মুফতি মুহাম্মদ আমিমুল ইহসান। একজন ইসলামি চিন্তাবিদ। বিশিষ্ট লেখক ও গবেষক। সমাজ, সামাজিকতা, ইসলাম ও মানবতা নিয়ে যিনি সর্বদা ভাবেন। একটি সুষ্ঠু সমাজ, শান্তিপূর্ণ দেশের জন্য কাজ করে চলেছেন নানাভাবে। শিক্ষকতা, লেখালেখি, বয়ান ও প্রকাশনার মাধ্যমে নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করে চলেছেন। মুফতি মুহাম্মদ আমিমুল ইহসান একজন ফিকাহবিদ। ইসলামিক ফিকহ একাডেমির সেক্রেটারি জেনারেল। ঢাকা মুফতি বোর্ডের সদস্য। প্রতিষ্ঠা করেছেন মাদানী কুতুবখানা। যেখানে গড়ে তুলেছেন কিতাবের এক বিশাল ভান্ডার। কওমী পড়ুয়াদের দুর্লভ সব কিতাবের জন্য যেটি ইতোমধ্যেই সবার দৃষ্টি কেড়েছে।
২০০৩ সালে জামিয়া শরইয়্যা মালিবাগ থেকে তাকমিল শেষ করার পর সেখানেই ইফতা বিভাগ সম্পন্ন করেন। একই সঙ্গে ২০০৪ সালে মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ড থেকে কামিল শেষ করেছেন। সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটি থেকে ইসলামিক স্ট্যাডিজে মাস্টার্সও সম্পন্ন করেছেন মুফতি আমিমুল ইহসান। সবগুলো পরীক্ষাতেই স্ট্যান্ড করার কৃতীত্ব অর্জন করেছেন। শিক্ষার প্রতি প্রচণ্ড আগ্রহের তাগিদে নিজের উদ্যোগে গবেষনা করেছেন বিভিন্ন কিতাব। ২০০৮ ও ১৪ সালে AAOIFi’ আয়োজিত বাহরাইনে ইন্টারন্যাশনাল ফিকহি সেমিনারে অংশ নেন। গবেষণার জন্য ঘুরেছেন সৌদি আরব, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, দুবাই, ইন্ডিয়া ও মিশরে।
অনুবাদ করেছেন ১০ টি বই। এছাড়া তার হাতে সম্পাদিত হয়েছে ৪০ গুরুত্বপূর্ণ বই। নিজ এলাকা ফেনীতে প্রতিষ্ঠা করেছেন মাদরাসাতু উসমান। হজ ও মুসলিম উম্মাহ বিষয়ে গুণী এই ব্যক্তির সাক্ষাৎকার নিয়েছেন রোকন রাইয়ান
[caption id="attachment_11131" align="alignright" width="420"] মদিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাকতাবায় কিতাব দেখছেন[/caption]
আওয়ার ইসলাম: হজে যাচ্ছেন। সৌভাগ্যশীলদের তালিকায় আপনিও একজন। অনুভূতুটি কেমন?
মুফতি আমিমুল ইহসান: হ্যাঁ হজের সফর পরম সৌভাগ্যের। কারণ হজ সম্পাদনকারী সদ্যভূমিষ্ট শিশুর মতো বাড়িতে ফিরে আসে। মাকবুল হজের প্রতিদান জান্নাত। মহান আল্লাহ আমাকে হজের জন্য নির্বাচিত করেছেন এই শুকরিয়া জ্ঞাপন করে শেষ করতে পারবো না।
আওয়ার ইসলাম: এর আগেও কী হজে গেছেন নাকি এবারই প্রথম?
মুফতি আমিমুল ইহসান: এটি প্রথম নয় ৬ষ্ট তম হজের সফর। আসলে প্রথমবার কাবা দেখার পর সেটি জিয়ারতের জন্য মন সব সময় অস্থির থাকে। সব সময়ই ছুটে যেতে ইচ্ছে করে রাসুল সা. এর রওজায়। এটি মুসলিম বান্দার হৃদয়ের গভীর ভালোবাসা। যারা এখনো বাইতুল্লাহর মুসাফির হতে পারেননি তারা এই হজের স্বাদ ও ব্যকুলতা বুঝতে সক্ষম হবে না কখনো।
আওয়ার ইসলাম: কোন উদ্দেশে হজ করছেন?
মুফতি আমিমুল ইহসান: আল্লাহর নির্দেশ পালনার্থে ও তাঁর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্যই প্রতিটি মানুষ হজ করে থাকে। আমিও সেই লক্ষ্যের কাবার মেহমান হতে চলেছি। রাসুল সা. এর কদম মুবারকে সালাম পৌঁছাতেই আমার এ সফর। আল্লাহ ও তার রাসূলের সন্তুষ্ঠি অর্জন ছাড়া মুসলিমের বড় কোনো কাজ নেই। বড় কোনো উদ্দেশ্যও নেই।
আওয়ার ইসলাম: হজের প্রস্তুতি কাজে কোন ধরনের ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে কি?
মুফতি আমিমুল ইহসান: সৌদি এয়ারলাইন্সে টিকেট কনফার্ম করার ছিলো কিন্তু সিন্ডিকেটের জন্য সেটা করা সম্ভব হয়নি। শেষ পর্যন্ত বিমানে সফর করতে হয়েছে আমাকে। এতে কিছু ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। তবে এই ভোগান্তি কাটানো সম্ভব সহজেই। যেটি করতে হবে সরকারকে। এই দুটি এয়ারলাইন্স ছাড়াও এমিরেটস, কুয়েত, কাতার, পিআই, ইত্তেহাদ ও জেট এয়ারলাইন্সকে হাজি বহনের অনুমতি দেয়া যেতে পারে। এতে পরিবহন সংকট সহজেই কাটানো সম্ভব। হাজিদেরও আর অপেক্ষা করতে হবে না ফ্লাইটের জন্য।
আওয়ার ইসলাম: হজ করতে যেয়ে ট্রাভেলস কর্তৃক হয়রানির অভিযোগ শুনা যায় যাত্রীদের মুখে। আবাসস্থল, যাতায়াত সুবিধা, খাদ্য এসব বিষয়েও ভোগান্তি কম হয় না। আপনার মতামত কী?
