সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪ ।। ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
চিকিৎসকরা বছরে দুইবারের বেশি বিদেশ যেতে পারবেন না ঢাকা থেকে ভাঙ্গা হয়ে খুলনায় গেলো পরীক্ষামূলক ট্রেন নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করবেন প্রধান উপদেষ্টা: প্রেস উইং ধর্মীয় মূল্যবোধ ও সাম্যের ভিত্তিতে সংবিধান রচনার আহ্বান নেপালে ফের কুরআন প্রতিযোগিতার আয়োজন করছে সৌদি আগামীকাল সংবিধান সংস্কার কমিশনে প্রস্তাবনা পেশ করবে ইসলামী আন্দোলন ‘আল্লামা আতহার আলী রহ. জীবন, কর্ম, অবদান’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন আগামীকাল হাজী ইমদাদুল্লাহ মুহাজিরে মক্কী রহ. : কে এই মহান ব্যক্তি হাজিদের স্বার্থ রক্ষায় সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ : ধর্ম উপদেষ্টা মহানবীকে সা. নিয়ে কটূক্তি করলে সংবিধানে শাস্তির বিধান রাখার প্রস্তাব পার্থের

অনেক পরিবারই মেয়ে ঠকানোর জন্য মোহরে ফাতেমি করে

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

বিয়েতে মহরে ফাতেমি নিয়ে আলোচনা সমালোচনা রয়েছে। বর্তমান সময়ে মহরে ফাতেমি’র নাম করে অনেক অইসলামি পরিবারও মেয়েকে ঠকায়। সংসারে ঝামেলা হলে এই অল্প মহরানার কারণে তালাক দিতেও তারা দ্বীধাবোধ করে না। অথচ দেখা যায় বিয়ে যারা মহরে ফাতেমিতে আগ্রহী এমন অনেক পরিবার নামাজ কালামের ধারও ধারেন না। এসব বিষয়ে সম্প্রতি জার্মান রেডিও ‘ডয়েচে ভেলে’ একটি সাক্ষাৎকার দিয়েছেন  বাংলাদেশ মুসলমান, হিন্দু ও খ্রিস্টান সম্মিলিত ম্যারেজ রেজিস্টার ফোরামের চেয়ারম্যান কাজী ছাবের আহম্মদ। তার সাক্ষাৎকারটি আওয়ার ইসলামের পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।

কাজী ছাবের আহম্মদ ‘সর্বনিম্ন দেনমোহর, অর্থাৎ মোহরানা ফাতেমী মানতে যেমন ইমান, আকিদা, লাহাম থাকা প্রয়োজন, সেটা অনেকেরই নেই৷ অনেক ক্ষেত্রেই মেয়েদের ঠকানোর জন্য এই মোহরানা ফাতেমি করা হয়ে থাকে৷’

Bangladesch Heiratsregister Kazi Sabir

বাংলাদেশ মুসলমান, হিন্দু ও খ্রিস্টান সম্মিলিত ম্যারেজ রেজিস্টার ফোরামের চেয়ারম্যান কাজী ছাবের আহম্মদ (কাজী ছাব্বির) সাক্ষাৎকারে আরো বলেন, ‘আমাদের অনেক অভিজাত পরিবারের বিয়েতে আনুসঙ্গিক খরচ এতটাই বেশি হয় যে, ওখানে যে পরিমাণ অপচয় হয় তা দিয়েই মধ্যবিত্ত পরিবারের একাধিক বিয়ের সমস্ত খরচ মেটানো সম্ভব৷’

আমাদের দেশে অভিজাতদের বিয়েতে কেমন খরচ হয়?

কাজী ছাবের আহম্মদ: অভিজাত পরিবারের বিয়ে, মধ্যবিত্ত বা নিম্নবিত্ত পরিবারের বিয়ে – এই বিষয়ের সঙ্গে রেজিস্ট্রেশনের কোনো সম্পর্ক নেই৷ গ্রামের একেবারে দিনমজুরদের বিয়ের রেজিস্ট্রেশন যে রকম, একেবারে কোটিপতি, শিল্পপতি, মিনিস্টারদের বিয়ের রেজিস্ট্রেশনের নিয়মকানুনটাও একই৷

আপনারা তো দেখেন, এই বিয়েগুলোতে কেমন অপচয় হয়?

অপচয় তো হয়ই৷ আমাদের দেশে কাজের চেয়ে অকাজের খরচ বেশি৷ অনেক বিয়েতে আনুসঙ্গিক খরচ এতটাই হয় যে শুধু অপচয়টা দিয়েই মধ্যবিত্ত পরিবারের একাধিক বিয়ের সমস্ত খরচ মেটানো সম্ভব৷ এতটাই ব্যয়বহুল হয় কিছু বিয়ে৷

এই অপচয়ের ব্যাপারে ইসলামে কী বলা হয়েছে?

