সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪ ।। ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
চিকিৎসকরা বছরে দুইবারের বেশি বিদেশ যেতে পারবেন না ঢাকা থেকে ভাঙ্গা হয়ে খুলনায় গেলো পরীক্ষামূলক ট্রেন নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করবেন প্রধান উপদেষ্টা: প্রেস উইং ধর্মীয় মূল্যবোধ ও সাম্যের ভিত্তিতে সংবিধান রচনার আহ্বান নেপালে ফের কুরআন প্রতিযোগিতার আয়োজন করছে সৌদি আগামীকাল সংবিধান সংস্কার কমিশনে প্রস্তাবনা পেশ করবে ইসলামী আন্দোলন ‘আল্লামা আতহার আলী রহ. জীবন, কর্ম, অবদান’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন আগামীকাল হাজী ইমদাদুল্লাহ মুহাজিরে মক্কী রহ. : কে এই মহান ব্যক্তি হাজিদের স্বার্থ রক্ষায় সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ : ধর্ম উপদেষ্টা মহানবীকে সা. নিয়ে কটূক্তি করলে সংবিধানে শাস্তির বিধান রাখার প্রস্তাব পার্থের

হজরত মুসা আ. যে কারণে মিসর ত্যাগ করেছিলেন

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

musa-asমাওলানা সালাহউদ্দীন জাহাঙ্গীর

ফেরআউনের প্রাসাদে প্রতিপালিত হওয়ার সময় একদিন যুবক মুসা [আ.] লোকালয় ছেড়ে শহরের এক প্রান্তের দিকে যাওয়ার সময় দেখলেন যে, একজন মিসরীয় লোক এক ইসরাইলি ব্যক্তিকে কামলা খাটানোর জন্য টেনে-হিঁচড়ে নিয়ে যাচ্ছে। ইসরাইলি ব্যক্তি মুসা [আ.]-কে দেখে সাহায্য প্রার্থনা করলো। মিসরীয় ব্যক্তির এ-ধরনের জুলুম দেখে হজরত মুসা [আ.] ক্রোধান্বিত হয়ে তাকে নিবৃত্ত করার চেষ্টা করলেন। কিন্তু মিসরীয় লোকটা তাঁর কথা কানেই তুললো না। মুসা [আ.] ক্রোধের সঙ্গে সজোরে এক চড় কষালেন। মিসরীয় লোকটা চড়ের আঘাত সহ্য করতে না পেরে সঙ্গে সঙ্গে মারা গেলো।

এই ঘটনায় মুসা [আ.] অনুতপ্ত হলেন। কেননা, লোকটাকে মেরে ফেলার উদ্দেশ্য তাঁর আদৌ ছিলো না। তিনি অনুতপ্ত ও লজ্জিত হয়ে মনে মনে বললেন, এটা নিশ্চয় শয়তানের কাজ, সে-ই মানুষকে ভ্রান্ত পথে পরিচালিত করে। তিনি আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা করতে থাকলেন—হে আল্লাহ, যা-কিছু ঘটেছে অনিচ্ছাকৃতভাবে এবং অজ্ঞতার কারণে ঘটেছে। আমি আপনার দরবারে ক্ষমা প্রার্থনা করছি। ফলে আল্লাহ তাআলা তাকে ক্ষমা করে দিলেন এবং ক্ষমার সুসংবাদও প্রদান করলেন।

এদিকে শহরে মিসরীয় ব্যক্তির হত্যার সংবাদ ছড়িয়ে পড়লো। কিন্ত হত্যাকারীর কোনো সন্ধান পাওয়া গেলো না। অবশেষে মিসরীয়রা ফেরআউনের কাছে ফরিয়াদ জানালো যে, এই হত্যাকাণ্ড নিশ্চয় কোনো ইসরাইলি ব্যক্তি ঘটিয়েছে। সুতরাং আপনি এর বিচার করুন। ফেরআউন বললো, এভাবে সমগ্র গুষ্ঠি থেকে তো প্রতিশোধ নেয়া যাবে না, তোমরা এক কাজ করো, হত্যাকারীর সন্ধান করো। আমি অবশ্যই কর্মের পরিণতি পর্যন্ত পৌঁছে দেবো।

