মেরিনা নাসরিন
পুরো বগীতে মাত্র একটি মেয়েই এভাবে মালকিনের পায়ের কাছে সিট ধরে পাটাতনে বসেছিল। কারণ সে কাজের মেয়ে। আমরা এমন প্রায়ই দেখি গৃহকর্মীদের কপালে দুরপাল্লার একটি সিট কপালে জোটে না। টাকা মানুষের কাছে কি রক্তের ফোটা? কি অদ্ভুত!
ভদ্রমহিলা তার সাথে ২১/২২ বছরের ছেলেকে নিয়ে গ্যাট হয়ে সিটে বসে আছেন পায়ের কাছে নিপীড়িত মানবতা। কিছুই বলি নাই, শুধু বলেছি ২৭১ টাকা এতই বেশি? অথচ সাজসজ্জা দেখে মনে হচ্ছে যথেষ্ট ধনী। আমার বন্ধু লিস্টে কি এমন কেউ আছেন যিনি ঘরে কাজ করা মেয়েটিকে সামান্য ভুলেই মারেন, খাবারে কাপড়ে কষ্ট দেন? সেটা হলে সরি আমি আপনার বন্ধু লিস্টে থাকার যোগ্য নই।
গৃহকর্মীর সাথে কিছু বৈষম্য থাকবেই, এটা অস্বীকার করার উপায় নেই। কিন্তু এতটা কেন? আমার বাসায় যারা কাজ করে গিয়েছে তাদের সবার বাড়িতে আজ অবধি ঈদের কাপড়, আর্থিক সহায়তা পৌঁছে যায়। নিজে খরচ করে ঘটা করে তিনটা মেয়েকে বিয়ে দিয়েছি। ওরা মেয়ে না হলেও অনেকটা আমার মেয়ের মতই। আজ পর্যন্ত এমন ঘটনা ঘটেনি যে কোন মেয়ে আমার বাড়িতে কাজ করতে এসেছে অথচ নিজে ইচ্ছায় কাজ ছেড়ে বাড়ি যেতে চেয়েছে। আমি কখনই ওদের প্লেটে খাবার তুলে দেই না, ওরা নিজের ইচ্ছে মত বেড়ে খায়। আমি একটা চক্লেট খেলেও ভাগ করে দেই। কাপড় দেখে অনেকেই ভাবে ওরা আমার ছোট বোন। দিনের নির্দিষ্ট একটা সময় টিভির রিমোর্ট কন্ট্রোল ওদের হাতে থাকে। এগুলো আমি গর্বের সাথেই বলতে পারি।
গৃহকর্মীদের সাথে এসব অমানুষের মত আচরণ দেখলে আমার মাথা আওলাইয়া যায়। ছবিটি আজ কর্মস্থলে যাবার পথে ট্রেন থেকে তোলা। আমার দু সিট সামনে ছিলেন তারা। অনুমতি নিয়ে ছবি তুলিনি বলে ক্ষমা চাই। তবে ভদ্রমহিলার ছবি ক্রপ করে দিলাম যাতে চেনা না যায়। খুব মন খারাপ হয়েছে। মানুষ আমরা মানুষ কেন নই?
মেরিনা নাসরিন এর ফেসবুক পেইজ থেকে নেয়া