ইসলামে অপচয়ের কোনো সুযোগ নেই৷ ইসলামি শরিয়তের দৃষ্টিতে বিবাহ হলো একটা শুভকাজ৷ উপযুক্ত ছেলে-মেয়ে, যারা অর্থনৈতিকভাবে স্বয়ংসম্পূর্ণ, শরিয়তের দৃষ্টিতে তাদেরই বিয়ে করা উচিত৷ ইসলামের দৃষ্টিতে বিবাহ শুভকাজ৷ তাই এটা যত দ্রুত সম্ভব করে ফেলা উচিত৷ দু'টো পরিবারের মধ্যে যতটুকু সম্ভব, একেবারে ঢাক-ঢোল পিটিয়ে করতে হবে এমনটাই না, তবে একান্ত নিজস্ব লোকজন নিয়েই বিবাহটা সম্পন্ন করা উচিত৷ বিবাহে অনেকেই বউ দেখতে আসেন৷ তাই বউকে সাজিয়ে মঞ্চের মধ্যে নিয়ে বসিয়ে রাখা হয়৷ কিন্তু কত শত শত মানুষ একজনের বউ দেখল, মানে একটা মেয়েকে দেখল, অনেকে অনেক ধরনের মন্তব্য করল, সাজগোজ করে বসিয়ে রাখল– এটা কিন্তু ঠিক না৷ আমাদের ধর্মে যেটা বলে তা হলো, একমাত্র শরিয়তের দৃষ্টিতে জায়েজ যারা, তারাই শুধু দেখতে পারবে৷ অথচ এর বাইরেও ‘নতুন বউ দেখে আসি' বলে বহু ছেলেরা, মেয়েরা আসে৷ শুধু তাই নয়, বিবাহের সময় আত্মীয়-স্বজনদের মধ্যে বয়স্ক, প্রাপ্তবয়স্ক, অপ্রাপ্তবয়স্ক মানুষ এমনভাবে সাজগোজ করে, যা ইসলামের বিধানের একেবারেই বিপরীত৷ এ সব কখনোই ইসলাম সমর্থন করে না৷

আমরা রাজধানীতে যে বিয়েগুলো দেখি সেগুলো তো এভাবেই হয়...

শুধু ঢাকায় নয়, গ্রামের দেশেও এ অবস্থা হয়ে গেছে৷ গ্রামের মেয়েরাও এখন বিউটি পার্লারে সাজে৷

এক্ষেত্রে কাজীদের ভূমিকা কী? কাজীরা কি কোনো ভূমিকা রাখতে পারেন?

এক্ষেত্রে আইনের দৃষ্টিতে কাজী সাহেবদের কোনো ভূমিকা নেই৷ কাজী সাহেবদের ভূমিকা শুধু বিবাহের রেজিস্ট্রেশন নিয়ে৷ তবে হ্যাঁ, তিনি ধর্মীয় প্রতিনিধি হিসেবে, আইন মন্ত্রণালয়ের মাঠ পর্যায়ের আইন প্রয়োগকারী প্রতিনিধি হিসেবে বা একজন সচেতন ব্যক্তি হিসেবে এই বিষয়গুলোতে যাতে মানুষ না জড়ায়, এগুলোকে নিরুৎসাহিত করার জন্য হয়ত বা দু-একটা কথা বলতে পারেন৷ বিভিন্ন মজলিসে, বা জুম্মার নামাজের খুতবার আগে, বিভিন্ন নামাজের আগে-পরে বা বিভিন্ন মিলাদ-মাহফিলে বা বিবাহের অনুষ্ঠানে এগুলো নিয়ে উনি কথা বলতে পারেন৷ শরিয়তের দৃষ্টিতে যা সঠিক, সেটা উনি জানাতে পারেন সমাজবাসীকে৷ সমাজবাসী ওনার কথা শুনল কি শুনল না সেটা সমাজবাসীর ব্যাপার৷

সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন দেনমোহর কত টাকা হতে পারে?

