রোকন রাইয়ান
বাংলাদেশ কওমি মাদরাসা শিক্ষার সনদের স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য আবারও উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এজন্য বাংলাদেশ কওমি মাদরাসা শিক্ষা কর্তৃপক্ষ আইনের খসড়া পর্যালোচনা করে সুপারিশ দেওয়ার জন্য আলেম-ওলামাদের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করে দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ৯ সদস্যের এই এই কমিটি আহ্বায়ক ইকরা বাংলাদেশের পরিচালক ও শোলাকিয়া ঈদগা মাঠের খতিব মাওলানা ফরিদ উদ্দীন মাসউদ, সদস্য সচিব মাওলানা রুহুল আমিন।
বাংলাদেশ কওমি মাদরাসা শিক্ষা কর্তৃপক্ষ আইনের খসড়া পর্যালোচনা করে সুপারিশ দেওয়ার জন্য আলেম-ওলামাদের সমন্বয়ে কমিটি ঘোষণার পর থেকেই খুব গুরুত্বের সঙ্গে আলোনায় আসছে, বাংলাদেশ কওমি মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড-বেফাকের অবস্থান নিয়ে। কমিটিতে অনেকটা মাইনাস পয়েন্টে থাকা বেফাক এখন কী করবে। দীর্ঘদিন কওমি মাদরাসার সিলেবাস প্রণয়ন, কারিকুলাম দেওয়া, পরীক্ষা গ্রহণ ও মাদরাসাগুলোকে ঐক্যবদ্ধ রেখে প্রতিনিধিত্ব করা বেফাক স্বীকৃতি বিষয়ে কোন দিকে যাবে।
বিজ্ঞমহল মনে করছেন, বেফাকের সামনে দুই পথ- এক. সমন্বয় করে শর্ত সাপেক্ষে স্বীকৃতির পথ সুগম করা দুই. প্রত্যাখানের সেই পুরোনো পথ। হাটহাজারিতে আজকের স্বীকৃতি বিষয়ক এই বৈঠক ইতিহাসের নতুন অধ্যায় রচনাও করতে পারে অথবা আলো-আধারির ঘোর অন্ধকার তৈরি করতে পারে। কওমি মাদরাসা একাধিক নেতাই মনে করছেন, অনেকটা রাজনৈতিক প্রভাবিত সিদ্ধাতও আসতে পারে। তবে বৈঠকে অংশ গ্রহণকারী একাধিক নেতা নামপ্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, কমিটির গুরুত্বপূর্ণ দুটি পদেই সরকারঘেঁষা আলেম, রাজধানী ঢাকাসহ কওমি মাদরাসার প্রতিনিধিত্বশীল আলেমের উপস্থিতি কমিটিতে একদমই নেই। তাই এই কমিটি প্রত্যাখানের আশঙ্কাই বেশি।
এদিকে আওয়ার ইসলামকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বেফাকের সহ-সভাপতি, মালিবাগ জামিয়ার প্রিন্সিপা আল্লামা আশরাফ আলী বলেন, বেফাক শর্ত সাপেক্ষে স্বীকৃতির পক্ষে। কমিটি বিষয়েও তার বক্তব্য স্পষ্ট, তিনি বলেছেন, কমিটির সকলেই কওমি মাদরাসার লোক। বেফাকের প্রতিনিধি আছেন, মাওলানা আনোয়ার শাহ, ফরিদাবাদের মাওলানা আব্দুল কুদ্দুস। অবশ্য বেফাকের আরও একজন নেতা আরজাবাদ মাদরাসা প্রিন্সিপাল, মাওলানা মস্তোফা আজাদ বলেছেন, দেশের অধিকাংশ মাদরাসা পরিচালিত হয় বেফাকের অধিনে, কমিটিতে বেফাককে উপেক্ষা করা উচিত হবে না।
হাটহাজারিতেই সিদ্ধান্ত হবে স্বীকৃতির বিষয়ে। কমিটিতে জায়গা পাওয়া বেফাকের সহ-সভাপতি আল্লামা আনোয়ার শাহ আওয়ার ইসলামকে জানান, সরকারের ভাবসাব দেখে মনে হচ্ছে স্বীকৃতি দিবেই। সুতরাং স্বীকৃতি আমাদের আওয়তায় রাখার জন্য চেষ্টা করতে হবে। মাঠ পর্যায়ের জরিপও স্বীকৃতির পক্ষে বলে দাবি করেন আল্লামা আনোয়ার শাহ।
দীর্ঘ থেকেই কওমি সনদের স্বীকৃতি দাবি জানিয়ে আসছেন আলেমরা। গত বিএনপি জোট সরকারের আমলেও কওমি সনদের স্বীকৃতি নিয়ে বেশ পানি ঘোলা হয়েছে।
এদিকে কওমি মাদরাসার শিক্ষা ব্যবস্থাপনা, শিক্ষাদানের বিষয় এবং কওমি মাদরাসা শিক্ষা সনদের সরকারি স্বীকৃতি দেওয়ার লক্ষ্যে সুপারিশমালা প্রণয়নের জন্য ২০১২ সালের ১৫ এপ্রিল ১৭ সদস্যের ‘বাংলাদেশ কওমি মাদরাসা শিক্ষা কমিশন’ গঠন করা হয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, ওই কমিটিতে চট্টগ্রামের হাটহাজারী মাদরাসার মহাপরিচালক আল্লামা আহমেদ শফিকে প্রধান করা হয়েছিল। এই কমিটিতে কো-চেয়ারম্যান ছিলেন নতুন কমিটির প্রধান ফরিদ উদ্দীন মাসউদ। বেশ কিছুদিন আগে যখন এই কমিশন নীতিমালা চূড়ান্ত করে এবং মন্ত্রী পরিষদে বৈঠকে আলোচনায় ওঠার দিন-তারিখ ঠিক করা হয়, তখন হেফাজতের মহাসচিব আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগনী, কমিশনের কঠোর সমালোনা করেন এবং মন্ত্রী পরিষদে বাংলাদেশ কওমি মাদরাসা শিক্ষা কমিশন পাশ হলে, লাশ ফেলার হুমকি দিয়ে ছিলেন। তখন সরকার আইন পাশ করা থেকে বিরত থাকে।
আরো পড়ুন
জরিপে দেখা যাচ্ছে স্বীকৃতির জন্য শিক্ষার্থীরা উতলা হয়ে আছে: মাওলানা আনওয়ার শাহ শর্ত মেনে স্বীকৃতি দিলে বেফাক পক্ষে থাকবে – শাইখুল হাদিস আল্লামা আশরাফ আলী
এইচএ