ভারতে তিন তালাক নিয়ে চলছে আন্দোলন। একদল মুসলিম নারী এর বিপক্ষে সোচ্চার। সেই সংখ্যা নগন্য হলেও তারা দেশের বিভিন্ন দলের ও প্রশাসনের সাপোর্ট পাচ্ছে। এমনকি দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও বলেছেন তিন তালাক বাতিল করতে। অবস্থা দৃষ্টে দেখা যাচ্ছে খুব শিগগির দেশটিতে তিন তালাক বাতিলের বিল চূড়ান্ত হবে কোর্টে। যদিও এ আইন বাতিল করলে অবস্থা খারাপ হবে বলে হুমকি দিয়েছে ভারতের মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ড। পরশ দেশটিতে ২৫ হাজার মুসলিম নারী তিন তালাক বাতিল না করতে মিছিলও করেছেন। এখন দেখার বিষয় দেশের সরকার ঠিক কার পক্ষ অবলম্বন করে।
তালাক বিষয়ে ইসলামের বিধান কেমন? একসঙ্গে তিন তালাক বাতিলের সুযোগ রয়েছে কিনা, কিংবা এটিকে অমানবিক মনে করা কতটুকু সত্য এসব নিয়ে তেজগাঁও জামিয়া ইসলামিয়ার শায়খুল হাদীস ও কাচপুর মাদরাসার প্রিন্সিপাল ড. মাওলানা মুশতাক আহমদের সঙ্গে কথা বলেছেন রোকন রাইয়ান।
ভারতে তিন তালাকের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছে মুসলিম নারীরা, গতকাল দেশটির প্রেসিডেন্ট নরেন্দ্র মোদিও কঠোর অবস্থানের কথা জানিয়েছেন। জানতে চাই ইসলামে তালাকের পদ্ধতি কী এবং তালাক সম্পর্কে কী দৃষ্টিভঙ্গি লালন করে?
বিয়ে হলো স্বামী স্ত্রীর চূড়ান্ত মেলবন্ধন। বিয়েকে কেন্দ্র করে সংসর গড়ে উঠবে। বাড়বে। ইসলামে বিয়েকে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। সামর্থ থাকলে বিয়ে ফরজ। আর তালাক হলো সর্বশেষ একটি মাধ্যম। যখন স্বামী স্ত্রীর মধ্যে কোনোভাবেই মিল হচ্ছে না তখন এটি গ্রহণ করতে বলা হয়েছে। তবে তার আগে বিশেষ কিছু পদ্ধতিও বাতলে দিয়েছে ইসলাম। যাতে দুজনের মধ্যে মিল মহব্বত তৈরি হয়।
সে পদ্ধতিগুলো হলো, একান্তই যদি বনিবনা না হয় তাহলে স্বামী স্ত্রীকে স্ত্রী স্বামীকে ভালোভাবে বোঝানোর চেষ্টা করবে, এতে কাজ না হলে দুই পক্ষের উকিল ধরে ফয়সালা করার চেষ্টা করা হবে। আর তাতেও যদি সমাধান না হয় তবে তালাকের কথা বলা হয়েছে। আর তালাকের পদ্ধতিও বলে দেয়া হয়েছে এভাবে। প্রথমে ১ তালাক দিতে হবে, বনিবনা না হলে তিনমাস পর ২ তালাক এরপর আবারো ৩ মাস পর তিন তালাক। এখন কেউ যদি একসঙ্গে তিন তালাক দিয়ে দেয় তবে তা হবে নারীর ওপর জুলুম অনাচার ও অত্যাচার। এর জন্য আল্লাহর দরবারে শাস্তি পেতে হবে স্বামীকে।
http://ourislam24.com/2016/10/25/%E0%A6%AD%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A6%A4%E0%A7%87-%E0%A6%A4%E0%A6%BF%E0%A6%A8-%E0%A6%A4%E0%A6%BE%E0%A6%B2%E0%A6%BE%E0%A6%95%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%AA%E0%A6%95%E0%A7%8D%E0%A6%B7/
আর বিয়ে তো করা হয় পুরো জীবন একসঙ্গে থাকার জন্য তো বিয়ের আগেই এই ফয়সালা করে নিতে হবে। ভালো করে দেখে শুনে পছন্দ ও সব দিন মিললেই বিয়ের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আশা করি এই বিষয়গুলো মেনে চললে তালাক সংক্রান্ত ঝামেলাগুলো আমাদের সমাজে থাকবে না।
আপনি একটা মসজিদ নির্মাণ করলেন, এখন যদি বলেন আমি এটি ভেঙে ফেলব তাহলে কি হবে? বিয়েটাও এমন এটি একটি জীবনের শক্ত নির্মাণ কিছুদিন পর ভেঙে ফেলা যাবে না।
একসঙ্গে তিন তালাককে অমানবিক বলা হচ্ছে, ভারতজুড়ে এটি নিয়ে আন্দোলন হচ্ছে, আপনি বললেন তালাক প্রথমে ১টা দিতে হবে তিনমাস পর দ্বিতীয়টা তো একসঙ্গে যদি কেউ তিন তালাক দেয় তাহলে কি এক তালাক পতিত হবে?
