আশরাফুদ্দিন খান
ঠিক আজকের এই দিন থেকে পাঁচ বা দশ বছর পরে আমাদের অবস্থা কি হবে– তা আমাদের কারোই জানা নেই। অবস্থা-অবস্থান সম্পর্কে যেমন ধারণা নেই সেই সাথে জীবিত থাকা বা না থাকার সন্দেহটাও ভিত্তিহীন নয়। তবে এরপরেও জীবনের লক্ষ্য বা ভিশনের অর্থ হচ্ছে সেই অজানা ভবিষ্যতের একটা নির্ধারিত সময়ে এসে নিজের জীবনের একটা অবস্থা কল্পনা করা, সময় ও সুযোগ থেকে সবচেয়ে সুন্দর ও উত্তম অবস্থা অর্জনের প্রচেষ্ঠা করা।
‘সময়ের আগে চলা’ এই ধারণার সাথে আরেকটি ধারণা আছে ‘সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে চলা’। এর মাধ্যমে বুঝানো হয়, সময় বদলে গেছে তাই সময়ের সাথে সাথে নিজেদের চাল-চলন, পোশাক-পরিচ্ছের, রুচি-অভিরুচি, চিন্তা-চেতনা পাল্টে নেওয়া জরুরি। ধারণাটি অনেক ক্ষেত্রে নেতিবাচক ভাব বুঝাতেই ব্যবহার করা হয়ে থাকে, অর্থাৎ চলতি বাজারে সেকেলে ভাব-ধারণা পোষণ করার মানসিকতার সমালোচনা করা হয় এর মাধ্যমে। এখানে সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে চলার কথা বলা হয়নি, হয়েছে সময়ের আগে চলার।
বর্তমানের ঠিক এই মুহূর্তে আমরা ঠিক যেই অবস্থানে আছি সেই অবস্থানকে কেন্দ্র করে একটু চিন্তা করে দেখা যেতে পারে। আমাদের অবস্থা যাই হোক ছাত্র, চাকরিজীবী, ব্যবসায়ী, গবেষক, দ্বীনের দায়ী, সমাজসেবক...। বর্তমান অবস্থার বাইরে থেকে আজ থেকে– উদাহরণ হিসাবে- ৫ বছর পরের অবস্থা কল্পনা করা যেতে পারে। ৫ বছরের ব্যবধানে জীবনের এই সকল ক্ষেত্রে কি ধরনের পরিবর্তন ও অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে বা জীবনে কি কি অর্জন করা যেতে পারে। এমন একজন ছাত্রের কথা ধরা যেতে পারে যে বর্তমানে এমন অবস্থানে আছে যদি সবকিছু স্বাভাবিক থাকে তাহলে পাঁচ বছরের ব্যবধানে সে মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক স্তর সম্পন্ন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্তরে এসে উপনীত হবে। এই সময়টা জীবনের সবচেয়ে স্পর্ষকাতর সময়, এই সময়ের সঠিক পদক্ষেপ তার ভবিষ্যৎ জীবনের পুরা অবস্থা ও অবস্থানটাই পাল্টে দিতে পারে, আবার অদুরদর্শি পরিকল্পনার কারণে জীবনের বিশাল ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। পরবর্তীতে হাজার গুন বেশি প্রচেষ্টার মাধ্যমেও সেই ক্ষতি সহজে পূরণ করার মত নয়।
এটা গেল একজন ছাত্রের সাথে সম্পর্কিত বিষয়। এর বাইরে আমাদের যে অবস্থাই হোক না কেন, যদি সময়ের আগে ভেবে না দেখা হয় তাহলে বছরের পরে বছর অতিবাহিত হতে থাকবে, কিন্তু অবস্থার পরিবর্তন হবে না, কিংবা যা পরিবর্তন হবে তা হবে প্রকৃতির সাধারণ পরিবর্তন যৌবন, শক্তি-সামর্থ্য শেষ হয়ে বার্ধক্য ও মৃত্যুর আগমন।
আল্লাহ তায়ালা আমাদের দৃশ্তিশক্তি দিয়েছেন। এই দৃশ্তিশক্তি শুধুই সামনে দেখে, আমাদের দৃশ্তিশক্তির মাধ্যমে আমরা পেছনে দেখতে পারি না। কিন্তু বিষয়টি যখন জীবনের বৃহৎ পরিমণ্ডলের সাথে সম্পর্কিত হয় তখন দেখা যায় বেশির ভাগ সময় আমরা জীবনের সামনের দিনগুলোর অবস্থা দেখতে বা কল্পনা করতে পারি না, যা দেখি তা শুধুমাত্র অতীত বা পিছনের স্মৃতি।
২০১৬ সালে এসে আমরা কল্পনা করি আজ থেকে ৬ বছর আগে ২০১০ সালে লেখাপড়ার সুযোগটাকে ঠিকমত কাজে লাগাতে পারলাম না। অথচ দরকার ছিল ২০১০ সালে বসে ২০১৬ সালের অবস্থা কল্পনা করা, পরিকল্পনা করা। এটাই হচ্ছে সময়ের আগে চলা...
এটা গেল এই জীবনের ব্যাপার। এর বাইরে দুনিয়া আর আখেরাতের মাঝে তুলনা করে দুনিয়াতে থেকেই আখেরাতের প্রস্তুতি সম্পন্ন করা উচিত। আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেনঃ الكيس من دان نفسه وعمل لما بعد الموت... ‘বুদ্ধিমান সেই ব্যক্তি যে নিজের প্রবৃত্তি দমন করল এবং মৃত্যুর পরের জীবনের জন্যে প্রস্তুতি গ্রহণ করল...’।
আরআর