আব্দুল্লাহ বিন রফিক; কন্টিবিউটর, আওয়ার ইসলাম
ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে লাইন অফ কন্ট্রোলের কাছাকাছি ভারতীয় সেনাবাহিনীর একটি ব্রিগেড হেডকোয়াটারে এক হামলায় ১৭ সেনা নিহত হওয়ার পর পাকিস্তানের বিপক্ষে আবারো যুদ্ধ ও প্রতিশোধের বেশ জোড়ালো ডামাডোল শোনা যাচ্ছে।
সরকার ও সেনাবাহিনীর সুর হচ্ছে, হামলাকারীরা এসেছে পাকিস্তান থেকে আর এখন সময় এসেছে তাদের দাঁতভাঙা জবাব দেওয়ার। গণমাধ্যমে এখন ভারতীয় সেনাবাহিনীর সম্ভাব্য সামরিক অভিযানের বেশ গুঞ্জরণ শোনা যাচ্ছে।
অতীতে কি হয়েছিলো? আর যা অতীতে যা হয়েছে তা থেকে আসন্ন ভবিষ্যতের ব্যাপারে কি কোনো ফলাফল বের করা যাবে? নিশ্চিত করে তো তাৎক্ষণিক কিছু বলা যাচ্ছে না। অনুমান কিন্তু করা যাচ্ছে বেশ তলিয়ে।
কারগিল যুদ্ধ ছাড়া বিগত দু দশকে এমন পরিস্থিতিরও সৃষ্টি হয়েছে যাতে পাক-ভারত উভয়ই যুদ্ধের প্রায় দ্বারপ্রান্তে এসে দাঁড়িয়েছিলো।
প্রথম হামলাটা হয় ডিসেম্বর ২০০১ সালে পার্লামেন্টে। তার ৭ বছর পর বাণিজ্যকেন্দ্র মুম্বাইতে। উভয় হামলাতেই ভারতে প্রতিশোধের দাবি উঠেছিলো বাঁধ ভাঙা জোয়ারে। পার্লামেন্ট হামলার সময় দেশে বিজেপি সরকার ছিলো ক্ষমতায় আর মুম্বাই হামলার সময় ছিলো কংগ্রেস।
পার্লামেন্ট হামলার পর জোড়ালো অপারেশনের জন্য প্রস্তুত ছিলো ভারত। পরন্তু দু বছর পর উভয় দেশ মিলে যুদ্ধের পরিবর্তে বন্ধুত্বের পরিবেশে একে অন্যের সাথে ক্রিকেট খেলছিলো এবং লাইন অফ কন্ট্রোল হওয়া সত্ত্বেও পূর্বের চুক্তি অনুসারে গোলাগুলি ও তোপকামান দাগানো বন্ধ রেখেছিলো।
মুম্বাই হামলার পর প্রধানমন্ত্রী মোনমোহন সিংও বেশ চাপের মধ্যে ছিলেন। সড়কে সড়কে বিক্ষোভ ফেটে পড়ছিলো। বিজেপি দলেও বড়সড় মতভেদ দেখা দিয়েছিলো।
প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক প্রবীন স্বামীর বক্তব্য মোতাবেক সে সময় পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে লশকরে তাইয়্যেবার অবস্থানকে কেন্দ্র করে যুদ্ধবিমান ও মিযাইল হামলার পরিকল্পনা করেছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী মোনমোহন সিং। কিন্তু যখন সেনা ও ইন্টেলিজেন্স সার্ভিস বললো, তারা জয়ের গ্যারান্টি দিতে পারবে না- তখন তিনি তার এই সিদ্ধান্ত থেকে ফিরে আসেন।
প্রবীন স্বামী আরো বলেন, সে সময় সেনাবাহিনীর চিপ জেনারেল দীপক কাপূরও বলেছিলেন, সেনাসদস্যরা সাময়িক ও সার্জিকাল যুদ্ধের জন্য এখনো প্রস্তুত নয়।
মোম্বাই হামলায় হয়তো দু’দেশের পরস্পরের সম্পর্কের মোড় অনির্দিষ্ট কালের জন্য খানিকটা ভিন্ন দিকে বাঁক খায়। তবুও আবার সম্পর্কের উন্নতি হতে থাকে। কারণ কংগ্রেস সরকারও এই মৌলিক ফর্মুলায় বিশ্বাস করতো, পাকিস্তানের সাথে আলোচনায় বসার চেয়ে আলোচনা না করাই উত্তম।
এ কারণে মুম্বাই হামলার ৮ মাসের মাথায় মোনমোহন সিং ২০০৯ সালের জুলাইতে মিশরের শারেমুল শেখের এক চুক্তিতে দস্তখত করেন এবং পাকিস্তানের মিত্র দেশগুলোর সাথে হাত মেলান। তারপর ফ্রেব্রুয়ারি ২০১১ সালে থিম্পুতে পরস্পরে আলোচনার পর পরিষ্কার ইঙ্গিত দেন, তিনি সন্ত্রাসবাদ নির্মূল ইস্যুটাকে পারস্পরিক আলোচনার মৌলিক শর্ত না বানানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
জানুয়ারিতে পাঠানকোর্টের এয়ার বাসে হামলার পর পাকিস্তান তদন্তে সাহায্য করার ওয়াদা করেছিলো। সম্পর্ক বিনষ্ট হওয়ার পর পাকিস্তান ভারত সরকারের অভিযোগগুলোকে ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছে। পাক-ভারত সরকার এখন সে আগের অবস্থানেই আছে। কেবল বদলেছে তাদের সম্পর্কের মোড়।
ভবিষ্যতে কী হবে তা সময়ই বলবে। কিন্তু অতীতে যখন পাকিস্তানকে কড়া জবাব দেওয়ার আওয়াজ উঠেছিলো তখন এই ধারণা দেওয়ার মানুষও কম ছিলো না যে, উভয়ের কাছে ভারি ও ভয়ানক অস্ত্র বিদ্যমান, পরিস্থিতি পাল্টে যেতে পারে এবং সবকিছু উল্টে যেতে পারে ইত্যাদি।
ভবিষ্যতে কী হবে সম্ভবত তার সবচে’ সুস্পষ্ট ইঙ্গিত পাওয়া গেছে ভারতীয় সেনাদের এক নেতৃস্থানীয় কমান্ডার কর্তৃক ইন্ডিয়া এক্সপ্রেসকে দেওয়া এক বিবৃতিতে- আমরা আমাদের সৈন্য হত্যার প্রতিশোধ অবশ্যই নেবো, তবে খুব ভেবে-চিন্তে, ঠাণ্ডা মাথায়, যথাযথ স্থানে। শীর্ষস্থানীয় সংবাদ চক্রের চাহিদা ও খাহেশ পূরণ করার জন্য নয়।
-বিবিসি উর্দূ থেকে অনুদিত