বিশ্বনবী মহামানব হযরত মুহাম্মদ সা. বলেছেন, আল্লাহ রাব্বুল আলামীন পৃথিবীটাকে মাছির ডানাও মনে করেন না, যদি মনে করতেন তাহলে কোন কাফের (বিশ্ব¯্রষ্ঠা-তামাম দুনিয়ার মালিকও প্রভু অল্লাহ পাককে অস্বীকারকারী) এক ফোটা পানিও খেতে পেত না। মহানবীর যুগের মানুষদের কাছে এ কথাটি বিশ্বাস করা কঠিন ছিল। এত বড় পৃথিবী… আর মুহাম্মদ সা. বলছেন তার প্রভু এটাকে মাছির ডানার মতও মনে করেন না। কিন্তু যেহেতু মুহাম্মদ বলেছে, তাই তারা তাদের দেয়া নাম আলামীন (বিশ্বাসী) এর কথা বিশ্বাস করেছে। তখন মক্কা থেকে মদিনা যেতে বা মদিনা থেকে তায়েফ যেতে বা মদিনা থেকে সিরিয়া যেতে সপ্তাহ-মাসের খাবার, রসদ, দীর্ঘ সময়ের রাস্তার খরচের অর্থ-কড়ি নিয়ে বেড় হতে হত। মহানবীর কোন বানী বা পত্র নিয়ে দীর্ঘ পথের যাত্রায় সাহাবীরা বের হতেন, তারা সুদূর চিনেও গেছেন ইসলামের বাণী পৌঁছে দিতে। তাদের কাছে গোটা পৃথিবীকে মাছিতূল্য বলা বিষ্ময়কর ছিল, কিন্তু তারা জানতেন এটাই সত্য। এই সত্যটি দেড়হাজার বছর পর এখন বিজ্ঞানিরা প্রমাণের মাধ্যমে সাড়ে সাতশত কোটি মানুষের দুনিয়াকে জানান দিলেন ইসলামের নবী তার নিজের কোন কথা বলেন নি সবই ছিল অহির বাণী। মহাসত্য। আসলেই পৃথিবীটা বিশ্বসৃষ্ঠির তুলনায় মাছির ডানার চেয়েও ক্ষুদ্র। আলোর গতি প্রতি সেকেন্ডে একলক্ষ ছিয়াশি হাজার মাইল। এরকম গতিতে অনেক গ্রহ থেকে আলো ছুটে আসছে পৃথিবীর দিকে- লক্ষ-লক্ষ, কোটি-কোটি বছর ধরে, কিন্তু এখনও পৃথিবীতে এসে পৌঁছেনি।
তাহলে সেই গ্রহ বা নক্ষত্র, পৃথিবী থেকে কত বিলিয়ন-বিলিয়ন-বিলিয়ন মাইল দূরে। সবচাইতে কাছে যে মঙ্গল গ্রহ তাও পৃথিবী থেকে কয়েকশ কোটি মাইল দূরে, নাসা বিজ্ঞানীদের মঙ্গলে পাঠানো পাথ ফাইন্ডার (৫০,০০০ মাইল গতিতে) পৌঁছতে সময় লেগেছিল সাত বছর। এই সপ্তাহের বিজ্ঞানীদের সবশেষ বড় খবর হল দূর বহুদেূরের ২ টি গ্রহ তারা দেখেছেন যেগুলোতে বিশাল মহাসাগর রয়েছে এবং যেগুলোর তুলনায় পৃথিবী ছোট্র এক টুকরা মরূভূমি। আমাদের দৃশ্যমান সূর্য্য ছাড়াও আরও সূর্য্য রয়েছে। আছে চাঁদও। সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি।
আমরা জানি প্রশান্ত মহাসাগরের গভীরতা গড়ে প্রায় সাড়ে সতের কিলোমিটার, আটলান্টিক মহাসাগরের গভীরতা সাড়ে সাত কিলোমিটার। অথচ দূরের সেই গ্রহের তুলনায় এগুলো মরূভূমি!! কী বিষ্ময়কর!! সেই মহান প্রভূ আল্লাহপাক কুরআনের সুরা ইয়াসিন এর ৪০ নং আয়াতে বলেছেন, ‘সূর্য্যরে ক্ষমতা নাই যে, উহা চাঁদকে ধরিয়া ফেলে, আর না রাত দিনকে ছাড়াইয়া আগাইয়া যাইতে পারে; সব কিছুই মহাশূন্যে সাতার কাটিতিছে।’
মহাশূন্যের চন্দ্র-সূর্য্য,সকল গ্রহ নক্ষত্র, আসমান জমিনের সবকিছু মহান প্রভুর জিকিরে (আল্লাহ পাককে স্মরণ করে-কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে) সতত লিপ্ত আছে। এ কথাটিও কুরানের বহু সুরায় বলা আছে। তবু ও মানুষ সংশয়ে ভোগে তার স্রষ্ঠার এত শত নেয়ামত ভোগ করে। মানুষের শেরক-কুফর দেখে নবী ইবরাহীম আ. তাই প্রভুকে বলেছিলেন, সুরা শুআরায় বর্ণিত, ‘এই কথা শুনিয়া ইব্রাহিম বলিল, ‘তোমরা কখনও (চক্ষু মেলিয়া) এই জিনিষগুলোকে দেখিয়াছ কি যেগুলোর বন্দেগী তোমরা ও তোমাদের বাপ-দাদারা করিয়া আসিতেছে? ইহারা সবই তো তোমার দুশমন, কেবল রাব্বুল আলামীন ছাড়া, যিনি আমাকে পয়দা করেছেন এবং অতঃপর আমাকে পথ প্রদর্শন করেছেন। যিনি আমাকে খাওয়ান ও পান করান। আর যখন রোগাক্রান্ত হয়ে পড়ি তখন আমাকে আরোগ্য দান করেন। যিনি আমাকে মৃত্যু দিবেন এবং পরে আবার জীবন দান করবেন। আর যাহার নিকট আমি আশা পোষণ করি যে, বিচার দিনে তিনি আমার ত্রƒটিসমূহ মাফ করে দিবেন।’ (৭৫-৮২ আয়াত)
নবী ইবরাহীম আ. এ আহবান ও দোয়া খুবই হৃদয়গ্রাহী ছিল এবং কাফেরদের বিশ্বাসে কাঁপন ধরিয়ে দিয়েছিল। ইসলামের নবী যে পৃথিবীটাকে মাছির ডানার চেয়ে ছোট বলে গেছেন, আজকে যা বিজ্ঞানীরা ছোট্টমরূভূমি বলতেও দ্বিধা করেন, সেখানে বসে ক্ষমতার বড়াই করার সুযোগ কই? যার জমিনে দাঁড়িয়ে আছি, যার বাতাস টানি সেই প্রভু মাওলাজির শোকরিয়া না করে জীবন যাপনকারীরা একটু ভাববেন কি?
লেখক: কুরআন ও বিজ্ঞান গবেষক