[caption id="attachment_12296" align="alignleft" width="457"] সৌদি আরবের বর্তমান বাদশা সালমান বিন আবদুল আজিজ[/caption]
আব্দুল্লাহ এইচএম আল-মুতাইরি
সৌদি আরবের জাতীয় দিবস একটি মহান দিন, যা রাষ্ট্রীয় ও জাতীয় পর্যায়ে পালন করা হয়। এ বছর এটা দেশটির একত্রীকরণের চুরাশিতম বছরের স্মরণে পালন করা হচ্ছে। আর এটা ১৩৫১ হিজরি মোতাবেক ১৯৩২ সালের ইতিহাস আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়। যেহেতু রাজকীয় সৌদি আরবের প্রতিষ্ঠাতা (আল্লাহ তাহার প্রতি রহম করুন) বাদশাহ আব্দুল আযীয বিন আব্দুর রহমান আল সাউদ দেশটিকে একীভূত করতে সক্ষম হন এবং আরব উপদ্বীপের জনগণকে রাজনৈতিক ও সামাজিক বন্ধনে একত্রিত করেন, এ কথা স্মরণ করে আজ আমাদের অন্তর গর্ব ও সম্মানে ভরে যায়। যখন আমরা দেখি কালেমা তাওহিদ খচিত পতাকা সৌদি আরবের আকাশে পতপত করে উড়ছে, আর এটা আমাদের এক নিকট ইতিহাসের গভীরে ডুব দিতে আহ্বান করে, যাতে আমরা ঘটনা বুঝতে পারি যে, এই পতাকার জন্য কত ঝড়-ঝঞ্ঝা পাড়ি দিতে হয়েছে। আর এই পতাকার উত্তোলনকারীগণ আরব বাজপাখি বাদশাহ্ আব্দুল আযীযের (আল্লাহ তার কবরকে আলোকিত করুন) নেতৃত্বে তারা উত্তীর্ণ হয়েছেন। তাই আজকে আমরা সৌদি আরবের জাতীয় দিবস উদযাপনের গুরুত্ব অনুধাবন করি। এ দেশ বিচ্ছিন্নতা, উদভ্রান্ততা ও ধ্বংসের সব কিছুকে বিদায় দিয়েছে, যাতে করে এটা সব অগ্রগতি ও সভ্যতার দরজায় কড়া নাড়ে এবং মহাসম্মানের শীর্ষ চূড়ায় উন্নীত হতে পারে।
এ মহান দিন উপলক্ষে আমাদের সবাইকে যে বিষয়টি উল্লেখ করতেই হয় তা হল, সৌদি আরব মুসলিম জাহানের জন্য যে বিশাল খেদমতের ব্যবস্থা করেছে, এটা এদেশের স্বাভাবিক কর্মকাণ্ড। সুতরাং এতে অবাক হওয়ার কিছুই নেই। এদেশ ওহির অবতীর্ণ হওয়ার স্থল, রিসালাতের সূচনা স্থল এবং মুসলমানদের কিবলা।
তাই এ দেশ শুরু থেকেই ইসলাম ও মুসলমানদের জন্য বিশ্বের আনাচে-কানাচে মসজিদ ও নামাজের ঘর তৈরি করেছে। আর এটা মূলত শুরু হয়েছে পবিত্র দুই মসজিদের মাধ্যমেই। এই দুই মসজিদের সর্বযুগের বৃহত্তম সম্প্রসারণের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। তাই বর্তমানে হজ খুবই স্বাচ্ছন্দ্যময় ও সহজ হয়েছে, যা পূর্বে ছিল খুবই কষ্টসাধ্য। এই পবিত্র দুই মসজিদের বিশাল ইমারত প্রত্যেক মুসলমানের গর্বের স্থানে পরিণত হয়েছে। তেমনিভাবে আল্লাহর ঘরের হাজী ও মসজিদে নববি জিয়ারতকারীগণ সব সুবিধা ভোগ করছেন। আর তাদের খেদমতের কাজকে এই রাষ্ট্র বিশেষ প্রাধান্য দিয়েছে এবং সবকিছু উজাড় করে দিয়েছে, যা দূরের-কাছের সবাই অবলোকন করছে।
অতঃপর আল্লাহর কিতাবের মুদ্রণ বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত লাখ লাখ কপি ছাপানোর কাজ করছে, যাতে করে যে যে-ভাষাভাষী বা যেখানেই অবস্থানকারী হোক না কেন, প্রত্যেক মুসলমান যেন তা অনায়াসে পেতে পারে।
