আওয়ার ইসলাম: গ্রামটিতে রাজনৈতিক মতাদর্শে পার্থক্য থাকলেও ১ হাজার ২০০ পরিবার এক সঙ্গে এক সমাজে কুরবানি করল। প্রায় দেড় যুগ ধরে এই রীতি চলে আসছে টাঙ্গাইলের মির্জাপুর পৌর শহরের পোস্টকামুরী গ্রামে।
ধনী-গরিব সবাই এই মাংসের অংশীদার। এ বছর ১০৫টি গরু ও সাতটি খাসি কুরবানি করা হয়েছে। জনপ্রতি ৭৫০ গ্রাম করে গ্রামের প্রায় ৬ হাজার এবং পাশের গ্রামের সহস্রাধিক মানুষের মধ্যে এই কুরবানির মাংস বিতরণ করা হয়। বিতরণ করা মাংসের পরিমাণ ছিল ১৩৩ মণ। ওই গ্রামে ঈদের আগের দিন যে শিশু জন্মগ্রহণ করেছে সেও এক ভাগ মাংসের অংশীদার।
জানা গেছে, গ্রামটিতে বাড়ি রয়েছে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মো. একাব্বর হোসেন এমপি, উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও সাবেক মেয়র অ্যাডভোকেট মোশারফ হোসেন মনি, যুগ্ম সম্পাদক ও পৌর মেয়র সাহাদৎ হোসেন সুমন, পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি ফরহাদ উদ্দিন আছু ও উপজেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি মোতালেব হোসেনের।
এছাড়া পৌর শ্রমিক লীগের সভাপতি মো. আলী হোসেন শিকদার, যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মাজহারুল ইসলাম শিপলু, মো. শামীম আল মামুন, পৌর ছাত্রলীগের আহ্বায়ক আবু বক্কর শিকদার, মো. শরীফুল ইসলাম, উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট আব্দুর রউফ ও আব্দুল কাদের শিকদার, পৌর বিএনপির সভাপতি হযরত আলী মিয়া, পৌর যুবদলের সভাপতি মো. সেলিম মিয়া ও সম্পাদক রিপন মিয়া, উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি আবু আহমেদ, পৌর জাতীয় পার্টির সম্পাদক আশরাফ উদ্দিন আহমেদের বাড়ি এই গ্রামটিতে।
পোস্টকামুরী গ্রামে আলহাজ শফি উদ্দিন মিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে গ্রামবাসী পশু কুরবানি দিয়ে থাকেন। গ্রামে যারা পশু কুরবানি দেন, তারা প্রতিটি পশুর মাংসের তিন ভাগের এক ভাগ সামাজের মানুষের জন্য জমা দেন। এ বছর কুরবানির দিন সকাল থেকে বৃষ্টি শুরু হলে একত্রে কুরবানি দিতে ভোগান্তিতে পড়তে হয় গ্রামবাসীকে।
পরে গ্রামের মাতব্বরা একমত হয়ে মসজিদের মাইক দিয়ে নিজ নিজ বাড়ি পশু কুরবানি দেয়ার জন্য ঘোষণা দেন। সমাজের ভাগের মাংস সংগ্রহের জন্য গ্রামের ২৪০ জন যুবক দিয়ে কয়েকটি কমিটি গঠন করা হয়। পরে পিকআপ ও ভ্যান দিয়ে তাদের বাড়ি বাড়ি পাঠিয়ে সমাজের মাংস সংগ্রহ করে স্কুলের মাঠে জমা করা হয়।
এর আগে গ্রামের প্রতিটি পরিবারে কতজন সদস্য রয়েছেন তা তালিকা করার জন্য ঈদুল আজহার আগেই স্বেচ্ছাসেবকের মাধ্যমে বাড়ি বাড়ি গিয়ে তালিকা করা হয়। কুরবানির মাঠে পশুর জমা করা মাংস জনসংখ্যার গড় হিসাব করে মাথাপ্রতি মাংস প্যাকেটজাত করা হয়।
বিকেল ৩টার পর পাঁচটি কাউন্টার খুলে স্বেচ্ছাসেবকের মাধ্যমে নাম ডেকে মাংস বিতরণ করা হয়। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত গ্রামের মাতব্বররা উপস্থিত থেকে এ মাংস বিতরণ করেন। এ বছর প্রতিজনকে ৭৫০ গ্রাম করে মাংস দেয়া হয়।
গ্রামবাসী সূত্রে জানা যায়, উপজেলার অনেক গ্রামে এখনো ‘মসজিদভিত্তিক সমাজ’ প্রচলিত রয়েছে। সেসব সমাজে মসজিদ কমিটির মাধ্যমে পরিচালিত হয় সমাজ। সেখানে কুরবানিও হয় মসজিদ কমিটির মাধ্যমে। কিন্তু এ গ্রামটিতে এ ভিন্নতা দেখা গেছে। গ্রামটিতে চারটি মসজিদ থাকলেও সমাজ একটি। এক সমাজের মাধ্যমে গ্রামটিতে পশু কুরবানি করা হয়। গ্রামটির জনসংখ্যা প্রায় ৬ হাজার। পরিবার রয়েছে প্রায় ১ হাজার ২০০।
কুরবানির পশু থেকে জমা করা মাংস সমাজের আওতাভুক্ত ধনী-গরিব সবাইকে সমান হারে মাথাপ্রতি হিসাব করে মাংস দেয়ার পর অতিরিক্ত কিছু মাংস গরিব ও দুস্থদের জন্য রাখা হয়। সে মাংস পরে তাদের মধ্যে বিতরণ করা হয়। এই নিয়মে কুরবানির মাংস বণ্টন করার ফলে সমাজের কেউ মাংস পাওয়া থেকে বাদ যায় না বলে জানায় গ্রামবাসী।
গ্রামটিতে প্রায় দেড় যুগ ধরে এই সামাজিক নিয়ম চালু রয়েছে বলে জানান গ্রামের মাতব্বর আবু আহমেদ, সাহাদৎ হোসেন সুমন, মোতালেব হোসেন, মো. আলী হোসেন শিকদার, শামীম আল মামুন, এস এম রাশেদ, আবুল হোসেন, আমিরুল কাদের লাবন, বাবুল খান প্রমুখ।
আরআর