■ মুফতি মুঈনুল ইসলাম সাইয়িদপুরী
সার সংক্ষেপ
কুরবানির পশুর চামড়ার মূল্য এদেশের কওমী মাদরাসাগুলোর গুরাবা (দুঃস্থ ও এতিম ছাত্র সহায়তা) ফান্ড এর অন্যতম আয়ের উৎস। গরুর বা খাসির গোশতের যে মূল্য কিংবা আন্তর্জাতিক বাজারে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের যে মূল্য, সে হিসাবে অন্তত কুরবানির সময় মাদরাসাগুলো যে কারণেই হোক, ন্যায্য মূল্য পাচ্ছে না। চামড়ার ন্যায্য মূল্য প্রাপ্তি মাদরাসাগুলোর প্রতি দয়া নয়, এটা তাদের ভোক্তা অধিকার। অতএব এ বৈধ ভোক্তা অধিকার প্রতিষ্ঠায় মাদরাসাগুলোকেই কার্যকরী উদ্যোগ নিতে হবে। বের করতে হবে এর স্থায়ী সমাধান।
ভূমিকা
একটি বাংলা জাতীয় দৈনিকের একটি সংবাদ আমাকে আকৃষ্ট করেছে। সংবাদটির শিরোনাম ও একটি অংশ হুবহু তুলে ধরা হলো। ‘চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর এলাকার বালুবাগান মহল্লার আম আড়তদার মো. আসলাম বলেন, তিনি ৯ হাজার ৮০০ টাকায় একটি কুরবানির খাসি কিনেছিলেন। কুরবানির পর খাসিটির চামড়া তিনি বিক্রি করতে রিকশাযোগে পাঠিয়েছিলেন শহরের নিমতলা ফকিরপাড়া এলাকার একটি চামড়ার আড়তে। সেখানে খাসিটির চামড়ার দাম দেওয়া হয় মাত্র ৩০ টাকা। তিনি বলেন, তার বাড়ি থেকে চামড়া বিক্রি করতে আড়তে রিকশার যাতায়াত ভাড়াও ৩০ টাকা। চামড়া বিক্রেতারা অভিযোগ করে বলেন, ট্যানারি মালিকদের নির্ধারণ করে দেওয়া দামে কোনো চামড়াই কেনেনি তাড়তদাররা। তারা বিক্রেতাদের অর্ধেক দামে চামড়া বিক্রি করতে বাধ্য করেছে। বিক্রেতাদের অভিযোগ এবার সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ব্যবসায়ীরা চামড়ার দাম নিয়ন্ত্রণ করেছে।’ -বাংলাদেশ প্রতিদিন। ১৪ জিলহজ্জ ১৪৩৭ হিজরী, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ঈসায়ী।
আমিও ঢাকার একটি মাদরাসার একটি খাসির চামড়াবিক্রি করতে বাজারে দুজন শিক্ষককে রিকসা যোগো পাঠিয়েছিলাম। তাঁরা চামড়াটি বিক্রি করেন ১০ টাকায়। ঘটনাটি এবার ঈদের দিনের বিকালে তিনটার দিকের।
এদেশের মানুষ গরু, খাসি বা মহিষ কুরবানি দিয়ে ঈদ উদযাপন করেন। আর মাদরাসার ছাত্র শিক্ষকরা মাদরাসার কল্যাণে চামড়া কালেকশন করতে গিয়ে ঈদকে কুরবানি দিয়ে ঈদ উদযাপন করেন। ঈদের দিনে মাদরাসার ছাত্র-শিক্ষকদের রক্তমাখা জামা-পায়জামার দৃশ্য আমার হৃদয়ে রক্ত ক্ষরণ করায়। এদিন আমায় তাঁদের কারো দেখা হলে সশ্রদ্ধ সালাম নিবেদন করি এবং সত্যি সত্যি এ সময় আমার চোখে পানি এসে যায়। সাথে সাথে এ দৃশ্য দেখে আমার মনে অনেক কথা আসে, যা আমি এখানে লিখবো না। কেউ সাক্ষাতে শুনতে চাইলে বলবো। গরুর গোশ্ত যদি ৪০০ থেকে ৪৬০ টাকা ও খাসির গোশ্ত ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা হয়, তাহলে চামড়ার ন্যায্য মূল্য কতো হতে পারে, তা পাঠকই দয়া করে নির্ধারণ করবেন। অতএব এর একটি ন্যায় ভিত্তিক সমাধান আশু প্রয়োজন। এই লেখাটি লেখার শেষের দিকে গ্রহণযোগ্য সূত্রে শুনলাম, ট্যানারিওয়ালা একটি গরুর চামড়া মেশিন দিয়ে ফেড়ে তিনটি বানায়। এরপর প্রতিটি চামড়া রপ্তানি করে একশো ডলারে। আর বিজ্ঞজনদের পরিসংখ্যান মতে এ বছর প্রায় এক কোটি গরু-মহিষ কুরবানি হয়েছে। এর ৯০ থেকে ৯৫ শতাংশ চামড়া মাদরাসাগুলোতে দেয়া হয়েছে। এই যদি হয় বাস্তবতা, তাহলে কেন এই জুলুম? আর এর শেষই বা কোথায়!