সর্বোচ্চ দেনমোহরের কোনো সীমানা নেই৷ আর সর্বনিম্নটা রাসুলে পাকের আমলে হতো মোহরানা ফাতেমি৷ মোহরানা ফাতেমি মানতে হলে একজন মানুষের ইমান, আকিদা, লাহাম এবং যে চরিত্র থাকা প্রয়োজন, সেটা আমাদের মধ্যে অনেকেরই নেই বললেই চলে৷ আমরা শুধুমাত্র একটা মেয়েকে ঠকানোর জন্য এটা করে থাকি৷ আমাদের দেশে এমন অনেকেই আছেন, যাঁরা টুপি মাথায় দেন, দাঁড়ি আছে, মসজিদে যান, নামাজ পড়েন, সমাজের মধ্যে সুফি ব্যক্তি হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য বিভিন্ন ধরনের চেষ্টায় লিপ্ত থাকেন৷ অথচ তাঁরাই বিবাহের সময় বলেন, আমরা মোহরানা ফাতেমি করব৷ অর্থাৎ মোহরানা ফাতেমিটা হিসাব করলে রাসুলে পাকের আমল থেকে এ পর্যন্ত দেখা যায়, এটা ৭০ হাজার থেকে ৯০ হাজার টাকা হতে পারে৷ বর্তমান জামানায় ৮০-৯০ হাজার টাকা তো কিছুই না৷ তারপরও ঐ শ্রেণির লোকেরা এসে বলে, আমরা মোহরানা ফাতেমি করব৷ কিন্তু ঐ লোকটাকেই আবার দেখা গেল মোহরানা ফাতেমি করল শুধু একটা মেয়েকে ঠকানোর জন্য৷ একটা মেয়ের ইজ্জত, সামাজিক অবস্থান, পারিবারিক অবস্থান, জীবন-যৌবন, রূপ– সবকিছু মিলিয়ে তাঁর যে একটা ‘লাইফ গ্র্যাভেটি' সেই বিষয়টার উপর ভিত্তি করেই কিন্তু দেনমোহরটা ধার্য্য হওয়া উচিত৷ কিন্তু দেখেন, মিলাদের পর মিষ্টি খাওয়া সুন্নত৷ বহু মানুষ এ আমল পরের ঘরে মিলাদে করে থাকেন। নিজের ঘরে করেন না৷ নিজের মেয়েকে বিয়ে দেয়ার সময় বলেন, ১০ লাখ টাকার কাবিন দিতে হবে, দেনমোহন দিতে হবে ৫ লাখ টাকা৷ আবার নিজের ছেলে যখন বিয়ে করতে যান, তখন বলেন, আমরা তো ‘ইসলামিক মাইন্ডেড ফ্যামিলি' আমরা মোহরানা ফাতেমি করব৷ আসলে মোহরানা ফাতেমির কথা বলে সে একটা মেয়েকে ঠকালো! বিবাহ হলো একটা পবিত্র জিনিস৷ একটা সংসার জীবন, ইহকাল-পারকাল দুই জীবনের সাথি৷ দুই জীবনের সাথিকে একটা দেনমোহরের জন্য এভাবে ঠকানোটা কোনোভাবেই উচিত না বলে আমি মনে করি৷

আমরা বিয়েতে যে আড়ম্বর অনুষ্ঠান করে থাকি, ইসলামের দৃষ্টিতে এই আড়ম্বর কি ঠিক?

আপনি আড়ম্বর অনুষ্ঠান করতে পারেন৷ কিন্তু ইসলামের দৃষ্টিতে সীমানার মধ্যে থেকে যতটুকু করা প্রয়োজন, ঠিক ততটুকু করতে পারেন৷ এই প্রসঙ্গটা যেহেতু আসছে, এক্ষেত্রে একটা জিনিস বলে রাখি– আমরা ছেলের বাড়ি থেকে ১০০, ২০০, ৫০০ বরযাত্রী যাই৷ এটা কিন্তু শরিয়তে নেই৷ ইসলামের দৃষ্টিতে বিষয়টা হলো, মেয়ের বাড়িতে অল্প সংখ্যক নিজস্ব আত্মীয়স্বজন নিয়ে বর বিয়ের কাজটা সম্পন্ন করবে৷ এরপর ছেলের বাড়িতে ওয়ালিমার দাওয়াত দেবে৷ বউভাতের দাওয়াত দেবে৷ সেখানে মেয়ের বাড়ির লোকজন তাঁর আত্মীয়স্বজনকে নিয়ে এসে ছেলের বাড়িতে বউভাতের দাওয়াতটা খাবে৷ কিন্তু আমাদের দেশে বিষয়টা সম্পূর্ণ উলটো৷ মেয়েদের উপর বিষয়টা চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে৷ মেয়েপক্ষ বা ছেলেপক্ষকে দেখা যাচ্ছে, একদিক দিয়ে খাবারের আয়োজন করেছে, আবার অন্যদিকে একটা টেবিল-চেয়ার নিয়ে পান-সুপারি সাজিয়ে সুন্দরভাবে বসে আছে৷ বসে আছে গিফট নেয়ার জন্য৷ একজনকে দাওয়াত খাওয়াবেন, এটা আনন্দের কথা৷ কিন্তু গিফটের জন্য বসে থাকবেন? ইচ্ছে করে কেউ যদি কিছু দেয়, সেটা ভিন্ন কথা৷ কিন্তু ভাবটা এমন যে ইচ্ছাটা সে যেন করতে বাধ্য হয়৷

বিবাহ অনুষ্ঠানে আমরা যে গিফট নিই, ইসলামে এর কী ব্যাখা আছে?

আমারা যেভাবে গিফট নিই, ইসলামে এভাবে গিফট নেয়ার কোনো সুযোগ নেই৷ আপনি ইচ্ছে করলে যে কাউকে গিফট দিতে পারেন৷ সেটা ভিন্ন জিনিস৷ আমি আপনাকে দাওয়াত দিলাম আর টেবিল সাজিয়ে বসে থাকলাম আপনার কাছ থেকে গিফট নেব বলে, এ রকমভাবে নেয়ার সুযোগ ইসলামে নেই৷

আরআর


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