আঞ্চলিক ক্ষেত্রে এ নেতৃত্বমূলক ভূমিকার ধারাবাহিকতায় ও মুসলমানদের ব্যাপারে এর গুরুত্ব প্রদানের ফলে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে মুসলিম উম্মাহর ব্যাপারসমূহ সহযোগিতা পেয়ে আসছে ও আন্তর্জাতিক সিদ্ধাস্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করে আসছে।
এমনকি এটা আরবীয় ও ইসলামী কণ্ঠস্বরের জন্য শক্তিশালী ভিত্তি প্রতিষ্ঠিত করেছে। বিভিন্ন সংস্থা, ফোরাম ও সংগঠনের সঙ্গে সংলাপের ক্ষেত্রে, আর তা আল্লাহতাআলা একে যে অর্থনৈতিক ও আধ্যাত্মিক অবস্থান দিয়েছেন তার সাহায্যে। আর এই সহযোগিতা বিশেষ করে মুসলিম ও অমুসলিম দেশে দুর্গতদের সহযোগিতায় দ্রুত এগিয়ে আসার মাধ্যমে যেন সৌদি আরব সর্বদা প্রতিটি অভাবী ও দুস্থ মানবতার সেবায় অগ্রগামী ও মানবতার রাষ্ট্র হতে পারে।
সৌদি আরবের প্রতিষ্ঠাতার যুগ থেকেই এর বৈদেশিক নীতি পবিত্র ইসলামী নীতিমালা ও প্রাচীন আরবীয় বিধিবিধানের ওপর শক্ত ও মজবুত ভিত্তিতেই প্রতিষ্ঠিত এবং এর অনন্য বৈদেশিক নীতির কার্যক্রম হচ্ছে, আরবীয় ইসলামী ঐক্যে সহায়তা প্রদান এবং আরবীয় ইসলামী ব্যাপারাদি হেফাজতকরণে কাজ করা ও অন্য কোনো দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করা।
সৌদি আরবের প্রতিষ্ঠাতার যুগ থেকেই এর বৈদেশিক নীতি পবিত্র ইসলামী নীতিমালা ও প্রাচীন আরবীয় বিধিবিধানের ওপর শক্ত ও মজবুত ভিত্তিতেই প্রতিষ্ঠিত এবং এর অনন্য বৈদেশিক নীতির কার্যক্রম হচ্ছে, আরবীয় ইসলামী ঐক্যে সহায়তা প্রদান এবং আরবীয় ইসলামী ব্যাপারাদি হেফাজতকরণে কাজ করা ও অন্য কোনো দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করা।
আরবী ইসলামীয় আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বহির্বিশ্ব কার্যক্রমের মাধ্যমে সৌদি আরব বর্তমান বাদশাহর আমলে ইসলামী ব্যাপারে সহায়তা প্রদান ও ইসলাম সংরক্ষণে অভিভাবকের ভূমিকা পালন করছে এবং এর উন্নত বার্তা এবং ন্যায় ও শান্তির সপক্ষে সিদ্ধান্ত গ্রহণ, সন্ত্রাস ও উগ্রবাদিতা প্রতিরোধ এবং বিভিন্ন ধর্ম ও সাংস্কৃতিক অনুসারীদের মাঝে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের নেতৃত্ব এবং অর্থনৈতিক সহযোগিতা প্রদান করছে।
বাদশাহ সৌদি জাতির জন্য সমসুযোগ-সুবিধা ও ব্যাপক সম্মানজনকভাবে জীবন-যাপনের সুবিধা করে দিয়েছেন। আর এসব কাজ ও পদক্ষেপ (আল্লাহ তাকে সুরক্ষা দান করুন) সমুন্নত চরিত্র ও অনন্য গুণাবলী ও বিশ্বমানের নেতা হিসেবে তার অবস্থানের পরিচায়ক। তেমনিভাবে এটা একটি নেতৃত্বদানকারী দেশ হিসেবে সৌদি আরবের অবস্থান নির্ণয়ে অবদান রেখেছে। যা বিশ্ব অর্থনীতির সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী গ্রুপ ২০-এ এর প্রবেশকে সুগম করেছে।