এ বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যে এ দেশের সর্বজন শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিত্ব, মহান মুক্তিযুদ্ধের জীবন্ত কিংবদন্তি, বিশিষ্ট কলাম লেখক বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম তাঁর সাম্প্রতিক এক প্রবন্ধে লিখেছেন- ‘এমনিতেই দেশে জালিয়াতির শেষ নেই। এবার কুরবানির চামড়া নিয়ে যেভাবে গরিবের হক নষ্ট করা হলো, আল্লাহ সহ্য করবেন না। যারা কুরবানি দেন তারা চামড়া বেচার জন্য কুরবানি দেন না। চামড়া বেশির ভাগই গরিব-দুঃখীকে দেওয়া হয়। বিশেষ করে মাদরাসা, এতিমখানা, লিল্লাহ বোর্ডিংয়ে। এবার তাদের হক যেভাবে লুৃট করা হয়েছে, আমার বিশ্বাস আল্লাহ রাব্বুল আলামিন এটা সহজভাবে নেবেন না।’ -বাংলাদেশ প্রতিদিন। ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৬।
তাঁদের শ্রম ও ত্যাগের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করা উচিত
খৃস্টানদের আগ্রাসনের দরুণ স্পেনের শত শত বছরের মুসলিম আবাদী ও কৃষ্টি-সভ্যতার প্রায় সব শেষ হয়ে গেছে। এখানেও তাই হতো। কিন্তু আল্লাহর শোকর এখানে কওমী মাদরাসাগুলো আছে বলে, তেমনটি হয়নি। এছাড়া আর কোনো কারণ নেই। এঁরা না থাকলে ঢাকা মসজিদের নগরী হতে পারতো না। এঁরা না থাকলে শুধু বাংলাদেশেই ৪ লক্ষাধিক মসজিদ হতে পারতো না। সামপ্রদায়িক সম্প্রীতির এ অনন্য পরিবেশ আমরা পেতাম না। ‘ইনশাআল্লাহ’ বলে স্বাধীনতা সংগ্রামেও ঝাপিয়ে পড়া সম্ভব হতো না। আট আনা এক টাকা করে কালেকশন করে এঁরা ৩০ সহস্রাধিক কওমী মাদরাসা নামক আদর্শ, সভ্যতা, সততা, নিষ্ঠা ও দেশপ্রেমের ‘পাওয়ার হাউজ’ জিইয়ে রেখেছেন। আমাদের প্রতিটি মাদরাসা যেন চেতনার বাতিঘর। এদেশে অনেক ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আছে। এগুলো প্রায় সবগুলোতেই বাণিজ্যিক মুডটা প্রকট। আর কওমী মাদরাসাগুলো তো গরিব-এতিম ছাত্র-ছাত্রীদের শেল্টার সেন্টার। এখানে কথার চাইতে কাজ হয় অনেক অনেক গুণ বেশি। এগুলো শুধু বিদ্যালয় নয়, দীক্ষালয়ও বটে। বরং এগুলো শিক্ষাগুরু ও দীক্ষাগুরুর আলোকিত কানকাহ। এ প্রতিষ্ঠানগুলো দিনে বিদ্যালয় আর রাতে হয়ে যায় রীতিমতো খানকাহ তথা ইবাদতখানা। সংক্ষেপে বলা যায়, অপরাপর বিদ্যাপীঠগুলো হলো দানেশগাহ আর আমাদের মাদরাসাগুলো হলো দানেশমান্দদের ইবাদতগাহ। এ বিস্তর ফারাকটা এখানেই।
