতা চলছে। এর মধ্যেই কওমি মাদরাসাগুলোতে শুরু হতে যাচ্ছে প্রথম সাময়িক পরীক্ষা। পড়াশোনার উপর স্বীকৃতির ডামাডোলের প্রভাব, আলেমদের কার্যক্রমে ছাত্রদের অংশগ্রহণ ইত্যাদি বিষয় নিয়ে কথা হয় দেশের বিখ্যাত দুই জামিয়ার প্রিন্সিপালের সাথে।
কিশোরগঞ্জ জামিয়া এমদাদিয়ার প্রিন্সিপাল ও বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়ার সহ সভাপতি আল্লামা আনোয়ার শাহ বলেন, ছাত্রদের উচিত পড়াশোনা করা । নিয়ম মত পরীক্ষা দেয়া। স্বীকৃতির বিষয়ে যা হয় হবে। অন্যদিকে বেশি মন দিয়ে পড়াশোনায় অবহেলা করলে তাদের জীবনের ক্ষতি হবে। তারা পড়াশোনা করবে আলেমে দ্বীন হওয়ার জন্য। আসল উদ্দেশ্য এটিই। স্বীকৃতি দিলে সরকার একটা স্বীকৃতি দিবে। কিন্তু দ্বীনের কাজ তো আমরা আমাদের মত করেই যাবো । স্বীকৃতি থাকুক আর না থাকুক, আমাদের কাজ আমাদের করতেই হবে।
২ তারিখ থেকে বৃহত্তর ময়মনসিংহের প্রায় ৩১৫ টা মাদরাসায় এক সাথে পরীক্ষা শুরু হচ্ছে, মাদরাসাগুলোতে প্রশ্নপত্র পঠিয়ে দেয়া হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এদিকে শিক্ষা কার্যক্রম যথারীতিতে চলছে। স্বীকৃতি নিয়ে অস্থিরতার প্রভাব পড়াশোনার উপর পড়েছে এমন মনে হয় না।
আল্লামা আনোয়ার শাহ বলেন, আমার সহকর্মী মরহুম মাওলানা আতাউর রহমান খান যিনি বিএনপি থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন, আমিই অনেক চেষ্টা করে তাকে এমপি বানিয়েছিলাম, তার সাথে আমার মতবিরোধ একটাই ছিলো যে রাজনীতিতে ছাত্রদের টানবেন না। সাধারণ মানুষদের নিয়ে রাজনীতি করবেন। সব সময়ই রাজনীতিতে ছাত্রদের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহারের বিরোধী ছিলাম আমি।
তিনি বলেন, এখনও কিছু আলেম রাজনীতি করছেন তাদের সম্বল হলো ছাত্র আর ছাত্ররা সরলমনা এবং খুব আবেগপ্রবণ। একটা গরম বক্তৃতা দিতে পারলেই ছাত্ররা নারায়ে তাকবীর দিয়ে নেমে পড়ে। কওমি ছাত্রদের উদ্দেশে আমার আহ্বান হলো নিজের পড়াশোনা নিয়ে থাকো, কোনো রাজনৈতিক দলের হাতিয়ার হবে না।
কিশোরগঞ্জে তার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ওলামা সম্মেলনে কোনো ছাত্র অংশগ্রহণ করেনি দাবি করে তিনি বলেন, কিছু ছাত্র এসেছিলো, আমি তাদেরকে সরিয়ে দিয়েছিলাম এবং ছাত্ররা যেদিকে বসেছিলো ওদিকের মাইকও বন্ধ করে দিয়েছিলাম।
স্বীকৃতি নিয়ে চলমান অস্থিরতা প্রসঙ্গে আনোয়ার শাহ বলেন, স্বীকৃতি নিয়ে বর্তমানে একটা হযবরল অবস্থা চলছে । বেফাকের কর্ণধাররা এমনভাবে রাজনৈতিক মঞ্চে নিজেদের প্রকাশ করেছে, তাতে গোটা বিষয়টা জটিল হয়ে উঠেছে। আল্লামা আহমদ শফী দেশের বাইরে ছিলেন। তিনি দেশে ফিরে নাকি বলেছেন বেফাকের মজলিসে আমেলার বৈঠক ডাকতে। কুচক্রীদের আসল রূপটা প্রকাশ পাচ্ছে। প্রকাশ পেলেই কাজ হবে ইনশাল্লাহ।
একই বিষয়ে মতামত জানতে চৌধুরিপাড়ার শেখ জনূরুদ্দীন রহ. দারুল কুরআন মাদরাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা আবূ মুসার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, স্বীকৃতি আদায়ের জন্য চেষ্টা করা বা না করার বিষয়টা ওলামা মাশায়েখদের। এর সাথে ছাত্রদের জড়ানোর ফল ভালো নয়।
আলেমরা কিছু করলেই ছাত্র নিয়ে নামেন মন্তব্য করে তিনি বলেন, আলেমদের তো মুসল্লি, মুরিদ, ভক্তও আছে। তাদেরকে নিয়ে না নেমে শুধুই ছাত্রদের ব্যবহার করা হয়। এতে ব্যক্তিগতভাবে তারা লাভবান হলেও ছাত্রদের ক্ষতি হয়।
কওমি মাদ্রাসার ছাত্ররা শিক্ষক কেন্দ্রিক। তারা কোনো বিষয়ে ব্যস্ত থাকলে তার প্রভাব ছাত্রদের উপর পড়ে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সামনে পরীক্ষা, তাই স্বীকৃতি এবং অন্য আর কোন বিষয়ে মন না দিয়ে ছাত্রদের পড়াশোনায় মন দেয়া দরকার।
স্বীকৃতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, স্বীকৃতি নেয়া না নেয়া উভয় ক্ষেত্রেই আমাদের ঐক্য দরকার। নিলেও একসাথে না নিলেও এক সাথে না নেয়া দরকার। কওমি অঙ্গনে এখন যেমন অস্থিরতা দেখা যাচ্ছে, এরকম চলতে থাকলে এর খারাপ প্রভাব ছাত্রদের উপর পড়ার প্রবল আশংকা আছে।
এফএফ
আরও পড়ুন
http://ourislam24.com/2016/10/31/%e0%a6%86%e0%a6%b0%e0%a7%8b-%e0%a6%8f%e0%a6%95%e0%a6%9f%e0%a6%bf-%e0%a6%95%e0%a6%93%e0%a6%ae%e0%a6%bf-%e0%a6%ac%e0%a7%8b%e0%a6%b0%e0%a7%8d%e0%a6%a1%e0%a7%87%e0%a6%b0-%e0%a6%b7%e0%a7%8b%e0%a6%b7/