সৌদি আরব সাহসিকতা, দৃঢ়তা ও দূরদৃষ্টিসম্পন্ন স্পষ্ট নীতিমালার মাধ্যমে সন্ত্রাস দমন করছে, যা দায়িত্বশীল লোকদের দৃঢ়তা ও জাতীয় নেতৃত্বের সাহসী সিদ্ধান্তের কারণে অপূর্ব সফলতা অর্জন করেছে। সবাই এর প্রশংসা করেছে আর এটা বিশ্ববাসীর সামনে একটি উপমা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এখানে আমি খাদেমুল হারামাইন আল শরীফাইন বাদশাহ আবদুল্লাহর মহানুভব পৃষ্ঠপোষকতায় ২০০৫ সালে রিয়াদে অনুষ্ঠিত সন্ত্রাস মোকাবেলায় আন্তর্জাতিক সম্মেলনের কথা উল্লেখ করতে চাই, যা বাহ্যত অপরাধ প্রতিরোধে সঠিক নেতৃত্বের গুরুত্বারোপ করে।
সৌদি আরব বিশ্বের রাষ্ট্রসমূহের জাতীয় আয়ের শতকরা ০.৭ শতাংশ হারে সাহায্য প্রদান করে। আর এটা জাতিসংঘভুক্ত দাতা দেশসমূহ যা দান করে তার সমপরিমাণ। সৌদি আরব উন্নয়নশীল দেশগুলোয় তার জাতীয় আয়ের ৫.৪৫ শতাংশ প্রদান করে। আর এ পরিমাণটা শিল্পোন্নত বড় বড় দেশগুলোর বৈদেশিক সহায়তার চেয়েও বেশি।
সৌদি উন্নয়ন তহবিল উন্নয়নশীল দেশগুলোতে সৌদি উন্নয়নমূলক সহায়তা প্রদান প্রতিষ্ঠান হিসেবে গণ্য করা হয়। আরব ও ইসলামী রাষ্ট্রে গৃহযুদ্ধ ও প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা দানে যেসব দেশ এগিয়ে আসে তাদের মধ্যে সৌদি আরব অগ্রগামী। আর এটা খাদিমুল হারামাইন আল শরীফাইন কর্তৃক প্রদত্ত সংস্থা ও জাতীয় কমিটির মাধ্যমে সম্পাদিত হয়।
সৌদি-বাংলাদেশ সম্পর্ক বিষয়ে যা বলতে হয়, তা হল এই সম্পর্কটি দৃঢ় ও চমৎকার। সৌদি আরব স্বাধীনতার পর থেকেই বাংলাদেশের সব দল, নেতা ও সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক রেখেছে। সৌদি আরবের প্রতিটি সেক্টরে বর্তমানে ২৫ লাখের অধিক বাংলাদেশী কাজ করছে। তারা উন্নয়ন ও দেশ গঠনের অংশীদার। এখনও সৌদি আরব অনেক শ্রমিক আমদানি করছে। ইতিমধ্যেই সৌদি বাদশাহ অবৈধ বাংলাদেশী শ্রমিকদের বৈধ করার রাষ্ট্রীয় ফরমান জারি করেছেন এবং কফিল পরিবর্তনের সুযোগ প্রদান করেছেন। সৌদি-বাংলাদেশ যৌথ কমিটির বৈঠক শিগগিরই অনুষ্ঠিত হবে, যা দুদেশের সব ক্ষেত্রে সম্পর্ক উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে। সৌদি জনগণ ও এর নেতৃবৃন্দ বাংলাদেশী জনগণকে সত্যিকারভাবে মূল্যায়ন করেন। আল্লাহর কাছে কামনা করি তিনি যেন বাংলাদেশের সরকার ও জনগণকে সর্বদা নিরাপদে রাখেন এবং আরও বেশি উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি প্রদান করেন।
পরিশেষে, আমি আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করছি- আল্লাহ যেন এ দেশের সম্মান, নেতৃত্বের মর্যাদা ও জনগণের উন্নতি সর্বদা দান করেন। আর আমাদের সবাইকে নাগরিক হিসেবে পরিপূর্ণভাবে দায়িত্ব পালন করার তওফিক দিন, যাতে করে আল্লাহর রহমতে আমাদের দেশ সম্মানের শীর্ষস্থানে পৌঁছাতে পারে। আল্লাহতাআলা আমাদের বাদশাহ জাতির কাণ্ডারি আবদুল্লাহ বিন আবদুল আযীয ও যুবরাজ আমীর সালমান বিন আবদুল আযীযকে হেফাজত করেন এবং তাদের সুস্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা দান করেন। ইসলাম ও মুসলমানদের সম্পদ হিসেবে তাদের বাঁচিয়ে রাখেন।
সৌদি আরবের জাতীয় দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশে নিযুক্ত সৌদি রাষ্ট্রদূতের আব্দুল্লাহ এইচএম আল-মুতাইরি এর বাণী