শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪ ।। ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬


কী পরিবর্তন আনবে আওয়ামী লীগের নতুন নেতৃত্ব

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

al-sommelonআওয়ার ইসলাম: বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের ২০তম সম্মেলনের মধ্য দিয়ে গঠিত হয়েছে নতুন নেতৃত্ব। দলীয় প্রধান হিসেবে শেখ হাসিনা স্বপদে বহাল থাকলেও পরিবর্তন এসেছে দলটির সাধারণ সম্পাদক পদে।

আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে গঠিত নতুন কমিটি কি কোনো গুনগত পরিবর্তন আনতে পারবে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে?

এবারের কাউন্সিল উপলক্ষ্যে সারাদেশের প্রায় সাড়ে ছয় হাজার কাউন্সিলর জড়ো হয়েছিলেন ঢাকায়। কিন্তু তাদের ভোট দেয়ার কোনো প্রয়োজন হয়নি। সম্মেলনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় নেতা নির্বাচিত হয়েছে এবং সবাই দলের সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েছেন।

নেত্রকোনা থেকে আসা কাউন্সিলর আশরাফ আলী খান খসরু বলেন, "শেখ হাসিনা আমাদের প্রাণপ্রিয় নেত্রী, ওনার নির্দেশ ওনার কর্মসূচিই চূড়ান্ত এবং এখানে কোনো ক্ষোভ নেই"।

খুলনার কাউন্সিলর মো. শহিদুল হক মিন্টু বলেন, "আমরা অত্যন্ত খুশি যে প্রধানমন্ত্রী পূণরায় সভাপতি হয়েছেন আর মাঠের নেতা (ওবায়দুল) কাদের ভাইকে সাধারণ সম্পাদক করায় সর্বস্তরের নেতা কর্মীরা উজ্জীবিত হয়েছে"।

তবে দলীয় সিদ্ধান্তের ব্যাপারে প্রকাশ্যে কেউ কোনো অসন্তোষ প্রকাশ না করলেও অনেকের মধ্যে কিছু কারণে ক্ষোভ কাজ করে। কেউ কেউ মনে করেন, দল ক্ষমতায় থাকার কারণে অনেক সুবিধাবাদী দলে ঢুকে গেছে এবং তারাই সবচে বেশি তৎপরতা দেখায় ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে দলের ইমেজ নষ্ট করে।

ফরিদপুর থেকে আসা কাউন্সিলর আইভি মাসুদ বলেন, "সংকটকালে যারা আওয়ামী লীগকে ধরে রাখছে সে সমস্ত লোকদের অবস্থানটা পেছনে চলে যাচ্ছে। কারণ হাইব্রিডদের তৎপরতা এত বেশি, তারা বেশি তোষামোদি করে, যার জন্য মূল আওয়ামী লীগাররা পিছিয়ে পড়েছে।"

এবার সম্মেলনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির আকার আরও বড় হয়েছে। প্রেসিডিয়াম সদস্য, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক, সাংগঠনিক সম্পাদক পদে পুরানোদের সঙ্গে যোগ হয়েছে নতুন মুখ।

দলের সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী ফোরাম সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন সাবেক খাদ্যমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক। তাঁর বিশ্বাস, নতুন নেতৃত্ব আওয়ামী লীগে গুনগত পরিবর্তন আনতে পারবে।

"কমিটির বড় কাজই হবে আমাদের যে অর্জনগুলো আছে সেগুলো সাধারণ মানুষের কাছে তুলে ধরা। কী কী আমাদের ভুলভ্রান্তি, আমাদের দুর্বল দিকগুলো কোথায় সেগুলো আইডেন্টিফাই করবো, সেগুলো আমরা সংশোধন করবো এবং তার ভিত্তিতে মানুষের কাছে যাব, আর জনগণকে উজ্জীবিত করবো।"

আওয়ামী লীগের ২০তম কাউন্সিলটি ছিল বেশ জাকজমপূর্ণ। এ আয়োজনে মধ্য দিয়ে ক্ষমতাসীন দল তাদের দলীয় ঐক্য ও নেতৃত্বের প্রতি অকুন্ঠ সমর্থন ও সাংগঠনিক শক্তি দেখিয়েছে বলে মনে করা হয়।

তৃণমূলসহ শীর্ষস্থানীয় নেতাকর্মী সবাই জানেন নতুন কমিটির প্রধান লক্ষ্যই হবে আগামী জাতীয় নির্বাচনে দলের বিজয় নিশ্চিত করা। একটানা দুই মেয়াদে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ মনে করছে অতীতে যে কোনো সময়ের চেয়ে দল এখন শক্তিশালী।

এ ব্যাপারে রাষ্ট্রবিজ্ঞানী এবং যুক্তরাষ্ট্রের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রওনক জাহান বলেন, "আমাদের দেশে যখন একটা দল সরকারে থাকে তখন দল আর সরকারের মধ্যে বিশেষ তফাত করা যায় না। দলের যে শক্তিটা আছে সেই শক্তি কতটা জনগণের স্বতস্ফুর্ত সমর্থন নিয়ে আছে সেটি বোঝা যায় না, কারণ সরকারের কাছ থেকে লোকজনকে দল সুযোগ সুবিধা দিচ্ছে।"

অধ্যাপক রওনক জাহানের বিশ্লেষণে দলের সভাপতি শেখ হাসিনার সামনে চ্যালেঞ্জ হলো আগামী দিনে দলের নতুন কর্মসূচি দিয়ে জনগণকে আকৃষ্ট করা এবং দলের স্বচ্ছ ভাবমূর্তী প্রতিষ্ঠা করা।

"ওনার দলটাকে উনি কী করে একটা গণতান্ত্রিক এবং ক্লিন ইমেজ তৈরি করে জনগণের কাছে যাবেন - আসলেই তারা জনদরদী, গরিবের বন্ধু এবং উন্নয়নের জন্য কাজ করছেন - এটা তাদের দেখাতে হবে। সব থেকে বেশি ওনাকে দেখতে হবে যে উন্নয়নের দিকে কাজ করার থেকেও দলের লোকরা যাতে সুশাসনের পথে অন্তরায় হয়ে না দাঁড়ায়"।

সূত্র: বিবিসি

এফএফ


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