আওয়ার ইসলাম: প্রায় দুই মাস ধরে বাংলাদেশের কওমি অঙ্গনে প্রধান আলোচ্যবিষয় কওমি শিক্ষাসনদের স্বীকৃতি। গত এক দশক ধরে বিষয়টি আলোচনায় থাকলেও মাস দুয়েক আগে একটি অনুষ্ঠানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কওমি সনদের স্বীকৃতির বিষয়টি নিয়ে কথা বললে এটি আলোচনার শীর্ষে উঠে আসে। এরপরের ঘটনাবহুল সময়ে অনেক সম্মেলন ও বৈঠক হয়ে গেলেও স্বীকৃতির বিষয়ে একটি ঐক্যমত্যে আসা সম্ভব হয়নি এখনো।
স্বীকৃতি নিয়ে দেশের পরিস্থিতি যখন এই, বিষয়টি নিয়ে আওয়ার ইসলাম কথা বলেছে উপমহাদেশে ইসলামি শিক্ষার সূতিকাগার ভারতের দারুল উলুম দেওবন্দের কয়েকজন প্রবীণ, অভিজ্ঞ, ওলামায়ে কেরামের অভিভাবকতুল্য শিক্ষকের সাথে। আজ পড়ুন ধারাবাহিক সাক্ষাতকারের শেষ পর্ব। আওয়ার ইসলামের পক্ষ থেকে কথা বলেছেন, দারুল উলুম দেওবন্দের শিক্ষার্থী হাওলাদার জহিরুল ইসলাম।
পরিকল্পনা ও সম্পাদনা, মাওলানা সাইফুল ইসলাম রিয়াদ
স্বীকৃতি বিষয়ে দারুল উলুম দেওবন্দের নায়েবে মুহতামিম আল্লামা আবদুল খালেক সাম্ভলী বলেন, ‘যেহেতু বিষয়টা সরকারি পর্যায়ের তাই মন্তব্য করা ঠিক হবে না৷ আমরা অন্য দেশের সরকারি কাজ নিয়ে কথা বলা পছন্দ করি না৷ তবে কওমি মাদারেসের প্রতি শফকত-মুহাব্বাতের দিক থেকে কিছু বলাটা আমাদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে৷ তোমাদের দেশের কওমি স্বীকৃতি নিয়ে এর আগেও আলোচনা হয়েছে৷ ২০১৩ সালে একটি খসড়া দেওবন্দে পাঠানো হয়েছিলো৷ তা আমরা রদ করে দিয়েছিলাম৷ সেখানে বেশ কিছু অসঙ্গতি ছিলো৷ আমরা কওমি মাদারেসের ওপর সরকারের যে কোনো হস্তক্ষেপের বিরোধী৷ কওমি মাদরাসাগুলো সরকার থেকে যতো দূরে থাকবে ততোই ভালো৷ ভারত সরকার মাদরাসার কোনো বিষয়ে আমাদের কাছে আসতে চাইলে আমরা সরাসরি প্রত্যাখ্যান করি৷
বাংলাদেশের অনেক আলেমই মনে করেন, দারুল উলুমে সরকারি স্বীকৃতি আছে৷ এবং তারা বলছেন দারুল উলুমের আদলে সরকার থেকে স্বীকৃতি চান৷ বিষয়টা যদি খোলাসা করতেন?
এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘এটা ভুল৷ দারুল উলুমে সরকারি কোনো স্বীকৃতি নেই৷ দারুল উলুমের কোথাও এটার উল্লেখ নেই৷ সরকারি স্বীকৃতি থাকা তো উসূলে হাশতেগানা'র খেলাফ! হ্যাঁ, দারুল উলুম থেকে 'দাওরা হাদিস' সমাপনকারী ছাত্রদেরকে যে সনদ দেয়া হয় তা দিয়ে ভারতের তিনটি (১, আলী গড় মুসলমি ইউনিভার্সিটি৷ ২,জামিয়া মিল্লিয়া, দিল্লি৷ ৩,জামিয়া তিব্বিয়া, কাসেমপুরা, সাহারানপুর৷) বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ রয়েছে৷ তাও কেবল উর্দু সাহিত্য, আরবি সাহিত্য, ইসলামিক স্টাডিস, ইউনানি এই কয়েকটা বিষয় নিয়ে পড়ার সুযোগ পায়৷ এবং নিয়মতান্ত্রিক ভর্তি পরীক্ষা দিয়েই তাদেরকে ভর্তি হতে হয়৷ স্বীকৃতি বলতে হয়তো এটাকেই বোঝানো হয়েছে৷’
স্বীকৃতি বিষয়ে উলামাদের করণীয় কী?
জানতে চাইলে হযেরত বলেন, ‘বাংলাদেশের আলেমগণ প্রায় সব বিষয়ে যেমন উলামায়ে দেওবন্দের অনুসরণ করে, সরকারি সনদের বিষয়েও দেওবন্দের অনুসরণ করা উচিত৷ মোহতামিম সাহেব, মাওলানা মাহমূদ মাদানি ও মাওলানা আরশাদ মাদানি সাহেব এঁদের সাথে পরামর্শ করা উচিত ৷ দেশের শীর্ষ আলেমদেরও ঐক্যবদ্ধভাবে পরামর্শে বসা দরকার৷ 'দারুল উলুম' ও 'দারুল উলুম ওয়াকফ্'র মতো যেনো তোমাদের ওখানে বড় ধরণের এখতেলাফ না হয়৷ বর্তামান সময়ে এত্তেহাদের খুবই প্রয়োজন৷
ভারত সরকার দারুল উলুমের সনদের যে সরকারি মান দিয়েছে এ ক্ষেত্রে দারুল উলুমের মনোভাব কী? এটা কি বহাল থাকা উচিত?
এই পশ্নের উত্তরে আব্দুল খালেক সাম্বলী বলেন, ‘দেখো, সরকার নিজ উদ্যোগেই সনদের সরকারি মান দিয়েছে৷ আমরা চেয়ে নেইনি৷ বরং আমরা এক প্রকার বিরোধিতা করেছি৷ সরকারের যতো দিন ইচ্ছে বহাল রাখবে৷ উঠিয়ে নিলেও আমাদের কোনো আপত্তি থাকবে না৷ যেহেতু সরকারি ওই স্বীকৃতি থাকায় আমাদের কিছু ছেলে মাওলানা শেষ করে কয়েকটা বিষয়ে উচ্চতর শিক্ষা অর্জনের সুযোগ পাচ্ছে তাই সরাসরি এর বিরোধী আমরা নই৷ হ্যাঁ, এ ক্ষেত্রে সরকারের যে কোনো নিয়ন্ত্রণ বা কর্তৃত্ব দারুল উলুম বরদাশত করবে না৷ কেননা, দারুল উলুম সরকার থেকে একটি রুপিও গ্রহণ করে না৷’
এফএফ