এঁরা নির্দিষ্ট কারো উপর ভরসা না করে উদ্যোক্তা হিসেবে কাজ করেন। থাকা খাওয়া, বই-পুস্তক, টিউশন ফি ইত্যাদি এমনকি লেখাপড়া পরবর্তী কর্মসংস্থানের এঁরা ব্যবস্থা করেন। চাকরি ও কর্মসংস্থানের জন্য সরকারের কাছে দাবি-দাওয়া বা মিছিল মিটিং করেন না। এ ধরনের চেতনা থেকেই অনাবিল আনন্দের বড় উৎসব ঈদুল আযহার দিনেও তাঁরা উদ্যোক্তার ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে চামড়া কালেকশন করেন। মুসলমান ভাই বোনদের কুরবানি যাতে সহিহ হয় এবং মহান আল্লাহর দরবারে তা কবুল হয়, সেজন্য জবাইতে ও অন্যান্য কাজে শরিক হয়ে তাঁদেরকে এ সময় সহযোগিতা করেন। অতএব এঁদের শ্রম ও ত্যাগের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করা উচিত।
জোনাকির মতো নিকষ আঁধারে নিজ আলোতে জ্বলে উঠুন
এ অধ্যায়ে আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম এর একটি সংগীতের চার লাইন পেশ করাটা খুব যথাযথ মনে করছি।
‘কারো ভরসা করিসনে তুই
এক আল্লাহর ভরসা কর, ও মন
আল্লাহ যদি সহায় থাকেন
ভাবনা কিসের, কিসের ভয়॥
অতএব সকল কিছু ছাপিয়ে আমি নিজের পায়ে দাঁড়ানোর পক্ষেই মতামত দিতে চাই। তাই বলবো- নিকষ আঁধারে জোনাকীর মতো নিজ আলোতে জ্বলে উঠুন।
কওমী মাদরাসা অঙ্গনে আমি একজন ‘তিফ্লে মকতব’। হ্যাঁ, যব ঘর মেঁ আগ্ লাগ জাতি হ্যায়, তব সব সে প্যাহলে আতফাল হি শোর মাচাতে হ্যাঁয়। ফের উসকে বাদ ব্যাড়ে আ-কে আগ নিভাতে হ্যাঁয়। সো মুঝ জায়সা এ্যাক ‘তিফ্লে মকতব’ শোর মাচা দিয়া। মুহতারাম আসাতিযায়ে (দা.বা.) বরাহে করম! আ-প হায্রাত আগ নিভায়েঁ।
মুরব্বিয়ানে কিরামের খিদমতে নিম্নোক্ত প্রস্তাবনাগুলো পেশ করলাম। গোস্তাখি দরগুজার হো। হা-যা কুল্লুহূ মিন ফিকরিস সাকিম। ওয়া ফাওকা কুল্লি জি ইলমিন আলিম।
১. ট্যানারি মালিকদের সাথে মুহতামিম মহোদয়গণ সরাসরি কিংবা বেফাকের সমন্বয়ে ঈদের আগে এ বিষয়ে বৈঠক করা যেতে পারে। সম্ভব হলে মাদরাসাগুলো ভিন্ন ভিন্নভাবেও নির্দিষ্ট ট্যানারি মালিকদের সাথে বৈঠক করতে পারেন। এ বৈঠকে মেহমানদারীর আয়োজনসহ মাদরাসাগুলোর সমাজ ও সামাজিকতায় গুরুত্ব বিষয়ক আলোচনা হতে পারে। এতে তাঁরা মাদরাসার চামড়া কেনার সময় ধর্মীয় দিকটাকে প্রাধান্য দিতে প্রয়াস পাবেন।
২. প্রতি ঈদে চামড়া শিল্প বিষয়ক সরকারের সংশ্লিষ্ট লোকদের সাথেও বৈঠক করা যেতে পারে। যাতে তাঁরা এ ব্যাপারে মাদরাসাগুলোর স্বার্থের স্বপক্ষে কাজ করতে উদ্যোগী হন। এ বৈঠক বেফাক কিংবা মাদরাসার প্রতিনিধিগণ আয়োজন করতে পারেন।
৩. অন্তত: ঢাকাকে জোন ভিত্তিক ভাগ করে অথবা নির্দিষ্ট ট্যানারীকে নির্দিষ্ট অঞ্চলে চামড়া ক্রয়ের প্রস্তাব দেয়া যেতে পারে। যাতে মাদরাসাগুলো চামড়া পরিবহনে যে হয়রানির শিকার হচ্ছে, তা থেকে নিস্কৃতি পেয়ে যায়।
৪. আমাদের প্রতি প্রচলিত ইসলামী ব্যাংকগুলোর দায়বদ্ধতা অনেক। অতএব কুরবানির চামড়া ক্রয়ের সময় ইসলামী ব্যাংকগুলো তাদের সাদাকাহ ফাণ্ড থেকে অনুদান অথবা অন্তত: করযে হাসানাহ দিয়ে মাদরাসার চামড়া ক্রয়ে সহায়তা করতে পারেন।
