সিলেট প্রতিনিধি: সিলেটের বিশ্বনাথে ঈদের দিনে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে পূর্ব মন্ডলকাপন গ্রামের আরমান শাহ জামে মসজিদের ইমাম ও বিশ্বনাথ উপজেলা লতিফিয়া ক্বারী সোসাইটির সদস্য হাফেজ আবদুল হান্নানের (৩০) মৃত্যু নিয়ে নানা রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে। এটি বাস্তবেই মৃত্যু নাকি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড এ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তার মৃত্যুর প্রকৃত কারণ নিয়ে ধূম্রজাল কাটেনি এখনও। উত্তর মিলছে না একাধিক প্রশ্নের। স্থানীয় মসজিদের ইমাম থাকা স্বত্তেও কুরবানির জন্যে অন্য গ্রাম থেকে তাকে (আবদুল হান্নান) নিয়ে আসা, ফোনালাপের জন্যে ওই ইমামের জনমানবশূন্য কমিউনিটি সেন্টারের অরক্ষিত তিনতলায় ওঠা, মৃত্যুর পর থানা পুলিশকে না জানিয়ে তড়িগড়ি করে মৃতদেহ তার গ্রামের বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়ায় রহস্য আরো ঘনিভূত হয়েছে। এ ঘটনার পেছনের ঘটনা উদঘাটনে স্থানীয় প্রশাসনের প্রতি দাবি জানান অনেকেই। এছাড়া ওই সেন্টারের তৃতীয় তলায় হাতের নাগাল দিয়ে যাওয়া ঝুঁকিপূর্ণ বৈদ্যুতিক তার অরক্ষিত থাকায় বিদ্যুৎ ও সেন্টার কর্তৃপক্ষের দায়িত্ববোধ নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
সূত্র জানায়, ঈদুল আযহার দিনে (১৩ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার) নিজ কর্মস্থল পূর্বমন্ডল কাপন গ্রামের আরমান শাহ জামে মসজিদে ঈদের জামাতে ইমামতি করেন হাফেজ আবদুল হান্নান। পরে গ্রামের বাড়ি কানাইঘাটের বড়ছাতল যাবার জন্যে কর্মস্থলের লোকজনের কাছ থেকে বিদায় নেন। এই সময় পশু কুরবানির লক্ষ্যে পূর্ব মন্ডলকাপন গ্রামের ছোটন মিয়া ওই ইমামকে সাথে নিয়ে দূরবর্তী গ্রাম বরইগাঁওয়ে তার যুক্তরাজ্য প্রবাসী ভাগিনার মালিকানাধীন তমিজ উল্লাহ কমিউনিটি সেন্টারে যান। জনমানবশূন্য সেন্টারে প্রবেশের পর কিছু সময় পরেই বিদ্যুতের বিকট শব্দ পাওয়া যায়। শব্দ শুনে আশপাশের লোকজন সেন্টারের তৃতীয় তলায় উঠে বৈদ্যুতিক শকে আহত ইমাম আবদুল হান্নানকে উদ্ধার করেন। পরে তাকে সিলেট নর্থইস্ট হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে কর্তব্যরত ডাক্তার ইমামকে মৃত ঘোষণা করেন।
পার্শবর্তী বাড়ির ট্রাক চালক বিল্লাল হোসেন জানান, ঘটনার সময় তিনি বাড়ির উঠোনে কাজ করছিলেন। হঠাৎ সেন্টারের দিকে বিদ্যুতের বিকট শব্দ শুনে তাকিয়ে দেখেন ছাদের উপর একজন মানুষ লুটে পড়ছেন। তিনি তৎক্ষনাত দৌড়ে সেন্টারের তৃতীয় তলায় যান। এসময় নীচতলায় থাকা ছোটন মিয়া ও তার সাথে ছুটে তৃতীয় তলায় উঠেন। সেখানে ইমাম আবদুল হান্নানকে পড়ে থাকতে দেখেন।
ছোটন মিয়া জানান, ইমাম আব্দুল হান্নানের সাথে আমার সু-সম্পর্ক থাকার কারণে তাকে দিয়ে গরু কোরবানি দিতে সেন্টারে যাই। সেন্টারে প্রবেশের পরই ফোনালাপের জন্যে ইমাম সাহেব আমার সম্মুখ থেকে চলে যান। হঠাৎ পার্শ¦বর্তী বিল্লাল হোসেনের আর্তচিৎকারে তার সাথে ছুটে সেন্টারের তৃতীয় তলায় উঠে দেখি বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে তিনি কাতরাচ্ছেন। পাশে তার আলাপরত ফোনসেট পড়ে আছে। তবে, ফোনালাপের জন্যে ইমাম সাহেব সেন্টারের তৃতীয় তলায় কেন গেলেন-সেটা আমার জানা নেই।
অন্য একটি সূত্র জানায়, গত তিনমাস আগে তমিজউল্লাহ কমিউনিটি সেন্টারের দেখাশুনার দায়িত্ব পান প্রবাসীর মামা ছোটন মিয়া। এরপর থেকেই সেন্টারে অসামাজিক কার্যকলাপ চলে আসছিল। পরে এলাকাবাসীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে এসব বন্ধ করে দেয়।
আরআর