ঘটনাক্রমে পরের দিনও মুসা [আ.] শহরের শেষ প্রান্তে ভ্রমণ করছিলেন। তিনি দেখতে পেলেন গতকালের সেই ইসরাইলি ব্যক্তি জনৈক কিবতির (মিসরীয়) সঙ্গে ঝগড়া করছে এবং মিসরীয় ব্যক্তিকেই প্রবল মনে হচ্ছে। মুসা [আ.]-কে ইসরাইলি ব্যক্তি গতকালের মতো আজো তাঁর কাছে সাহায্য চাইলো এবং বিচার প্রার্থনা প্রার্থনা করলো।
এই ঘটনা দেখে মুসা [আ.] দ্বিগুণ অসন্তোষ অনুভব করলেন। একদিকে মিসরীয় ব্যক্তির জুলুম, অপরদিকে ইসরাইলি ব্যক্তি চিৎকার-চোঁচামেচি এবং গতকালের ঘটনার স্মরণ—এসব বিরক্তির মধ্যে তিনি মিসরীয় ব্যক্তিকে নিবৃত্ত করার জন্য হাত বাড়ালেন। আর সঙ্গে সঙ্গে ইসরাইলি ব্যক্তিকেও ধমক দিয়ে বললেন, ‘তুই তো স্পষ্টই একজন বিভ্রান্ত লোক।’ অর্থাৎ অযথা ঝগড়া বাধিয়ে সাহায্যের জন্য প্রার্থনা করতে থাকিস!

ইসরাইলি ব্যক্তি হজরত মুসা [আ.]-কে তার দিকে হাত বাড়াতে দেখে এবং তার সম্পর্কে অসন্তুষ্টিমূলক কঠিন কথা শুনে মনে করলো যে, ইনি এখন তাকে প্রহার করার জন্যই হাত বাড়িয়েছেন এবং তাকে ধরতে চাচ্ছেন। তখন সে উদ্বেগের সঙ্গে বলে উঠলো—

فَلَمَّا أَنْ أَرَادَ أَنْ يَبْطِشَ بِالَّذِي هُوَ عَدُوٌّ لَهُمَا قَالَ يَا مُوسَى أَتُرِيدُ أَنْ تَقْتُلَنِي كَمَا قَتَلْتَ نَفْسًا بِالْأَمْسِ إِنْ تُرِيدُ إِلَّا أَنْ تَكُونَ جَبَّارًا فِي الْأَرْضِ وَمَا تُرِيدُ أَنْ تَكُونَ مِنَ الْمُصْلِحِينَ

‘গতকাল তুমি এক ব্যক্তিকে যেভাবে হত্যা করেছো, সেভাবে কি আমাকেও হত্যা করতে চাচ্ছো? তুমি তো পৃথিবীতে স্বেচ্ছাচারী হতে চাচ্ছো, শান্তি স্থাপনকারী হতে চাচ্ছো না।’ [সুরা কাসাস : আয়াত ১৯]

মিসরীয় লোকটি এসব কথা শুনে তৎক্ষণাৎ ফেরআউনের পারিষদবর্গের কাছে গিয়ে সমস্ত ঘটনা শুনালো। তারা ফেরআউনের কাছে গিয়ে জানালো যে, মুসা গতকালের মিসরীয় ব্যক্তির হত্যকারী। ফেরআউন এ-কথা শুনেই জল্লাদকে নির্দেশ দিলো, এখনই গিয়ে মুসাকে গ্রেপ্তার করে আমার সামনে উপস্থিত করো।

সূত্র : কাসাসুল কুরআন, তাফসিরে ইবনে কাসির

-প্রিয়ইসলাম


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