৫. সরকারি যাকাত বোর্ড ইসলামিক ফাউণ্ডেশন দেখাশুনা করে। ইফা, এ সময় যাকাত ফাণ্ড থেকে মাদরাসাগুলোকে একটি বড় সংখ্যার যাকাত দিয়ে চামড়া ক্রয়ে সহযোগিতা করতে পারে। এতে মাদরাসাগুলোর এতিম গরিব ফাণ্ড পুষ্ট হবে।
৬. ভোকেশনাল স্কুল ও টেকনিক্যাল ইনষ্টিটিউট থেকে শিক্ষক এনে কিংবা তাঁদের সাথে সমন্বয়ের মাধ্যমে শুধুমাত্র চামড়া শিল্পের উপর স্বল্পকালীন-সান্ধ্যকালীন কিংবা ফ্রাইডে ট্রেনিং এর ব্যবস্থা করা যেতে পারে। চামড়ার ন্যায্য মূল্য পেতে প্রয়োজনে প্রাথমিক প্রক্রিয়াগুলো মাদরাসায় যদি করা যায়, তাহলে সিন্ডিকেটের খপ্পড় থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে।
৭. আমাদের সুবিধা মতো, দীনদার ট্রেইনার দিয়ে কুরবানির ছুটি, ছে মাহি, শশমাহি ও সালানার ছুটিতে চামড়া সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাত করণ বিষয়ক স্বল্প মেয়াদী কর্মশালা করে দক্ষ কর্মী তৈরি করা যেতে পারে।
৮. এ দেশের আলিম উলামা এ নাগাদ ইন্ডিয়া, পাকিস্তান, মিসর ও বৈরুতসহ অন্যান্য দেশের চড়া মূল্যের আরবি ও অন্যান্য ভাষার কিতাবাদির অনেকটা বিকল্প বাজার গড়ে তুলেছেন। মাদরাসা পড়ুয়া গ্রহণযোগ্য সংখ্যক ছাত্রকে লেদার-টেকনোলজির উপর পড়ানো যেতে পারে। এরা ভবিষ্যতে মাদরাসাগুলোর সার্বিক কল্যাণে কাজ করতে পারবে।
৯. মাদরাসাগুলো আয়ের উৎস হিসাবে ছোট ছোট ট্যানারি কায়েম করতে পারেন। স্থানীয় কসাইদের থেকে এর কাঁচা মাল সারা বছর সংগ্রহ হতে পারে। ছোট বেলায় অনেক অভিজাত পরিবারকে শুধু নিজেদের বাড়ি করার জন্য ইট ভাটা বানাতে দেখেছি। আমার এক ফুফুর পরিবারও এমন ইট ভাটা তৈরি করেছিলেন। অতএব ছোট ছোট ট্যানারি কায়িম করতে খুব বেশি সমস্যা হওয়ার কথা নয়।
উপসংহার
বাস্তব অর্থে কওমী মাদরাসা হতে হলে কওম ও মিল্লাতের সর্বত্র উপস্থিতি এখন সময়ের দাবি। নিজেদের মাসলাক মাশবার ঠিক রেখেই এ কাজটি করা দরকার। তাই আমি এক জায়গায় লিখেছিলাম, ‘মসজিদ মাদরাসার দেয়াল ফুটো করে দাও, আলিম উলামাগণ বেরিয়ে আসুক সমাজের দিকে, ওতে দেশ ও জাতির দুনিয়া ও আখিরাতের সর্বাঙ্গীন কল্যাণ হবে।’ আমার এক ছাত্রকে আমি বলেছিলাম- ‘বৎস! বাস্তবতার সাথে সংগ্রাম করে করেই তুমি বাস্তবতা শিখবে।’ মাদরাসার জন্য কুরবানির চামড়া কালেকশনের মতো পবিত্র কাজ করতে গিয়েও আমরা বহু রকম হয়রানির শিকার হই। বহু তিক্ত সেসব ঘটনা আজকে আমার বিবেককে এ লেখা লিখতে বাধ্য করেছে। পিতৃতুল্য কওমী মাদরাসার আমার আসাতিযায়ে কিরামের বিবেককে যদি আমার এ লেখা সামান্যতম নাড়া দেয়, তাহলে আমরা এগিয়ে যাওয়ার আশা করতে পারবো- ইনশাআল্লাহ।
লেখক
প্রধান মুফতী (সাবেক), আল-মারকাজুল ইসলামী বাংলাদেশ
প্রিন্সিপাল ও রেক্টর, জামি‘আ ইসলামিয়া ঢাকা
চেয়ারম্যান, কওমী এডুকেশন কাউন্সিল ঢাকা