হাসান মুহাম্মদ জামিল
সময়ের সবচেয়ে আলোচিত বিষয় কওমী স্বীকৃতি। পক্ষে-বিপক্ষে, ধরণে-পদ্ধতিতে নানা জল্পনা, নানা কল্পনা!
বিতর্কের তুঙ্গে --কাদের হাতে আসবে স্বীকৃতি।
সে বিষয়ে পরে আসছি। প্রথম কথা হচ্ছে স্বীকৃতি নেবো কি নেবো না।
এখানে মিশ্র মত আমার; স্বীকৃতির উদ্দেশ্যটা কি তা আগে পরিষ্কার হোক।
উদ্দেশ্য যদি হয় আত্মকেন্দ্রীক তথা এর ফলে আমি একটা ভালো চাকুরি পাবো, ভোগের দুনিয়ার আমিও একজন অংশিদার হবো, তবে আমি মনে করি এই উদ্দেশ্যে স্বীকৃতি নেওয়া মানে কওমী মাদ্রাসার আদর্শকে গলা টিপে হত্যা করা। কারণ এ শিক্ষাব্যবস্থার টার্গেট এটা নয়। আমাদের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য সূরা তাওবাহর ১২২ নংআয়াতে (وماكان المؤمنون لينفروا كافة .فلولا نفر من كل فرقة منهم طائفة ليتفقهوا في الدين ولينذروا قومهم اذارجعوا إليهم لعلهم يحذرون : আর সমস্ত মুমিনের অভিযানে বের হওয়া সঙ্গত নয়। তাই তাদের প্রত্যেক দলের একটি অংশ কেনো বের হলো না, যাতে দ্বীনের জ্ঞান লাভ করে এবং সংবাদ দান করে স্বজাতিকে, যখন তারা তাদের কাছে প্রত্যাবর্তন করবে, যেন তারা বাঁচতে পারে) সুস্পষ্ট করে বলা হয়েছে; এ টার্গেটেই আমাদের মেহনত চলছে যুগযুগ ধরে।
এখনো স্বীকৃতির উদ্দেশ্য এমনটিই যদি হয় তবে তা হতে পারে। উম্মাহর কাছে ব্যপকভাবে দ্বীন পৌঁছাতে কোথাও কোথাও স্বীকৃতির প্রয়োজন হয়, না হয় কেবল স্বীকৃতির দোহাই দিয়ে সে জায়গাগুলোতে ঢুকে পরবে স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী। বঞ্চিত হবে উম্মাহ সঠিক দ্বীন থেকে। তাই স্বীকৃতি নিজের জন্যে নয়, উম্মাহর জন্যেই প্রয়োজন!
দ্বিতীয় বিষয়টি সময়ের সবচেয়ে আলোচিত বিষয়; কার অধীনে আসবে স্বীকৃতি?
এ ক্ষেত্রে গোটা কওমী সমাজ আজ দ্বিধা-বিভক্ত!
কারণও সঙ্গত। সরকার দেবে স্বীকৃতি। স্বাভাবিক কারণেই তারা চাইবে তাদের অনুগত কারো হাতে তা তোলে দিতে। সে ক্ষেত্রে তাদের প্রথম পছন্দ আল্লামা ফরিদুদ্দীন মাসঊদ হাফি. ও মুফতি রুহুল আমীন হাফি.। তাঁদের পরিচয় নতুনকরে তোলে ধরার কিছু নেই, একজন কট্টর জামায়াত বিরুধিতায় আওয়ামীলীগের সঙ্গী হয়েছেন, আরেকজন আঞ্চলিকতার কারণে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আস্থাভাজন।
আর তাই সরকার তাঁদের দু'জনকে সামনে রেখে একটি কমিশন গঠন করে স্বীকৃতির কার্যক্রম এগিয়ে নিচ্ছে!
কিন্তু অপরদিকে আছে কওমী মাদ্রাসার মূল নেতৃত্বের শক্ত অবস্থান; যারা সবচেয়ে বড় কওমীবোর্ড বেফাকের বেনারে আল্লামা আহমদ শফী হাফি.-এঁর নেতৃত্বে সরকারঘোষিত সে কমিটিকে প্রত্যাখ্যান করেছে। মূল কারণ আল্লামা ফরিদুদ্দীন মাসঊদ সাহেবের উপর অনাস্থা। সে ইতিহাসও আমাদের অজানা নয়। নাস্তিক মুরতাদ বিরুধী আন্দোলনের সেই উত্তাল দিনগুলোতে হযরতের ভূমিকা ছিলো অনেকের কাছেই আপত্তিকর, প্রায় সকলের কাছে অপ্রত্যাশিত!
