সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪ ।। ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
চিকিৎসকরা বছরে দুইবারের বেশি বিদেশ যেতে পারবেন না ঢাকা থেকে ভাঙ্গা হয়ে খুলনায় গেলো পরীক্ষামূলক ট্রেন নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করবেন প্রধান উপদেষ্টা: প্রেস উইং ধর্মীয় মূল্যবোধ ও সাম্যের ভিত্তিতে সংবিধান রচনার আহ্বান নেপালে ফের কুরআন প্রতিযোগিতার আয়োজন করছে সৌদি আগামীকাল সংবিধান সংস্কার কমিশনে প্রস্তাবনা পেশ করবে ইসলামী আন্দোলন ‘আল্লামা আতহার আলী রহ. জীবন, কর্ম, অবদান’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন আগামীকাল হাজী ইমদাদুল্লাহ মুহাজিরে মক্কী রহ. : কে এই মহান ব্যক্তি হাজিদের স্বার্থ রক্ষায় সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ : ধর্ম উপদেষ্টা মহানবীকে সা. নিয়ে কটূক্তি করলে সংবিধানে শাস্তির বিধান রাখার প্রস্তাব পার্থের

দৈনন্দিন জীবনে সুন্নত : মায়ের শিক্ষা সন্তানের সারা জীবনের পাথেয়

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

tasbihvবিনতে যাইনুল আবিদীন : কিছুদিন আগের কথা। এক ভদ্র মহিলার সামনে তার সাত আট বছরের সন্তান চিপ্স খাচ্ছে। ডান হাতে চিপ্সের প্যাকেট, বাম হাত দিয়ে নিয়ে নিয়ে খাচ্ছে। মা দেখছেন, কিছু বলছেন না। বা বিষয়টি খেয়াল করছেন না। আমার মনে হল, আমিই শিশুটিকে বলি, বাবা! ডান হাত দিয়ে খাও।

মনে পড়ে গেল ছোট্ট বালক ওমর ইবনে আবি সালামা রা.-এর কথা। তিনি খাচ্ছিলেন নবীজীর দস্তরখানে। ছোট্ট বালক বলে কথা, সে তো এদিক সেদিক করবেই! তেমনি ওমর ইবনে আবি সালামা রা.-ও একবার খাচ্ছিলেন পাত্রের এপাশ থেকে আরেকবার ওপাশ থেকে। এ দেখে নবীজী কী করলেন?

ওমর ইবনে আবি সালামা রা.-এর মুখ থেকেই শোনা যাক। তিনি বলেন, আমি নবীজীর তত্ত্বাবধানে ছিলাম। আমি ছিলাম ছোট্ট বালক। একদিন নবীজীর সাথে খানা খাচ্ছিলাম। আমার হাত পাত্রের এদিক ওদিক ঘোরাঘুরি করছিল। তা দেখে নবীজী (আমাকে খাওয়ার আদব শেখালেন।) বললেন, বৎস! বিসমিল্লাহ বল। ডান হাতে খাও এবং তোমার কাছ থেকে খাও।

ওমর ইবনে আবি সালামা রা. বলেন, নবীজী আমাকে শেখানোর পর থেকে সারা জীবন আমি ওভাবেই খেয়েছি। -সহীহ বুখারী, হাদীস ৫৩৭৬; সহীহ মুসলিম, হাদীস ২০২২

নবীজী একবার মাত্র শিখিয়েছেন। সেই ছোট্ট বেলায়। এটা তার সারা জীবনের পাথেয় হয়ে রয়েছে। ছোটদের বিষয়টি এমনই। ছোট বেলা মায়ের অথবা বাবার শেখানো দুআ-আদব সারা জীবনের পাথেয় হয়ে থাকে, জীবনের শেষ পর্যন্ত মনে থাকে, আমল চলতে থাকে।

এখানে বিশেষ শিক্ষণীয় বিষয় হল, নবীজী তাকে ওভাবে খেতে দেখে এটা ভাবেননি যে, ছোট্ট বালকই তো; বড় হলে ঠিক হয়ে যাবে। বরং তাকে শিখিয়েছেন। কারণ, বালক বয়স আদব-আখলাক শেখার বয়স। এ সময় শিশুর মাঝে গ্রহণের ও অনুকরণের একটি প্রবণতা থাকে

সাত বছর বয়স তো বালক বয়সই। এ সময়টাই তো শিশুর নামায শেখার এবং নামাযের অভ্যাস করার বয়স। সন্তানের সাত বছর বয়স হলেই তো নবীজী তাদেরকে নামাযের নির্দেশ দিতে বলেছেন; অভ্যাস করাতে বলেছেন। সুতরাং এ বয়সটাতে জীবনের অন্যান্য আদব-আখলাক শেখানোর প্রতিও যতœবান হতে হবে।