মুফতি আমিমুল ইহসান: আমাকে এমন কোনো সমস্যা পোহাতে হয়নি। তবে কম টাকায় হজে গেলে এবং সরাসরি ট্রাভেলসের মাধ্যমে না গেলে সে ক্ষেত্রে এমন ধরনের সমস্যা হয়ে থাকে। আর এই সমস্যার মুখোমুখি বেশি হন গ্রামের হজযাত্রীরা। এর জন্য সচেতনতা জরুরি। যারা ট্রাভেল মালিক তাদের জন্য পরামর্শ থাকবে আপনারা হজের মতো গুরুত্বপূর্ণ ইবাদতে হাজিদের এমন দুর্ভোগের মুখোমুখি করবেন না। তারা আল্লাহর মেহমান তাদের সম্মানের সঙ্গে হজ করানো আপনাদের দায়িত্ব। না হলে পরকালে কঠিন জবাবদিহিতার মুখে পড়তে হবে সবাইকে।
[caption id="attachment_11133" align="alignright" width="434"] আবুধাবী ইসলামি ব্যাংকের শরিয়া বোর্ডের প্রধান ড. উসাইদ কিলানি’র সঙ্গে
[/caption]
আওয়ার ইসলাম: গতবছর হজ পালনের সময়ে পদদলিত হয়ে হাজার হাজার যাত্রী মারা গেছে। পরপর দু,টি দুর্ঘটনা ঘটে। মনে এ ধরণের কোন ভয় কাজ করছে কীনা?
মুফতি আমিমুল ইহসান: না এমন ভয় কাজ করছে না। আসলে মৃত্যু তো আল্লাহ পাক নির্ধারিত। হজে গিয়ে এমন আশঙ্কায় ইবাদতের ক্ষতি করার কোনো মানে হয় না। আল্লাহ যখন মৃত্যু রেখেছেন তা নির্ধারিত সময়েই সংগঠিত হবে। তবে এ বিষয়ে একটু সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি। প্রচণ্ড ভিড় রয়েছে এমন স্থানে না যাওটাই উচিত। আমিও এমনটা করবো। যেন নিরাপদে সবাই হজের কার্য সম্পাদন করে এবং ফরজ বিধানটি আদায় করতে পারে।
আওয়ার ইসলাম: হজ যাত্রীদের অনেকের মাঝে হজ আনুষ্ঠানিকতা পালনের চেয়ে ঘুরাঘুরি ও সেলফি তুলার প্রবণতা দেখা যায়। বিষয়টি আপনি কোন দৃষ্টিতে দেখছেন।
মুফতি আমিমুল ইহসান: হজের সফর সময় নষ্ট করার সফর নয়। এখানে অযথা ঘুরাঘুরি ও সেফলি তোলা শোভনীয় কাজ নয়। এগুলো অবশ্যই এড়িয়ে চলতে হবে হাজিদের। সেলফি ইদানিং মারাত্মক ব্যাধী হয়ে উঠেছে। এটি বর্জন করা উচিত।
আওয়ার ইসলাম: সহযাত্রীদের সম্পর্কে কিছু বলেন।
মুফতি আমিমুল ইহসান: আল্লাহর ভয় ও পরকালীণ কল্যাণের জন্য হজ করুন। নিজের ও পুরো মুসলিম উম্মাহর শান্তি কামনায় হজ করুন। একজন হাজীকে এটি সব সময় স্মরণ রাখা উচিত।
আওয়ার ইসলাম: রওজায় গিয়ে কাদের জন্য দোয়া করবেন?
মুফতি আমিমুল ইহসান: প্রতিটি মুসলিমের উচিত পুরো উম্মাহ নিয়ে চিন্তা করা। আমার ভাবনা কল্পনাতেও তাই রয়েছে। বিশেষ করে এই মুহূর্তে কয়েকটি দেশে যুদ্ধাবস্থা বিরাজ করছে, অনেক মুসলিম না খেয়ে মরছে উদ্বাস্তু হযে ঘুরছে, শরণার্থী শিবিরগুলোতে তারা যাচ্ছেতাই ভাবে বিচরণ করছে তাদের জন্য দোয়া করবো। আল্লাহ এই জনগোষ্ঠীকে যেন ক্ষমা করে দেন এবং তাদের অবস্থা পরিবর্তিত করেন। সর্বোপরি বিশ্বে যেন শান্তিময় পরিবেশ বিরাজ করে তার জন্য দোয়া করবো ইনশাআল্লাহ।
আওয়ার ইসলাম: ইরান এবার হজ বর্জন করেছে, বিষয়টি কোনো প্রভাব ফেলবে কিনা।
মুফতি আমিমুল ইহসান: না, সার্বিক ভাবে এটি হজের কোনো প্রভাব ফেলবে না। তবে একটি আশঙ্কার দিক হলো ইরান সুন্নি রাষ্ট্রগুলোর প্রতি নানা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। এ জন্য সৌদিকে আরো শক্তি অর্জন করতে হবে। তাদের সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলার ক্ষমতা অর্জন করতে হবে।
আরআর