ওমান থেকে জিয়াউর রহমান
ওমান সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক সঙ্কটের কারণে কাজ খুঁজে পাওয়া কঠিন হয়ে পড়লেও, ওমানমুখী বাংলাদেশি শ্রমিকদের ঢল অব্যাহত রয়েছে।
বাংলাদেশের জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ মন্ত্রণালয়ের এক পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, এ বছরের জানুয়ারির শুরু থেকে ২ অক্টোবর পর্যন্ত সময়ের মধ্যে ১৪৬,২৫৭ জন বাংলাদেশি শ্রমিক ওমানে এসেছে। ২০১৫ সালে সারা বছরে এর পরিমাণ ছিল ১২৯,৮৫৯ জন। ওমানে বাংলাদেশ দূতাবাসের এক উর্ধ্বতন কর্মকর্তা এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘যারা বৈধ কাগজপত্র দেখায়, আমরা কেবল তাদেরই ভিসার প্রক্রিয়া করি। তারপরও ওমানমুখী বাংলাদেশি শ্রমিকদের এই স্রোত দেখে আমরাও কিছুটা অবাক।’
বাংলাদেশের জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, জানুয়ারি থেকে অক্টোবরের শুরু পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে যত শ্রমিক বিদেশে গেছে তার ২৬.৬৭ শতাংশেরই গন্তব্য ওমান এবং ১৬.৫৯ শতাংশ শ্রমিক গেছে কাতারে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী প্রত্যেক মাসে ১৫ হাজার থেকে ১৭ হাজার বাংলাদেশি শ্রমিক আনুষ্ঠানিকভাবে ওমানে এসেছে। ওমানে আসা বাংলাদেশি শ্রমিকদের বেশিরভাগই একটা বড় অঙ্কের টাকা দিয়ে তথাকথিত ‘ফ্রি-ভিসা’য় এসেছে। এমনকি নিয়োগদাতা সম্পর্কেও ধারণা নেই তাদের। তাই ওমানে আসার পর টিকে থাকার জন্য একটা কাজ খুঁজতে সংগ্রাম করতে হবে তাদের।
মোহাম্মদ ফারহান গত আগস্ট মাসে ফ্রি ভিসায় ওমানে আসেন। এই প্রক্রিয়ায় তার খরচ হয়েছে বাংলাদেশি টাকায় ৩ লাখের উপরে। এটা একটা উদাহরণ মাত্র। বুরাইমি এলাকায় কাজ খুঁজতে থাকা ফারহানকে জিজ্ঞেস করলে বলেছেন, ‘আমি দালালকে বড় অঙ্কের টাকা দিয়ে ওমানে এসেছি। তারা বলেছে, আমি এমন একটা ভিসা পাবো যার মাধ্যমে যে কোন কাজ করতে পারবো। আমি আমার নিয়োগদাতাকেও দেখিনি। এখন আমি এমন একটা পরিস্থিতিতে আছি যেখানে অর্থনৈতিক সঙ্কটের কারণে কোন কাজ নেই। এখন টিকে থাকাই কঠিন। প্রতিদিন নিজের খাবার সংগ্রহ করাই বড় সমস্যা।’
আব্দুল হালিম নামের আরেক শ্রমিক বলেন, তিন মাস থেকে রুম ভাড়া দিতে পারছি না। কাজ নাই, কাজ থাকলে আমি যে কোন কাজ করতে প্রস্তুত।
শুধু বুরাইমি এলাকায় অবস্থান নেয়া ফ্রি ভিসায় যাওয়া শত শত বাংলাদেশির এমন অবস্থা গত কয়েক মাস ধরে। কাজ না থাকায় টিকে থাকার জন্য বাংলাদেশে পরিবারের কাছ থেকে টাকাও নিতে হচ্ছে তাদের। এই টাকাও আবার পাঠাতে হয় দালালের মাধ্যমে। এই প্রক্রিয়ায় দালালরা বড় ধরনের কমিশন রাখে। বাংলাদেশ থেকে ২০ হাজার টাকা পাঠালে ওমানে পাওয়া যায় মাত্র ৯৫ ওমানি রিয়াল। আবার ওমান থেকে বাংলাদেশে আসা রেমিটেন্সের পরিমাণও কমে গেছে। ২০১৫ সালের আগস্ট মাস পর্যন্ত ওমান থেকে বাংলাদেশে রেমিটেন্সের পরিমাণ ছিল ৬২৮ মিলিয়ন ডলার। এ বছর সেই একই সময়ে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৬০৩ মিলিয়ন ডলারে।
ওমানের উর্ধ্বতন এক পুলিশ কর্মকর্তা এ ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় জানিয়েছেন, বাংলাদেশি শ্রমিকদের ওমানে আসার বিষয়টি সীমিত করা হচ্ছে।
ওমান সরকারের সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এ বছরের আগষ্ট পর্যন্ত ওমানে কর্মরত বাংলাদেশি শ্রমিকের সংখ্যা ৬ লাখ ৭৯ হাজার ৩৬৬ জন। এ বছরের জুলাই ওমানে বাংলাদেশি শ্রমিকের সংখ্যা ছিল ৬ লাখ ৫৮ হাজার ৮২০ জন।
আরআর