এর দ্বারা এটা উদ্দেশ্য নয় যে, সাত বছরের আগে শেখাতে হবে না; আরো আগ থেকেই শেখাতে হবে। বরং বোল ফোটার পর থেকেই শেখাতে হবে কালিমা। খাওয়ার সময় বলতে হবে- আব্বু বিসমিল্লাহ বল, আলহামদুলিল্লাহ বল। কেউ কিছু দিলে- বল জাযাকাল্লাহ।

আমি তো কোনো কোনো দ্বীনদার মা’কে দেখেছি। তার কোলের শিশুকে খাওয়াচ্ছেন তো খাওয়ানো শুরু করার সময় বলছেন, বিসমিল্লাহ। পোশাক পরাচ্ছেন; বলছেন, বিসমিল্লাহ। পোশাক ডান দিক থেকে পরাচ্ছেন। কোলের শিশু এ থেকে হয়তো কিছুই শিখবে না, বুঝবে না। কিন্তু এটা পরোক্ষভাবে তার জীবনের উপর প্রভাব ফেলবে। সন্তান নেক হতে সহায়তা করবে।

অনেক শিশুরই ঘুমের দুআ, ঘুম থেকে ওঠার দুআ, খাওয়ার দুআ-আদব ইত্যদি দৈনন্দিনের দুআ-আমল মাদরাসায় এসে শেখা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়নি, বরং ‘মায়ের মাদরাসা’ থেকেই শিখে ফেলেছে। এ জন্য মা’কে আলাদা আয়োজন করতে হয় না। খাওয়ার সময় খাওয়ার দুআ ও সুন্নত;মা বলবেন- বিসমিল্লাহ, আলহামদু লিল্লাহ তো শিশু অবচেতনেই শিখে যাবে। বা একটু খেয়াল করে সন্তানের মুখে লোকমা তুলে দেওয়ার সময় যদি বলেন- আব্বু! বল, বিসমিল্লাহ। খাওয়া শেষ হলে-আব্বু বল তো, আলহামদু লিল্লাহ। ঘুমানোর সময়- আব্বু বল তো ঘুমের দুআটা কী? এভাবে আয়োজন ছাড়াই মায়ের মাদরাসায় শিশু দৈনন্দিন জীবনের দুআ ও সুন্নত শিখে যেতে পারে।

আর মায়ের কাছ থেকে শিশু যত দুআ-আমল শিখবে। সে অনুযায় জীবনে যত আমল করবে, এর একটি অংশ মায়ের আমল নামায়ও যুক্ত হতে থাকবে।

তবে মনে রাখতে হবে, সন্তানকে দুআ-আমল শেখাতে গিয়ে চাপাচাপি করা উচিত নয়। আগ্রহের সাথে যেন সে শিখতে পারে সে ব্যবস্থা করতে হবে। একই বিষয়ে একেকজনের ক্ষেত্রে একেক ফর্মূলা কার্যকর। সকলের ক্ষেত্রে একই পন্থা চলে না। কিন্তু তার শেখাটা যেন আগ্রহের সাথে হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে, তাহলে এ শিক্ষার ফলাফল সুদূরপ্রসারী হবে।

সন্তান সহজে যাতে দৈনন্দিন জীবনের দুআ-সুন্নত শিখে নিতে পারে এ জন্য বিভিন্ন ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে। এক পরিবারে দেখেছি, খাওয়ার টেবিলের পাশের দেয়ালে খাওয়ার দুআ লিখে কালার পেন্সিল দিয়ে সুন্দর করে রং করে লটকিয়ে রেখেছে। তেমনি ঘরের দরজায় ঘর থেকে বের হওয়ার দুআ, বাথরুমের কাছাকাছি কোনো স্থানে বাথরুমের দুআ। এভাবে আকর্ষণীয়ভাবে পেশ করাতে সন্তানেরা আগ্রহের সাথে সহজে শিখে ফেলেছে।

এ সবকিছুর সাথে সাথে সবচেয়ে বড় কার্যকরি যে বিষয়টি তা হল, দৈনন্দিন আমলের দুআ-সুন্নতের ব্যাপারে মা-বাবাকে যতœবান হতে হবে। এটা বেশি ফলপ্রসূ। শিশু তখন মা-বাবাকে দেখতে দেখতে ভাববে- এভাবেই খেতে হয়, এভাবেই চলতে হয়।

সূত্র : আল কাউসার

এফএফ


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