না একসঙ্গে তিনটা দিলে তিনটাই হবে। একটা হওয়ার সুযোগ নেই। তবে ইসলাম যেহেতু তালাক পছন্দ করে না তাই পদ্ধতি বলে দিয়েছে একটা একটা করে দিতে। আর আশা করতে বলা হয়েছে এর মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়নের। কেউ যদি বলে একসঙ্গে তিন তালাক দিয়ে এক তালাক হবে এটি ভুল। একটা উদাহরণ দিলে পরিষ্কার হবে। ধরুন আপনার কাছে তিনটা গুলি আছে, আপনি একসঙ্গে তিনটা গুলিই ব্যবহার করলেন তো আপনার কাছে কি বাকি দুইটা অক্ষত থাকবে? থাকবে না। তালাক আপনাকে তিনটি দেয়া হয়েছে আপনি যদি তিনটিই ব্যবহার করে ফেলেন তাহলে তো থাকল না কিছু।
ভারতের প্রেক্ষপট বিবেচনা করলে দেখা যাচ্ছে, তালাক অধিকাংশ স্বামীই অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে, তো এই প্রেক্ষিতে কি ভিন্ন চিন্তা করার সুযোগ আছে?
এটি তো স্বামীরা স্ত্রীর ওপর জুলুম করছে। ব্যক্তি গোনাহগার। সে এর থেকেই কাজটি করছে। আমাদের সমাজে দীন নেই বলে এটি করছে। এই জুলুমের শাস্তি সে পাবে। কিন্তু এই বিধান তো ব্যক্তি রচিত নয় যে মন চাইলে চ্যাঞ্জ করলাম। এটি সয়ং আল্লাহ পাকের নির্দেশ। আল্লাহর বিধান। তো আল্লাহর আইন তো মাখলুক পরিবর্তনের অধিকার রাখে না। এই ক্ষমতা মানুষকে দেয়া হয়নি। এর আগেও ভারতের বিশিষ্ট আলেম বুজুর্গ এহতেশামুল হক থানভীকে সরকারিভাবে এ ধরনের একটি আইনে স্বাক্ষর করতে বলা হয়েছিল। কিন্তু তিনি বলেছেন এটি তো আল্লাহর আইন। আমি স্বাক্ষর করলেই কি তা পরিবর্তন হয়ে যাবে?
বাংলাদেশেও তো এসব ব্যাপারে চাপ দেয়া হয়, বলা হয় তালাক দিলে মেম্বার চেয়ারম্যানের স্বাক্ষর লাগবে। এগুলো তো কথার কথা। এর জন্য স্বামীদের বোঝাতে হবে। সমাজকে বোঝাতে হবে। আল্লাহর আইন পরিবর্তন নয় নিজেরা পরিবর্তন হতে হবে।
আরেকটা বিষয় হলো, তালাকের জন্য তো স্বামীরাই শুধু দায়ী না। স্ত্রীদেরও দায় রয়েছে। আজকাল স্ত্রীরা তো স্বামীর অবাধ্যতাই বেশি করে থাকে। একদিকে চলতে বললে আরেক দিকে চলে। এসবও তো পরিবর্তন করতে হবে। তালাকের ক্ষেত্রে যে নারীদের কর্মকাণ্ড একদমই দায়ী নয় তা বলা যাবে না। দুজনকেই বুঝতে হবে, এটি একটি পবিত্র বন্ধন। পবিত্র বিধান। এর ওপর অটল থাকতে হবে। মিল মহব্বতের মধ্যেই চলতে হবে। একটা প্রবাদ আছে, ঘরে আগুন লাগে ঘরের বাতি থেকেই। সুতরাং সবার সচেতনতার কোনো বিকল্প নেই।
আরেকটি বিষয় বলতে হয়, ভারত হিন্দুদের দেশ তাদের আইনে নারীরা সম্পদ পায় না এমনকি স্বামী মারা গেলে তাকে দাহ করার বিধানও আছে। যে দেশে প্রতিদিন নারী ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে, অবহেলিত বঞ্চিত হচ্ছে নারীরা, তারা কেন এসব না দেখে তালাক নিয়ে উঠে পড়ে গেল। এটি সন্দেহের বিষয়। সুতরাং আল্লাহর বিধানের পরিবর্তনের আইন না করে তাদের উচিত নারীদের জীবন মান উন্নয়ন করা। তালাকের উৎসব উদ্ঘাটন করা। তবেই সমাধান মিলবে।
এইচএ