মাহমুদ হাসান আদনান, কিশোরগঞ্জ থেকে
তানযীমুল মাদারিসিল কাওমিয়া আল-আরাবিয়া -এর উদ্ব্যোগে আজ রবিবার সকাল ১১ টায় আল জামিয়াতুল ইমদাদিয়া, কিশোরগঞ্জে অনুষ্ঠিত বৃহত্তর ময়মনসিংহ ও তৎপার্শ্ববর্তী জেলাসমূহের উলামা-মাশায়েখ সম্মেলনে কিছু প্রস্তাব পেশ করা হয়েছে।
আল্লামা আনোয়ার শাহ সাক্ষরিত হ্যান্ডবিলে একটি দীর্ঘ ভূমিকা সহ প্রস্তাবগুলো তুলে ধরা হয়। সম্মেলনে প্রস্তাবাবলী পড়ে শোনান তানযীমুল মাদারিসিল কাওমিয়া আল-আরাবিয়ার সাধারণ সম্পাদক মাওলানা শফিকুল ইসলাম জালালাবাদী।
আওয়ার ইসলাম পাঠকদের জন্য সম্মেলনে পেশ করা প্রস্তাবাবলী ভূমিকা সহ তুলে ধরা হলো;
ভূমিকা: বৃটিশ আমল থেকেই দারুল উলূম দেওবন্দের সনদ সরকার কর্তৃক স্বীকৃত ও গৃহীত ছিল। যা ১৯৮২ সাল পর্যন্ত বলবৎ ছিল। এই সুবাদে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের মরহূম মাননীয় খতীব হযরত মাওলানা উবায়দুল হক রহ. এবং তাঁর ছোট ভাই হযরত মাওলানা আবদুল হক সাহেবসহ অনেক ফাযিলে দেওবন্দ বহুকাল পর্যন্ত মাদরাসায়ে আলিয়া ঢাকাসহ দেশের অনেক আলিয়া মাদরাসার উচ্চ পদে কর্মরত ছিলেন। কিন্তু ১৯৮২ সালে দারুল উলূম দেওবন্দের সনদের মূল্যায়ন রহিত হওয়ার ফলে সরকারী প্রতিষ্ঠানে কওমী সনদধারীগণের চাকরী ও দেশ-বিদেশে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করাসহ অন্যান্য সুযোগ বন্ধ হয়ে যায়। বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ কর্তৃক প্রকাশিত ও প্রচারিত গঠনতন্ত্রে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য শিরোনামে বর্ণিত ১৪ নং ধারায় আছে: “রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে বেফাকের ন্যায়সঙ্গত অধিকার ও মর্যাদা এবং কওমী মাদরাসা শিক্ষার মর্যাদাকে স্বীকৃত ও প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যে সর্বাত্মক উদ্যোগ চালিয়ে যাওয়া।” বেফাকের গঠনতন্ত্রের এ ধারা বাস্তবায়নের জন্য মরহূম শাইখুল হাদীস আল্লামা আজীজুল হক রহ. কওমী সনদের স্বীকৃতির লক্ষ্যে প্রচন্ড আন্দোলন গড়ে তুলেন। এর আগপর্যন্ত কওমী সনদ কোন আলোচনার বিষয়ই ছিল না। আমাদের এই আন্দোলনের ফলে তৎকালীন চারদলীয় জোট সরকার কওমী সনদের স্বীকৃতির ব্যাপারে নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। সুতরাং “সরকারী স্বীকৃতি গ্রহণ করব না” -এমন মতামতের কোন অবকাশ নেই।
কাজেই আমাদের প্রস্তাব হচ্ছে:
১। কওমী মাদরাসার স্বকীয়তা ও স্বাধীনতা রক্ষা করে সরকার স্বীকৃতি প্রদান করলে তা গ্রহণ করা হউক। সুতরাং, সরকারী প্রজ্ঞাপনে জারিকৃত ‘‘বাংলাদেশ কওমী মাদরাসা শিক্ষা কর্তৃপক্ষ” আইনের খসড়াটি প্রয়োজনীয় সংশোধনীসহ যথাসময়ে সরকারের নিকট পেশ করার জন্য ২০১২ সালের ১৫ এপ্রিল গঠিত ১৭ সদস্যের কমিশনকে অদ্যকার সম্মেলনের পক্ষ থেকে অনুরোধ করা গেল।
২। বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ -এর মজলিসে আমেলার গুরুত্বপূর্ণ পদসমূহে দলীয় সক্রিয় রাজনৈতিক নেত্রীবৃন্দ থাকায় বেফাক তাঁদের দ্বারা প্রভাবিত হচ্ছে এবং বেফাকে বিভিন্ন অনিয়ম চলছে। কাজেই বেফাকের গঠনতন্ত্র সংশোধন করে বেফাকুল মাদারিসকে রাজনৈতিক প্রভাব মুক্ত করা একান্ত প্রয়োজন। বেফাকুল মাদারিসের বর্তমান গঠনতন্ত্রে দায়িত্বশীলদের যোগ্যতা শিরোনাম -এর (ক)তে সদর ও নায়েবে সদরের যোগ্যতা এর ৪ নং ধারায় উল্লেখ আছে যে, “কোন রাজনৈতিক দলের কর্মকর্তা বা সক্রিয়ভাবে রাজনীতির সাথে জড়িত বা বহু সংগঠনের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে জড়িত বা দায়িত্বশীল এমন ধরনের ব্যক্তি অত্র প্রতিষ্ঠানের সদর হওয়ার জন্য যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন না।”
উল্লেখিত ৪ নং ধারায় সংশোধনী নিম্নরূপ হবে-
“কোন রাজনৈতিক দলের কর্মকর্তা বা সক্রিয়ভাবে রাজনীতির সাথে জড়িত বা বহু সংগঠনের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে জড়িত বা দায়িত্বশীল এমন ধরনের ব্যক্তি অত্র প্রতিষ্ঠানের সদর ও নায়েবে সদর হওয়ার জন্য যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন না।”
তদ্রুপ দায়িত্বশীলদের যোগ্যতা শিরোনাম -এর (খ) তে নাযেমে উমূমী ও সহকারী নাযেমগণের যোগ্যতা -এর ৩ নং ধারায় উল্লেখ আছে যে, “কোন রাজনৈতিক দলের কর্মকর্তা বা সক্রিয়ভাবে রাজনীতির সাথে জড়িত বা বহু সংগঠনের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে জড়িত নন এমন ধরণের ব্যক্তিত্ব হতে হবে।”
কিন্তু বেফাকের গঠনতন্ত্রের উপরোল্লেখিত শর্ত লঙ্ঘন করে সহকারী নাযেমে উমূমী (সহকারী মহাসচিব) পদে দলীয় রাজনৈতিক নেতা বহাল আছেন? তাই অদ্যকার সম্মেলনের পক্ষ থেকে জোর দাবী জানানো যাচ্ছে যে, গঠনতন্ত্র মোতাবেক এ পদটিকেও দলীয় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব মুক্ত করা হোক।
সভাপতি মহোদয়ের নিকট বিনীত আবেদন: যথাশীঘ্র বেফাকের মজলিসে উমূমীর সভা ডেকে বেফাকের গঠনতন্ত্রে উপরোল্লেখিত সংশোধনী আনা এবং সংশোধিত গঠনতন্ত্র মোতাবিক মজলিসে আমেলা পুন:গঠন করার জন্য সবিনয় আবেদন করছি । এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য মহাসচিব সাহেবকে অনুরোধ করা গেল।
এফএফ