এ এস এম মাহমুদ হাসান
সম্প্রতি কওমি মাদরাসার সরকারি স্বকিৃতির লক্ষে শিক্ষা মন্ত্রণালয় কৃতর্ক ঘোষিত নয সদস্য বিশিষ্ট কমিটি ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। এ নিয়ে কওমি অঙ্গনে পক্ষে বিপক্ষে নানান মত থাকলেও মূলত এ সরকারি স্বীকৃতি নিয়ে কওমি মাদরাসার আলেমগণ বাড়তি কি সুবিধা পাবেন এ নিয়ে এখনো ধু¤্রজাল রয়ে গেছে। কয়েকটি কওমি মাদরাসার ছাত্রদের প্রতিক্রিয়া জানতে চাওয়া হলে এমন চিত্রই ফুটে উঠেছে।
তবে সোমবার কওমি মাদারাসার বৃহত্তর বোর্ড বেফাকের সভাপতি আল্লামা আহমদ শফী দারুল উলুম দেওবন্দের মত শর্তহীন সরকারি স্বীকৃতির কথা বললেও সেটা সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা নেই এসব নামি দামি কওমি মাদরাসাগুলোর।
মিরপুর-১৪ নাম্বার জামেউল উলুম মাদরাসার ছানুবিয়ার ছাত্র মাহদি হাসানকে স্বীকৃতির ব্যপারে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, এ স্বীকৃতি দিয়ে আমরা কর্মজীবনে এর কতটুকু সুফল ভোগ করতে পারব জানি না। সরকারি কোন কোন সেক্টরে চাকরিরর সুযোগ পাব তা আমাদের কাছে পরিষ্কার নয়। বিষয়গুলো পরিষ্কার হওয়া দরকার।
একই মাদরাসার দওরায়ে হাদিসের ছাত্রদের কাছে জানতে চাওয়া হলে কওমি সনদে সরকারি স্বীকৃতি প্রদানে খুশি হলেও এর সুদূর প্রসারী সুফল নিয়ে উল্টো প্রতিবেদকের কাছে প্রশ্ন করে বসে। মূলত ছাত্ররা কওমি মাদরাসার ভবিষ্যৎ পরিণতির কথা চিন্তা না করলেও তাদের সরকারি সনদে কী উপকার বয়ে আনবে তা কোনো ছাত্রই খোলাসা করে বলতে পারেনি। তারা কৌতূহলি হয়ে নিজেরাই সুফলের বিভিন্ন দিক নিয়ে বিশ্লেষণ করে শোনালেও ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, কওমি মাদরাসায় দেশ-বিদেশের চলমান ঘটনা ও খবর জানতে দৈনিক পত্রিকা পড়া নিষিদ্ধ। এছাড়া দু’একটি কওমি মাদরাসা ছাড়া অধিকাংশ মাদরাসায় আইটি ও আধুনিক বিশ্ব সম্পর্কে জানার সুবিধা নেই। ফলে অনেকাংশেই চলমান সমাজ ব্যবস্থা সম্পর্কে নিজেদের অক্ষমতার কথা প্রকাশ পায়।
তবে তারা আশাবাদী, যদি চলমান বিশ্ব সম্পর্কে তাদের জানতে সুযোগ দেওয়া হয় তাহলে তারা আরো এগিয়ে যাবে এবং সরকারি যে কোনো সেক্টরে সুনামের সাথে কাজ করতে পারবে।
এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রাজধানী মিরপুরের এক কওমি মাদরাসার প্রিন্সিপাল আওয়ার ইসলামকে বলেন, কওমি মাদরাসার সরকারি স্বীকৃতির সুফল-কুফল পরে থাক, আমার প্রশ্ন হলো কওমি মাদরাসার স্বীকৃতি নিয়ে যেখানে আমাদের বেশি আনন্দিত হওয়ার কথা, সেখানে কেন আওমী লীগের উর্ধ্বতন কর্মীরা বেশি আনন্দিত? তার মানে যখন দেশে নির্বাচন নিয়ে তোড়জোড় চলছে ঠিক সেই মুহূর্তে স্বীকৃতির জন্য সরকারের বাড়তি আগ্রহ যথেষ্ট সন্দেহের উদ্রেগ করে। আগামী নির্বাচনি বৈতরণী পার হওয়ার জন্য সরকার আলেমদের মধ্যে ফাঁটল ধরানোর অপচেষ্টা করতে পারে। এটা বেফাক, হেফাজতে ইসলাম ও আলেমদের মাঝে ফাঁটল ধরানোর অপতৎপরতা কিনা সেদিকে আলেমদের তীক্ষ্ম খেয়াল রাখতে হবে।
ইমাম ও মাদরাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা আবদুল আজিজের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, কওমি মাদরাসার সূচনালগ্ন থেকে কওমি মাদরাসার বিপরীতে নেজাম ও নেসাব ঠিক রেখে প্রতিষ্ঠিত হওয়া আলিয়া মাদরাসা কালক্রমে আমাদের এই সময়ে এসে একটি অগ্রহণযোগ্য শিক্ষাব্যবস্থায় পরিণত হয়েছে। আলিয়া মাদরাসায় শুধুমাত্র সরকারি স্বীকৃতি থাকার দরুন তারা এখন খুড়িয়ে খুড়িয়ে চললেও তাদের শিক্ষাব্যবস্থায় আমল আখলাক ও দ্বীনদারিতার বালাই নেই। ঠিক তেমনি এখন সরকারি নিয়ন্ত্রণে স্বীকৃতি নিলে কালক্রমে কওমি মাদরাসাও নিঃসন্দেহে তার স্বকীয়তা হারাবে। তাছাড়া কওম তথা সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ারও প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে। এটা ইহুদি, খিষ্ট্রানদের দূরদর্শী নীল নকশা। তাছাড়া প্রত্যক্ষভাবে কোনো মাদরাসা যদি সরকারি অনুদানে চলে বা অনুদান পায়, তাহলে ধীরে ধীরে জনগণের উপর নির্ভরশীলতা কমে গিয়ে সরকারের উপর নির্ভরশীলতা বৃদ্ধি পাবে এবং পরবর্তীতে জনগন কওমি মাদরাসার উপর ভ্রুক্ষেপ কম করবে। এতে যে কোনো সরকার কওমি মাদরাসাগুলোকে তাদের নিয়ন্ত্রণে রেখে রাজনৈতিক হীনস্বার্থে ব্যবহার করার অবারিত সুযোগ পাবে।
সোশ্যাল মিডিয়ায় আলোচিত মুখ লাবিব আব্দুল্লাহর মতে, সরকারি স্বীকৃতি পেলে আগামী ২০৫০ সাল নাগাদ ভার্সিটির মত হয়ে উঠবে কওমি মাদরাসা। ছাত্রদের লাগামহীনতার সাথে সাথে উস্তাদদের প্রতি শ্রদ্ধাভক্তি থাকবে না। ফলে ছাত্রদের উগ্রতা ও উচ্ছংখলা বৃদ্ধি পাবে। তাছাড়া কওমি মাদরাসার মূল উদ্দেশ্য আমল ও আখলাকে চরম অবনতি ঘটবে। এমনকি ধীরে ধীরে কম্মাইন্ড তথা পুরুষ মহিলা একত্রে ক্লাশ করানোর মত ঘৃন্য সিদ্ধান্ত আসবে। যা কওমি চেতনার বিরোধী। দেওবন্দের উসুলে হাস্তেগানার পরিপন্থি।
আগামী ১৭ অক্টোবর বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়ার উদ্যোগে কওমী মাদরাসার সনদের ব্যপাবে একটি জাতীয় কনভেনশন করার কথা রয়েছে। ঐ কনভেনশনে স্বীকৃতির ব্যপারে একটি সুচিন্তিত সিদ্ধান্ত আসবে বলে বোদ্ধামহল ধারণা করছেন।
আরআর