স্বীকৃতি বিষয়েও অনেকের ধারণা সরকার অনুগতদের মাধ্যমে স্বীকৃতির 'মুলা' দেখিয়ে কওমী শিক্ষা নিয়ন্ত্রণেরই ষড়যন্ত্র করছে! বিষয়টি অসত্যও হতে পারে, তবে বাস্তব হলে অবাক হবো না!
মাঝে দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন তৃতীয়পক্ষ, যারা আওয়ামীপন্থী নন, আবার বেফাকের অধিনেও নন; তাদের সংখ্যাটাও একেবারে কম নয়। তারা পুরোপুরি আস্থা রাখতে পারছেন না কারো উপরই! সরকার পক্ষেরটা স্পষ্ট, বেফাকের নেতৃত্বের উপরও নয়। কারণ আমার কাছে যা মনে হচ্ছে-হেফাজত আন্দোলনের ইতিহাস। এখন যারা বেফাকের বেনারে, তাদের অনেকেই হেফাজত আন্দোলনের বিতর্কিত নায়ক! যদিও বেফাকের নেতৃত্বে তাদের ভূমিকা একেবারেই 'নাই' পর্যায়ে, তবুও চুনে মুখপোড়ারা দইয়ে আঁতকে উঠবে এটাই স্বাভাবিক।
তাহলে সমাধান কোন পথে?
আমি ছোট মানুষ সমাধান দেওয়ার মতো যোগ্যতা, অবস্থান কোনটাই আমার নেই। তবুও কিছু পরামর্শ আমার ওয়ালেই লিখে রাখলাম, কারো ভালো লাগলে আলোচনা হতে পারে!
উপরে বর্ণিত তিন দলের সাথে বেফাক-হেফাজতের যে কোন প্রোগ্রামে উপক্ষিত চতুর্থ শক্তি চরমোনাই, যাদের রয়েছে বিশাল সমর্থকগোষ্ঠী। জাতির এমন ক্রান্তিকালে তাদের উপেক্ষা করার কোনো সুযোগ আছে বলে আমি মনে করি না।
প্রস্তাব:
চারগ্রুপের দ্বিতীয় সারির গ্রহণযোগ্য ব্যাক্তিদের নিয়ে একটা সমন্বয় কমিটি হতে পারে,
যেমন বেফাকের পক্ষে বন্ধুবর আল্লামা মামুনুল হক্ব হাফি., ফরিদুদ্দীন মাসঊদ সাহেবের পক্ষে তারঁ ছোটভাই প্রিয় বন্ধু আল্লামা আরীফুদ্দীন মা'রুফ হাফি.,
চরমোনাইয়ের পক্ষে মুফতি ফয়জুল কারীম হাফি., সিলেট- চট্রগ্রাম- গওহরডাঙ্গা-উত্তরবঙ্গসহ যেসব আঞ্চলিক বোর্ড আছে প্রত্যেক বোর্ডের মহাসচিব পর্যায়ের অথবা তাদের নির্বাচিত কোন প্রতিনিধি।
এই কমিটি আগে নিজেরা বসে কর্মপন্থা ঠিক করবেন, আর বৈঠকগুলো হবে ঢাকার কোনো মাদ্রাসায়।
তারপর তারা সফর করবেন সব বড়দের কাছে, সকলের মতামত জানবেন, নিজেরা বসে সবগুলো মতকে সমন্বয় করে প্রস্তাবনা তৈরি করে জাতীয় ওলামা মাশায়েখ সম্মেলন ডাকবেন। সেখানে প্রস্তাবনা পেশ করে আলোচনার দুয়ার খুলে দেওয়া হবে। আলোচনা পর্যালোনায় সমাধান বেরিয়ে আসবে ইনশাআল্লাহ।
(আমি জানি ছোটমুখের বড় কথায় কেউ কেউ বিদ্রুপের হাসি হাসছেন, আমি আমার সামর্থের সবটুকু ঢাললাম, মা'বূদের কাছে জবাবদিহিতার রাস্তা খুললাম, আপনি হাসতে থাকুন!!)
আরআর